শোধ শ্ৰীখগেন্দ্রনাথ মিত্র ষ্টেশনের বাহিরে বটতলায় একখানি ছোট ময়রার দোকান। কিন্তু তাহাতে পান-তামাকও বিক্রয় হয় । কানাই দ্বিপ্রহরের ট্রেন হইতে নামিয়াই দোকানের সম্মুখে গিয়া মাথার গাঠরিটা নামাইল। একগাল হাসিয়া দোকানীকে কহিল, "ময়রার পো, ভাল ত ?” ময়ূরার পো তখন মাথা নীচু করিয়া একমনে বাতাস কাটিতেছিল, তাহার আগমন জানিতে পারে নাই। আহ্বানে চোখ তুলিয়া স্মিতমুখে কহিল, "কে? কানাই যে ? এই বাড়ি আসা হচ্ছে বুঝি ?” কানাই উত্তর অঞ্চলে কোন একটা বড় রেল ষ্টেশনে চাকুরি করে ; ময়রার পো'র কাছে তাহার একটু খাতির আছে । ময়রার পো'র প্রশ্নের উত্তরে হাসিয়া মাথা নাড়িল । ময়রার পো তৈলাক্ত বেঞ্চিখানা দেখাইয়া কহিল, "তা বসা হ’ক ।” “বস্তে পাব না, বেলা গড়িয়ে যায়। তিন ক্রোশ পথ পার হতে হবে।” “কতদিন থাকা হবে ?” “সাতদিন বলিয়াই গম্ভীর মুখে পাশের লোকটির शङ इशेउ कशिै। लङ्केश मैंड़िाईय़ा फ़ैज्जांझेब्रहे কয়েকটা টান দিল । ময়রার পো'র চোখ দু'টি গিয়া পড়িল কানাইয়ের গাঠরির গায়ে। জিজ্ঞাসা করিল, “গাঠরির গায়ে ওটা কি ?” নাক-মুখ দিয়া ধোয় ছাড়িতে ছাড়িতে কানাই কহিল, "ঠেঙা ৷” “আরে না। উই যে সাপের লেজের মত—” “শাঙ’ মাছের লেজ—” ময়ূরার পে৷ বাহির ছাড়িয়া গাঠরির ভিতরটাও অতুসন্ধা করিবার পূর্বেই কানাই কন্ধিটা লোকটির হাতে ফিরাইয়া দিয়া গাঠরিটা মাথায় তুলিতে তুলিতে কহিল, “চললাম ময়রার পে। ফিরবার পথে আবার দেখা হবে।" তারপর “ঠেঙা” গাছটি ঢক্ চকু শব্দে মাটিতে ঠকিতে ঠকিতে পথের উপর গিয়া পড়িল । মেটে পথ। শম্ভ-সবুজ ক্ষেতখামারের মধ্য দিয়া দক্ষিণে-বামে ঘুরিয়া বাকিয়া চলিয়া গিয়াছে, সেই উত্তরে, দিলগঞ্জের দিকে। গোধানের যাতায়াতের পথটির মাঝে হাতখানেক গভীর দু’টি খাল ;–বর্ষায় জলেকাদায় ভরিয়৷ উঠে। এখন শুষ্ক ও ধূলি ভরা। দুই পাশে প্রকাণ্ড আম, জাম, কাটাল ও সজনে গাছের সারি। মাঝে মাঝে দুই চারিট জিউলি ও বাবলা গাছও মাথা তুলিয় দাড়াইয় আছে। কোথাও কোথাও চার-খেজুরের চারিধার ঘিরিয়া ভাট, কালকাগুন্দি, শেয়াল-কঁট, আশশেওড়া প্রভৃতির ঘন ঝোপ । ভিতরটা অন্ধকার ; কিছু দেখা যায় না। বুলবুল, চড়ুই ও টুনটুনি তাহার আওতায় ছোট নীড় রচনায় ব্যস্ত। ঝোপকে শতপাকে জড়াইয়া, বাধিয়া আলোকলত, ঝুম্কোলত, বন-কলমী ও আরও যেন কি। সময়টা তখন মাঘের মাঝামাঝি। ও-অঞ্চলে । শীত আছে। সব গাছে ভাল করিয়া ফুলও ফোটে নাই, ডালে ডালে নব পল্লব ও কলিকার ভারে শিহরণ জাগিতেছে মাত্র। কিন্তু দূরে ও কাছে কোকিলের একটানা স্বরের বিরাম নাই। দক্ষিণ হাওয়া ফসল-ভারের উপর দিয়া দূর হইতে ঝম্ ঝম্ শবে ছুটিতে ছুটিতে আসিয়া পথের ধূলা উড়াইয়া, গাছের ডালে দোলা দিয়া বহিয়া যাইতেছে, সেই উত্তরে দিলগঞ্জের দিকে। কিন্তু গ্রামখানাকে দেখা যায় না; তাহার আগে আর একখানা গ্রাম চণ্ডীপুর-কালে প্রাচীরের মত আকাশের কোলে দাড়াইয়া আছে। দূরে এক দল রাখাল বাশী বাজাইতেছিল,একটি ঘুঘু বাশবনের মাথায় বসিয়া কেবলি বলিতেছে, "উ ডিল বি, তিল বি?” .
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।