পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 s | S99áు মশায় কয়েকবারই খোজ লইয়া আসিলেন,-তাহার বাবা এখনও ওপারের ঘাটে আসিয়া পৌছান নাই। তাহার দাদা ঘোরাঘুরি করিয়৷ অবশেষে ওপারে নদীর ধারে এক আসিয়া বসিয়া আছে । একে ত সন্ধ্যার আগে খেয়াই বন্ধ করিয়া দেওয়া নিয়ম, তাহার উপর মাঝিরা এখন হইতেই সুর ধরিয়াছে—নদীর অবস্থা ভাল নয়, তাহার নৌকা খুলিতে পারিবে না। দাদামশায় কহিলেন—‘দাড়াও ভাই, দেখি গিয়ে, বাপু বাছ ক’রে যদি ব্যাটাদের রাজী করতে পারি। শৈলবালা দাদামশায়ের হাত ধরিয়া নিতান্ত ছেলেমানুষেরই মত মিনতিমাখানে কণ্ঠে বলিয়া উঠিল, ‘দাদামশায়, আমিও যাব ? পথে কালু ময়রার দুইটি ছেলেকে মাছ ধরিবার ঘুনি আর সাবল লইয়: চলিতে দেখিয়া দাদামশায় জিজ্ঞাসা করিলেন,–‘মানার নীচে বুঝি ঘুনি পাততে চললি রে তোরা ? একজনই উত্তর দিল, বলিল—“ন গে৷ কক্ত। জল গড়িয়েচে গায়ে। অর্থাৎ গ্রামে জল ঢুকিতেছে । শৈলবালার বুক টিপ করিয়া উঠিল, ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, ‘দাদামশায়, এই যে কিছুক্ষণ আগে দেখে গেলুম, নদী তিন-পো বইচে ? দাদামশায় বলিলেন—‘হুড়ক পড়েচে ভাই । সত্যই তিনি চিন্তিত হইয় ওঠেন, চলিতে চলিতেই বলেন— ‘তাই ত ভাই শ, এ-অবস্থায় ওপারে নৌকা পাঠানো ঠিক হবে না কিন্তু— এই ভাবে মল্লিকদের ধানভানা কলের নিকট আসিতে আসিতেই দুৰ্ম্মদ নদের গর্জনোজ্জ্বাস শ্রবণ-পথে স্পষ্ট হইয়া উঠিল, খানিক অগ্রসর হইয়। সদর-পথের উপর আসিয়া পড়িতেই-- চমৎকার ! পোষ্ট-আপিসের সমুখ দিয়া জল সদর-রাস্তা ধরিয়৷ প্রবল বেগে ছুটিয়া আসিয়া প্রচণ্ড শব্দে কাটাল গেড়েয় ঘুরিয়া পড়িতেছে—সে-কলগৰ্জনে কান পাতা দায়! সদর-রাস্তার উপর প্রায় একইাটু জল, নদ ও পথ একফুর ডান দিকে আম-কাটালের বন । পোষ্ট্র আপিসের সম্মুখে একধওঁ দ্বীপভূমিরই মত যেন আন্ম অন্ধকারে ছায়াময় হইয়াংগিয়াছে । দাদামশায় তাহাকে ফিরিয়া যাইতে বলিলেন, সে ফিরিয়া গেল না। দাদামশায়ের সঙ্গে জল ভাঙিয়াই পোষ্ট-আপিসের সম্মুখে রেশের উপর আসিয়া দাড়াইল । দেখিল, মাষ্টার মহাশয়, পাচু-খুড়া, মল্লিক-বাড়ির সর্বজয় বাবু এবং আরও কয়েকজন ভদ্রলোক সেখানে উপস্থিত হইয়াছেন । ওপারে নদের ধারে কাহারা যেন বসিয়৷ আছে—অন্ধকারে খুব অস্পষ্ট দেখা যায়। সে শুনিল, ওপারে তাহার বাবা আসিয়া পৌছিয়াছেন। তিনি শুধু এক আসেন নাই, মল্পিক-বাড়ির সেজবাবুও বধু ও তাহার এক নবজাত কন্যাকে লইয়া কলিকাত হইতে আসিতেছেন । মাঝিদিগকে অনেক টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা সত্বেও তাহার নৌক খুলিতে রাজী হয় নাই ; দুইজন মাঝি না-কি ইতিমধ্যেই পলায়ন করিয়াছে . যাহাই হউক, অবশেষে রাজী তাহার হইলই। কোথা হইতে আট-নয় জন কালো যগুণগোছের লোক আসিয়া নৌকার ধারে ধারে খণ্ড খণ্ড বঁাশ লাগাইয়। দাড় বাধিতে লাগিয়া গেল । দাদামশায় এবং সৰ্ব্বঞ্জয়বাবু কয়েকটি টাকা বাহির করিয়া বড় মাঝির হাতে দিলেন । গ্রামে সে-সময়ে জোর পিকেটং চলা সত্ত্বেও কয়েক বোতল ধেনে মদ আসিয়া নৌকার খোলে আশ্রয় লইল । দাদামশায় আর অপেক্ষা করিলেন না, নৌকা ফিরিতে অনেক রাত্রি হইয়া যাইবে । সৰ্ব্বজয়বাবুর হাতে লণ্ঠন ছিল, তাহারই পিছনে পিছনে জল ভাঙিয়া তিনি চলিয়া আসিলেন । এবারে কিন্তু জল ভাঙিতে গিয়া শৈলর কাপড় ভিজিয়া গেল । জল খুব দ্রুত বাড়িতেছে। যথাসময়ে নৌকা আরোহী লইয়া হরিধ্বনি ৰুরিয়া উঠিল। সে-ধ্বনি নিস্তব্ধ রাত্রির বক্ষ ভেদ করিয়া দামোদরের উচ্ছল কল-গৰ্জনের উপর দিয়া শৈলবালার কানে ভাসিয়া আসিল—‘বল হরি হরি বোল।” बुइ কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি । ... . .