পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr ওর মা নেই, বাপও নেই। সংসারে আর তবে থাকুল কে বলত ? তাই ভাবি আমার মাণিকের বদলে ঠাকুর ওকেই আমার কোলে ফেলে দিলেন।” লক্ষ্মীর চোখ দুটি জলে ভরিয়া উঠিল। একখানি শস্য-শূন্ত ক্ষেতের ওধারে জল ; তাহার ধারে গোট। দুই নিমগাছের তলায় শ্মশান । অন্ধকার রাত্রি ঝ ঝণ করিতেছে। ঘরের চালে পেচক ডাকিয়া উঠিল। কানাই দুর শ্মশানের পানে তাকাইয়া অস্তরে অস্তরে ডাকিতে লাগিল, “আমার মাণিক, মাণিক রে—” কিন্তু রাত্রে ধন আর আসিল কি না এবং কখন আহার করিল, তাহ সে জানিতে চাহিল না। কেবল লক্ষ্মীর মুখে শুনিল, বেযেদের ঘরে তাহার শয়নের ব্যবস্থ হইয়াছে । ভোরে উঠিয়াই কানাই দেখে, লক্ষ্মী আঙিনায় জল ছিটাইতেছে । শীতের হওয়ায় তাহার হাত দুটি ও মুখখানি নীল। গায়ে আঁচলখনি মাত্র জড়ানো। কহিল, “লক্ষ্মি, আলোয়ানখান তোলা রইল আর এই ঠাণ্ডায়—” লক্ষ্মী কহিল, “ঠাণ্ড কোথায় ?” কানাই কিন্তু ধর হইতে আলোয়ানখনি আনিয়া তাহার গায়ে জড়াইয়া দিল । তারপর গোয়ালে গিয় সৈর ভীকে আদর করিল এবং মাঠে রৌপ্র নামিলে গ্রামের পথে বাহির হইল। গ্রামের চারিধারে ঝোপ-ঝাড়, বেত বন । পূৰ্ব্বেও পশ্চিমে থান দুই বাগান, গোটকয়েক নারিকেল ও খেজুর গাছ, বাশ বন । উত্তরে প্রকাণ্ড পুষ্করিণী। ইহাদেরই মাঝে মাঝে গৃহস্থের ঘরবাড়ি ও পথ। গ্রামের পরেই বিশাল ক্ষেত, প্রান্তর, জলা.। পথের ধারে একটা গাব গাছের ডালে বসিয়া একটি “বসন্ত বউরী” কেবলই করিতেছে “টঙ, টঙ, টঙ—” ; ঝোপের নীচে একদল ছাতারে নিজেদের মধ্যে বিষম সোরগোল বাধাইয়৷ তুলিয়াছে আর বাগানের শেষ দিক হইতে ভাসিয়া আসিতেছে “চোখ গেল, চোখ, গেল স্বর।” বাতাসে ক্ষীণ পুষ্প গন্ধ। কানাইয়ের ছেলেবেলাকার কথা মনে পড়িয়া গেল । কিন্তু সম্মুখে গ্রামের গোমস্তার দর্শন পাইয়া, চিন্মুৱা সহসা অন্যপথে মোড় ঘুরিল। বেলা তখন অনেক। ফিরিয়া আসিয়া কানাই । ఏ99āు. দেখে পাকশালার বারান্দায় উচ্ছিষ্ট সমেত একখানি কালি –ধনাই আহার শেষ করিয়াছে। লক্ষ্মী তখনও পাকশালায় কি কাজে যেন ব্যস্ত। বাসন নাড়চাড়ার শব্দ আসিতেছে। কানাই তাহাকে ডাকিত ডাকিতে শরনঘরে গিয়াই তাহার চোখ পড়িল শয্যার উপর। দেখে শয্যার এক প্রাস্তে নূতন আয়নাখনি পডিয়া ; পাশে তাহার চিরুণীখানি । আয়নাথানি ডাঙিয়া চৌচির ; চিরুণীরও দুটি দাত ভাঙা । সেতুটি হাতে করিয়া বাহিরে আসিয় জিজ্ঞাস করিল, “লক্ষ্মি, এ দুটে ভাঙল কি ক’রে ?” লক্ষ্মী তখন সৈরভীকে ফেন দিতে যাইতেছিল। প্রথমে কানাইয়ের কথার কোন উত্তর দিল না। কানাই আবার জিজ্ঞাসা করিল। লক্ষ্মী কহিল, “কি হবে ও আয়না চিরুণীতে ? সেই দুটোই আছে ত ?” “বাল ভাঙল কি ক’রে ?” “হাত ফস্কে চৌকাঠের ওপর পড়ে ।” ব্যাপারট। পূৰ্ব্ব হইতে বুঝিলেও কানাই কহিল, “কার হাত থেকে ?” বলিতে বলিতে সে সৈরভীকে জাবদেওয়া মাটির নাদাটার কাছে গিয়া দাড়াইল । দেখিল, নাদাটাও ফাটয় দু’ আধখানা। জিজ্ঞাসা করিল, “এট ফাঁটুল কি ক’রে ?” “কি ক’রে আবার ” “কোথায় গেল সে হতভাগা ?” বলিয়া কানাই সরোধে পথের দিকে যাইতেই লক্ষ্মী তাহার পথ আগলাইয়া দাড়াইয়ু কহিল, "ছেলেমামুযে এমন করেই, আজ তোমার ছেলেট। এসব করলে কি করতে শুনি ?” “সে জানিনে। ও আমার ছেলে নয় । ওর বাপ—” বলিতে বলিতে লক্ষ্মীর মুখের পানে তাকাইয়াই কানাই সহসী চুপ করিয়া গেল। কিন্তু ধনার প্রতি মনের মাঝে কেমন একটা বিদ্বেয জমিয়া ভার হহয়৷ উঠিল। লক্ষ্মী তাহাকে আড়াল করে, ভালবাসে, তাহার মনের একটি ধার জুড়িয়া ধন বিরাজ করিতেছে। ইহা কানাই কিছুতেই যেন সহ করিতে পারে না। অথচ তাহার প্রতি লক্ষ্মীর মনোযোগের এতটুকু ক্রটি নাই। এই সাতটি দিন ।