পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ শোগ సి রাত্রিকে এই নারীটি পরিপূর্ণরূপে অন্তরপুটে সঞ্চয় করিয়া রাখিতে ব্যাকুল । ইহার পর কয়দিন ধনারও দর্শন পাওয়া গেল না । কোন ফাকে বাড়ি আসে আহার সারিয়া চলিয়া যায়, কানাই জানিতেও পারে না । চতুর্থ দিন সন্ধ্যার পরে বারান্দায় বসিয়া কানাই তাম্রকুট সেবন করিতেছে, লক্ষ্মী পাকশালায় ব্যস্ত। ধনা ঘোষেদেরই ঘরে হয়ত ছিল। কানাইয়ের নজর পড়িল ভিতরে দাশের আনিলাটা । দেখিল, লক্ষ্মীর আলোয়ান খানি সেখানে ঝুলিতেছে। কিন্তু তাহার একটি পাশ যেন দুগ্ধ! সে তৎক্ষণাৎ উঠিয়া গিয়া, আলোয়ানখানি টানিয়া হাতে লইয়া দেখে, প্রায় হাতখানেক অংশ পুড়িয়া গিয়াছে। লক্ষ্মীরই অসাবধানতায় হয়ত তাহা হইয়। থাকিবে ভাবিয়া সেখানি হাতে লইয়। সে পাকশালায় গিয়। উঠিবার পূৰ্ব্বেই ধন অন্ধকারে চোরের মত চুপে চুপে লক্ষ্মীর পিছনে গিয়া চাপা গলায় ডাকিল, “মাসি—?” লক্ষ্মী ঘাড় ফিরাইয়া ধনাকে দেখিয়াই হাসিয়া ফেলিল । কহিল, “তুই কি কনে বউ ?” ধন হাসিয় তাহার পাশে বসিতেই কানাই সেখানে উপস্থিত হইল। এবং কোনরূপ ভূমিকা না করিয়া ধনার মুখের দিকে তীক্ষু চোখে তাকাইয়া লক্ষ্মীকেই জিজ্ঞাসা করিল, “এখান পোড়ালে কে লক্ষ্মি ?” কিন্তু লক্ষ্মী উত্তর দিবার পূর্বেই ধনী সভয়ে কহিল, “আমি ” কানাই খপ করিয় তাহার একখানা হাত চাপিয়া ধরিল। তারপর তাহাকে শূন্যে তুলিয়া কহিল, "চল, আজ সব শোধ তুলব।’ তাহার গলার স্বর বিকৃত ; মুখে কাঠিন্য, চোখে জালা। দেখিয়া লক্ষ্মীরও বুকখানা কাপিয়া উঠিল । তথাপি সেখান হইতে সে উঠতে পারিল না । ধনাকে আঙিনার মাঝে ফেলিয়া কানাই ছুটিয়া গিয়া ঘরের বেড়া হইতে শঙ্খমাছের চাবুকখানি টানিয়া লইয়া নামিয়া আসিল । চাবুকখানি এক গার্ড সাহেব ঝোঁকের মাথায় তাহাকে বখশিষ দিয়া যায়। তারপর ধনার হাতে, পায়ে, পুষ্ঠে নিৰ্ম্মমভাবে সেখানি চালাইতে লাগিল । প্রহারের জালায় ধন আৰ্ত্তকণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল, “মা গে, বাবা গে৷ ” "چیر কানাইও সপ্তমে চীৎকার করিতে লাগিল, “বেরো আমার বাড়ি থেকে।" চাবুকটা ধনার দেহের স্থানে স্থানে কাটিয়া বসিয়া রক্ত বাহির করিয়া দিতে লাগিল । লক্ষ্মী আর থাকিতে পারিল না। ছুটিয়া আসিয়া ধনাকে দু-হাতে বুকে জড়াইয়া সরাইয়া লইল । গোলমালে আশপাশের অনেকেই ততক্ষণে আসিয়া উপস্থিত। কানাইয়ের দুই চারিটি কথা হইতে ব্যাপারটা অল্পমান করিয়া ঘোষগিনী কহিল, “বউকে আমি সেইকালেই মান করেছি। পেটের নয়, ষেটের নয় তবে ওর জন্যে এত কেন ? এ দৌরাত্ম্য কে সহ করে বাপু ? ছোড়াটা বছর পরে বাড়ি এল ; কোথায় একটু আমোদ-আহলাদে থাকবে তা নয়, মাঝখানে এক ধ্বজ তুলেছিস। পরের হাপ নিস্ নে, এই বেল বিদায় ক’রে দে,—বলিতে বলিতে সে বাহির হইয়া গেল, আর যাহারা আসিয়াছিল তাহারও দাড়াইল না। সে রাত্রে কাহারও মুখে অন্ন রুচিল না ; লক্ষ্মী ধনাকে বুকের মধ্যে টানিয়া লইয়া শুইয়া রহিল । পরদিন ব্যথার টাড়সে ধনার জর দেখা দিল । পুর পর দু'টি দিন তাহা ছাড়িল না। লক্ষ্মীর মুখে উদ্বেগের ছায়া ; কানাইও কিছুতে স্ফুক্তি পায় না। তাহার ও লক্ষ্মীর মাঝখানে একটি কিসের যেন কালো ছায়া নামিয়া পড়িল । \$, যাইবার দিন সকালে ধনার জর নাই ; কানাইয়ের মন অপেক্ষাকৃত হাস্ক, লক্ষ্মীর মুখেও হাসি ফুটিয়াছে । শয্যা হইতে উঠিয়া আসিয়া কানাই দেখে, লক্ষ্মী কাজের পাকে আঙিনায় ঘোর-ফেরা করিতেছে। ধন। বারান্দার এক কোণে বেড়ার গায়ে হেলান দিয়া বসিয়া । তাহার গায়ে নিজেরই কাপড়ের একটি প্রাস্ত জড়ানো— মুখ শুষ্ক ; চোখ দুটি নিম্প্রভ । কানাইকে দেখিয়া তাহার মুখখানি আরও শুষ্ক হইয়া গেল। সে সভয়ে উঠিবার উপক্রম করিতেই কানাই কহিল, “বোস, বোস। ভয় কিসের?” তারপর নিজের গ৷ হইতে গায়ের পড়খানি থলিয়া তাহার ক্ষত্র দেহটি ঢাকিয়া দিল ।