পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ বিবিধ প্রসঙ্গ—বিভীষিকাবাদ সম্বন্ধে চিন্ত আবখ্যক ২৯১ পারেন, “এদেশে ভ্রমণকারী ইংরেজ নিহত না হইয়৷ সরকারী রাস্ত হইতে ছয় গজ যাইতে পারে না ?” ঠিক প্রাসঙ্গিক না হইলেও এখানে বার্কের অন্য কতকগুলি কথার তাৎপর্য্য জানাইতে চাই । তিনি বলিয়াছেন, ওয়েলসকে সায়েস্ত করিবার জন্য সর্বপ্রকার কঠোর আইন বিধিবদ্ধ হইয়াছিল। তথায় অস্ত্রের আমদানী বন্ধ করা হইয়াছিল, ওয়েল্শ দিগকে নিরস্ত্র করা হইয়াছিল। তাহাদের ব্যবসায়ে বাধা জন্মান হইয়াছিল, তাহাদিগকে বাজার ও মেলার সুবিধা হইতে বঞ্চিত করা হইয়াছিল । পনর পনরট কঠোর দমনমূলক আইন ওয়েলসের বিরুদ্ধে প্রণীত ও প্রযুক্ত হইয়াছিল। কিন্তু সমস্তই ব্যর্থ হইয়াছিল। তাহার পর যখন রাজ। অষ্টম হেনরী তাহাদিগকে ইংরেজ প্রজাদের সমুদয় অধিকার দিলেন, সেই মুহূৰ্ত্ত হইতে যেন জাদু দ্বারা সব গোলমাল উপদ্রব থামিয়া গেল ; আইনহুগত্য পুনঃস্থাপিত হইল এবং স্বাধীনতার পশ্চাতে পশ্চাতে শান্তি শৃঙ্খলা ও সভ্যতার আবির্ভাব হইল ( When Henry VIII “gave to the Welsh all the rights and privileges of English subjects,” “from that moment, as by a charm, the tumults subsided ; obedience was restored, peace, order, and civilization followed in the train of liberty”) বিভীষিকাবাদ সম্বন্ধে চিন্তা আবশ্যক ইংরেজরা ও অনেক অবাঙালী ( এমন কি কোন কোন বাঙালীও ) এমন কথা বলেন, যাহাতে মনে হয় যেন বিভীষিকাবাদ বঙ্গেরই একটা নিজস্ব ব্যাধি। কিন্তু শুধু বাংলা দেশের কথা ভাবিলে ইহার প্রতিকারের উপায় আবিষ্কৃত হইবে না। বাংলা দেশ হইতে অনেক দূরবর্তী ভারতীয় অনেক স্থানে হিংসাবাদীদের কাজের সংবাদ প্রায়ই পাওয়া যাইতেছে। তাহার পর, ইউরোপের ফ্রান্স ও অন্য কোন কোন দেশে, আফ্রিকার মিশরে, এশিয়ার জাপান ও চীনে, আমেরিকার কয়েকটা দেশে বিভীষিকবাদীদের উপদ্রবের সংবাদ পাওয়া গিয়াছে। এই সকল দেশে কি কারণে এই প্রকার উপদ্রব ঘটিতেছে, সে বিষয়ে সন্ধান লইলে বঙ্গের বিভীষিকাবাদেরও নিদান আবিষ্কারে সাহায্য হইবে । কোথাও রাষ্ট্রীয় দুরবস্থাজাত অসন্তোষ, কোথাও সত্য বা কল্পিত অত্যাচারের প্রতিশোধ ইচ্ছ, কোথাও সামাজিক অবজ্ঞা লাঞ্ছন। উৎপীড়ন, কোথাও বা আর্থিক বিষয়ে অবিচার ও বৈষম্য ইহার মূলভূত। এই সমুদয় কারণের উচ্ছেদসাধন একদিনে হইবার নহে । কিন্তু যদি অসন্তুষ্ট ও উত্তেজিত লোকের দেখে, যে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ, সমাজনেতৃবর্গ, এবং পণ্যশিল্প ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যক্তিগণ নিঃস্বাথ অকপট ভাবে প্রতিকারের চেষ্টা করিতেছেন, তাহা হইলে তাহীদের উত্তেজনা প্রশমিত হইতে পারে। ইংলণ্ডের চেয়ে কোন দেশের লোকদের স্বাধীনতা অধিক নহে এবং সেখানে বেকার লোকদের জন্য ব্যবস্থা আছে এবং চিন্ত করিবার লোকও আছে । সেখানে বিভীষিকাবাদ স্থান না পাইবার সম্ভবতঃ ইহা একটি কারণ । আজকাল অতীত সকল যুগ অপেক্ষ। পৃথিবীর সকল দেশের সহিত সকল দেশের সংস্পর্শ বাড়িয়াছে। এই জন্য অন্যান্য ব্যাধির মত কোথাও বিভীষিকাবাদের প্রাদুর্ভাব হইলে ভারতবর্ষে তাহ সংক্রমিত হইতে পারে। এই জন্য ভারতবর্ষে উহা বিনষ্ট করিতে হইলে বিদেশেও উল্লাহ বিনষ্ট হওয়া আবশ্ব্যক । পৃথিবীর ইতিহাসে, নানা দেশের ইতিহাসে, দেখা যায়, যাহারা যুদ্ধে হাজার হাজার লোক মারিয়া জয়ী হইয়াছে, তাহারা দিগ্বিজয়ী বীর বলিয়া সম্মানিত হইয়াছে। এখনও যে-দেশের যুদ্ধে মানুষ মারিবার আয়োজন ও শক্তি যত বেশী জগতে তাহার মানসন্ত্রম তত বেশী। এবং স্বাধীন অস্বাধীন সমুদয় দেশের গবন্মেণ্টসমূহ অস্ত্রবলকেই নিজেদের শক্তির শেষ ভিত্তি এবং তাহা রক্ষার চরম উপায় মনে করেন। বিভীষিকাবাদ কেন উদ্ভূত হইয়াছে এবং সহজে কেন তাহার উচ্ছেদ সাধিত হইতেছে না, তাহা বুঝিতে হইলে এই সব কথাও মনে রাখিতে হইবে । গভীর চিস্তায় অনভ্যন্ত এবং অদুরদর্শী ইংরেজরা মহাত্মা গান্ধীকে ও কংগ্রেসকে বিভীষিকাবাদের জন্ত