ভাত্ৰ তাহার উচিত নয়, আর স্বাগতার সম্বন্ধে কিছু না জানিয়া ফিরিয়া যাওয়াও যুক্তিযুক্ত নয়। , হরিনাথের মনের ভাব গঙ্গাধর বেশ বুঝিত। ইচ্ছা করিলে হরিনাথ গঙ্গাধরের কিংবা আর কাহারও কোন কথাই শুনিতে না পারিত, স্বাগতাকে এই স্মৃতিলুপ্ত অবস্থায় বিবাহ করিলে কে নিষেধ করিতে পারিত ? ভবিষ্যতে অনিষ্ট হইতে পারে বিবেচনা করিয়াই হরিনাথ সে সঙ্কল্প হইতে বিরত হইয়াছিল, গঙ্গাধরের পরামর্শ-মত তাহার সঙ্গে ক্লেশ স্বীকার করিয়া এইরূপ ছদ্মবেশে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। হরিনাথ বিন আপত্তিতে গঙ্গাধরের সকল কথা শুনিত, দুই-একটা বিষয়ে নিজের চিত্তকে শাসন করিতে পারিত না, তাহার কি করা যাইবে । স্বাগতার ফোটোগ্রাফ একা থাকিলে হরিনাথ সময়ে সময়ে দেখিত, গঙ্গাধর জানিতে পারিয়াও আর কিছু বলিত না। পত্র লিখিবার কথা জানিলে গঙ্গাধর অসন্তুষ্ট হইত এই জন্য হরিনাথ গোপনে লিখিয়াছিল । গঙ্গাধর অত্যন্ত কৌশলের সহিত সৰ্ব্বত্র অনেক রকম সন্ধান করিতেছিল, হরিনাথ তাহ উত্তমরূপে জানিত । গঙ্গাধরের উৎসাহে ও উদ্যমে হরিনাথের আশা হইত যে, শীঘ্রই কিছু জানিতে পার! যাইবে । তাহার কারণ গঙ্গাধর হরিনাথকে পরিষ্কার করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছিল। মোটর পুড়িয়া যাওয়া দুর্ঘটনার ছুতা করিয়া কোন লোক স্বাগত ও আর একজন পুরুষকে হত্যা করিতে চাহিয়াছিল। স্বাগত যে রক্ষা পাইয়াছে তাহ সে জানিত না । তাহার ভাগ্যক্রমে স্বাগতার স্মৃতি লোপ পাইয় তাহার কিছুই স্মরণ নাই, কিন্তু এ বিষয়ের যে কোন সন্ধান পাওয়া যাইবে না ইহা অসম্ভব । যাহার ইহাতে লিপ্ত তাহারা সাধ্যমত গোপন করিবার চেষ্ট করিবে, তাহাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ করিতে পারিলেই সকল কথা প্রকাশ হইয়া পড়িবে। একদিন হরিনাথ ও গঙ্গাধর রেলগাড়িতে যাইতেছিল । গঙ্গাধরের পরামর্শ-মত তৃতীয় শ্রেণীর আরোহী ! ঘণ্টাকয়েক পরে নামিয়া যাইবে । দুইটি ষ্টেশনের পর তাহাদের গাড়িতে আর একজন আরোহী উঠিল। মালপত্রের স্বাগত। Weq দেখিল, একটা লম্বা, ছিপছিপে লোক, চেহারা তেমন মোলায়েম নয়। বাক্সট বেঞ্চের নীচে রাখিয়া গঙ্গাধরের পাশে বসিল । পা ছড়াইয়া দিয়া, ছোট ছোট চক্ষু দিয়া কটমট করিয়া অপর আরোহীদিগকে দেখিল । হরিনাথ ও গঙ্গাধরকে একটু ভাল করিয়া দেখিল। তাহার পর পকেট হইতে এক প্যাকেট খেলো সিগারেট বাহির করিয়া একটা ধরাইল । গঙ্গাধর জিজ্ঞাসা করিল,—কত দূর যাবে ? নূতন আরোহী বনবিহারী । সে একটা রূঢ়ভাবে উত্তর দিতে যাইতেছিল। তাহার পর কি মনে করিয়া কহিল,—বেশী দূর নয়, বুঝলে কি-না, মোসিনগঞ্জে নেমে যাব । তোমরা কোথায় যাবে ? —আমরা লোচনপুরে যাব ভাবচি, কিন্তু তার কিছু ঠিক নেই। আমাদের টিকিট লাইনের শেষ পৰ্য্যস্ত আছে, যেখানে-সেখানে ইচ্ছে করলেই নেমে পড়তে পারি। মোসিনগঞ্জে চালের আড়ত আছে ? গঙ্গাধর পকেট হইতে একখান টেলিগ্রাম বাহির করিয়া পড়িল । গোপন করিবার চেষ্টা করিল না। বনবিহারীও পড়িল টেলিগ্রামে লেখা আছে, ওদিকে চালের দর জানবে । বনবিহারী বলিল,—বড় আড়ত নেই, ছোট আছে, বুঝলে কি না ? তোমরা কি চালের ব্যবসা কর ? গঙ্গাধর অল্প হাসিল, বলিল,--আমরা ব্যবসাদার নই, ব্যবসাদারের চাকর, সামান্ত মাইনে পাই । ঘুরে ঘুরে চালের দর জেনে খবর পাঠাই । —এখন তোমরা কোথা থেক আসচ ? যে গ্রামে হরিনাথ ও গঙ্গাধর মূৰ্ছিত স্বাগতাকে লইয়া গিয়াছিল গঙ্গাধর সেই গ্রামের নাম করিল। হরিনাথ অলক্ষিতে বনবিহারীকে লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছিল। গ্রামের নাম শুনিয়া বনবিহারী ঈষৎ বিচলিত হইল, গঙ্গাধরের প্রতি তীব্র দৃষ্টিপাত করিয়া কহিল,—সেখানে ত চাল পাওয়া যায় না, আর সে ত লপত্রের রেলের ধারে নয়, বুঝলে কি-না? মধ্যে একটা कॉप्रैब्र বাক্স । গঙ্গাধর তাহার দিকে: ঞ্জি . * র। গিয়েছিলাম আর এক জায়গায় ফেরবার ↔
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।