পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ס\ 399āు জয়োল্লাস-দুই হাতে ভর দিয়া অনেক কষ্টে জানকীরাম উঠিয়া বসিয় তাহারই অনেক আশা ও ভালবাসার নীড় ঐ গড়ের দিকে চাহিতে চাহিতে অকস্মাৎ দুই চোখ ভরিয়া জল আসিল । ললাটের রক্তধারা ডান হাতে মুছিয়া ফেলিয়৷ পিছনে তাকাইয়। দেখিলেন, কেবল কয়েকটি শিয়াল নিঃশব্দে শিকার খুজিয় বেড়াইতেছে— কোন দিকে কেহ নাই--- সেই সময়ে ওদিকে অন্দরের বাতায়ন পথে তাকাইয়। মালতীমালও চমকিয়া উঠিলেন, তবে কি একেবারেই—? অবমানিত রাজপুরীর উপরেও গাঢ় নি:শবতা নামিয়া আসিয়াছে। দাসী বিবর্ণমুখে পাশে আসিয়া দাড়াইল । মালতীমাল আয়ত কালে চোখে তাহার দিকে চাহিয়৷ প্রশ্ন করিলেন-—শেষ ?— খবর আসিল, গুপ্তদ্বার খোলা হইয়াছে, পরিজনের। সকলে বাহির হইয়া যাইতেছে । দাসী বলিল—বউমা, উঠন— বধু বলিলেন—নৌকা সাজানো হোক— কেহ সে কথার অর্থ বুঝিতে পারিল না। নদীর ঘাটে শত্রুর বহর ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, সে সন্ধানীদৃষ্টি ভেদ করিয়া জলপথে পলাইবার সাধ্য কি ! মালতীমালা বলিলেন—নদীর ঘাটে নয় রে, দীঘির ময়ুরপঙ্কীখান। সাজাতে হুকুম দিয়েছি। খবর নিয়ে আয় হ’ল কি না— সেদিন সন্ধায় রাজ্যোদ্যানে কনকচাপা গাছে যে কয়টি ফুল ফুটিয়াছিল তাড়াতাড়ি সেগুলি তুলিয়া আনা হইল, মালতীমালা লোটন খোপা ঘিরিয়া তার কতগুলি বসাইলেন, বাকীগুলি আঁচল ভরিয়া লইলেন। সাধের মুক্তাফল দু'টি কাণে পরিলেন, পায়ে আলতা দিলেন, মাথায় উজ্জল সি দুর পরিয়া কত মনোরম রাত্রির ভালবাসার স্মৃতিমণ্ডিত ময়ুরপঙ্গীর কামরার মধ্যে গিয়৷ বসিলেন । নৌকা ভাসিতে ভাসিতে অনেকদূর গেল। তখন বিজয়ীরা গড়ে ঢুকিয়াছে, দীঘির পাড় দিয়া দলে দলে রক্ত পঙ্কুৰু উড়াইয়া জনমানবশূন্ত প্রাসাদে ঢুকিতে ; লাগিল। গান্ত পুরবাসী গুপ্তপথে পলাইয়াছে। +. గ్రీ,, . বিশ পচিশটি মশালের অালো দীঘির জলে পড়িল । —ধর, ধর নেীকো— মালতীমাল৷ তলীর পাটাখানি খুলিয়া দিলেন । দেখিতে দেখিতে দীৰ্ঘমাস্তুলটিও নিশ্চিহ্ন হইয় গেল । নৌকা কেহ ধরিতে পারিল না, কেবল কেমন করিয়৷ কোন ফাক দিয়া জলের উপর ভাসিয়া উঠিল আঁচলের চাপাফুল কয়েকটি— তারপর ক্রমে রাত্রি আরও গভীর হইয় গড়ের উচু চূড়ার আড়ালে চাদ ডুবিল। আকাশে কেবল উজ্জল তার কয়েকটি পরাজিত বিগত-গৌরব ভগ্নজাতু জানকীরামের ধূলিশয্যার উপর নিৰ্ণিমেষ দৃষ্টি বিসারিত করিয়া ছিল । সেই সময়ে কে-একজন অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়া অতি সন্তপণে আসিয়া রাজকুমারকে ধরিয়া তুলিল । —চলুন, প্রভু— —কোথা ? —বটতলায় । ওখানে তুলে নিয়ে চলে যাব— —গড়ের আর-আর সব ? বিশ্বস্ত পরিচারক গড়ের ঘটনা কহিল। বলিল—কোন চিহ্ন নেই আর, জলের উপরে কনকচাপ ছাড়া— কই ? বলিয়া জানকীরাম হাত বাড়াইলেন । বলিলেন—আনতে পার নি ? ঘোড়ায় তুলে দিতে পার আমায় ? দাও না আমায় তুলে দয়া করে’—আমি একটা ফুল আল্ব শুধু— নিষেধ মানিলেন না । খট-খট করিয়৷ সেই অন্ধকারে উত্তরমুখে বাতাসের বেগে ঘোড় ছুটিল । সকালে দেখা গেল, পরিখার মধ্যে যেখানে আজকাল ধান হইয়া থাকে জানকীরাম পড়িয়া মরিয়া আছেন, ঘোড়ার কোন সন্ধান নাই । সেই হইতে নাকি প্রতিরাত্রে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটিয়া আসিতেছে। রাতদুপুরে সপ্তর্ষিমণ্ডল ষখন মধ্য-আকাশে আসিয়া পৌছায়, আশপাশের গ্রামগুলিতে নিযুপ্তি ক্রমশঃ গাঢ়তম হইয় ওঠে, সেই সময়ে রাতের পর রাত ঐ গভীর নির্জন জঙ্গলের মধ্যে চার শ' বছর আগেকার সেই রাজবৰু পক্ষীঘির হিমশীতল অতল জলশয্যা ছাড়িয়া উঠিয়: ঘোড়া রেখেছি, ঘোড়ায়