আশ্বিন ৪।২৬-২৭ “কেহ সংঘমরূপ অগ্নিতে শ্রোত্রাদি ইন্দ্রিয়গণের হোম করেন অর্থাৎ ইন্দ্রিয় সংযম করেন, কেহ বা ইন্দ্রিয়ুরূপ অগ্নিতে শব্দাদি বিষয়সমূহের হোম করেন অর্থাং বিষয় হইতে ইন্দ্রিয় সংহরণ করেন।” “কেহ ইন্দ্রিয় ও প্রাণের সমস্ত কৰ্ম্ম জ্ঞান দ্বারা প্রজ্জ্বলিত আত্মসংযমরূপ অগ্নিতে হবন করেন ।” আত্মজ্ঞানহীন জীবাত্মা আমাদিগকে নানাবিধ আকুঞ্চন প্রসারণাদি প্রাণকৰ্ম্মে ও বিষয়ভোগে নিয়োজিত করে। এই জন্যই আত্মার সংযমের চেষ্টা । ইন্দ্রিয়সংহরণ ও ইন্দ্রিয়সংঘম পৃথক । ইন্দ্রিয়সংযম, ইন্দ্রিয়সংহরণ ও আত্মসংযম সম্বন্ধে পূর্বের আলোচনা দ্রষ্টব্য ( প্রবাসী— ১৩৩৯ শ্রাবণ)। ৯-২৮ “কেহ দ্রব্যদানাদি যজ্ঞ, কেহ তপোরূপ যজ্ঞ, কেহ যোগাভ্যাসরূপ যজ্ঞ, কেহ পরিশ্রম সহকারে অধ্যয়ন দ্বার। জ্ঞান অর্জন রূপ যজ্ঞ করেন।” এখানে যোগ কথা সাধারণ প্রচলিত পাতঞ্জল যোগ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে । তিলক এই শ্লোকে যোগের অর্থ কৰ্ম্মযোগ করিয়াছেন, কারণ পরের শ্লোকে পাতঞ্জলযোগ অনুসারে প্রাণায়াম ইত্যাদির কথা আছে । আমার মতে পরের শ্লোকে এই পাতঞ্জলযোগের বিস্তার করা হইয়াছে মাত্র । তপযজ্ঞের পর যোগযজ্ঞ থাকায় আমার অর্থই ঠিক মনে হয় । হঠাৎ কৰ্ম্মযোগের কথা এখানে আসিতে পারে না । সমস্ত প্রকার যোগই কৰ্ম্মযোগের মধ্যে আসিতে পারে ; কৰ্ম্মযোগ বলিয়া কোন বিশেষ প্রকারের যোগ নাই, যে-কোন কৰ্ম্মই অনাসক্ত বুদ্ধিতে করিলে কৰ্ম্মযোগ ३३ ।। 8॥২৯ “প্রাণায়ামতৎপর হইয়া প্রাণ ও অপানের গতি রুদ্ধ করিয়া কেহ প্রাণবায়ুকে অপানে হবন শ্রোত্ৰাদীনীন্দ্রিয়াণ্যন্তে সংযমাগ্নিষু জুহ্বতি। শব্দাদীন বিষয়ানষ্ঠে ইন্দ্রিরাগ্নিষু জুহ্বতি ॥ ২৬ সৰ্ব্বাণীক্ৰিয়কৰ্ম্মাণি প্রাণকৰ্ম্মাণি চাপরে। আত্মসংযমযোগাগ্নৌ জুহ্বতি জ্ঞানদীপিতে। ২৭ দ্রব্যযজ্ঞাস্তপোযজ্ঞ1 যোগযজ্ঞাস্তথাপরে । স্বাধ্যায় জ্ঞানযজ্ঞাশ্চ যতয়: সংশিতব্ৰতা: ॥ ২৮ অপানে জুহ্বতি প্রাণং প্রাণেইপানং তথাপরে। প্রাণাপানগতীং রুদ্ধ। প্রাণায়াম পরায়ণা: ॥ ২৯ গীত। ማህሙማ করেন এবং কেহ অপান বায়ুকে প্রাণে হবন করেন।” পূরক, রেচক ও কুম্ভকের কথা এই শ্লোকে বলা হইয়াছে। তিলক এই শ্লোকের ব্যাথা করিয়াছেন :– “প্রাণায়াম’ শব্দের প্রাণ শব্দে শ্বাস ও উচ্ছ্বাস উভয় ক্রিয়াই ব্যক্ত হইতেছে। কিন্তু যখন প্রাণ ও অপানের ভেদ করিতে হয় তখন প্রাণ বহিরাগত অর্থাৎ উচ্ছ্বাস বায়ু এবং অপান – অন্তরাগত শ্বাস, এই অর্থে লওয়া হয়। মনে রেখো যে অপানের এই অর্থ প্রচলিত অর্থ হইতে ভিন্ন ।” ৪৩০-৩১ “কেল্লাহ আহার নিয়মিত করিয়া প্রাণেতে প্রাণের যজ্ঞ করেন । এই সৰ্ব্বপ্রকার যজ্ঞানুষ্ঠানকারীরা যজ্ঞের দ্বার স্ব স্ব পাপ বিনাশ করেন। যজ্ঞাবশিষ্ট অমৃততুল্য অন্ন ভোজনে অর্থাৎ যজ্ঞফলভোগে সনাতন ব্ৰহ্মপ্রাপ্তি হয়। হে কুরুসত্তম, যে যজ্ঞ করে না তাহার পরলোকের ত কথাই নাই, ইহলোকও নষ্ট হয়।” তৃতীয় অধ্যায়ের ১৩ শ্লোকেও বলা হইয়াছে যজ্ঞ করিয়া অবশিষ্ট-ভাগ-গ্ৰহণকৰ্ত্ত সকল পাপ হইতে মুক্ত হয়, কিন্তু যজ্ঞ না করিয়া যে নিজের জন্য প্রস্থত অন্ন ভক্ষণ করে সে পাপী ব্যক্তি পাপ ভক্ষণ করে । এই শ্লোক ও তৎপরবর্তী শ্লোকের ব্যাপ্যাকালে বলিয়াছি যে, শ্ৰীকৃষ্ণ বেদবিহিত যজ্ঞাদির বিশেষ পক্ষপাতী নহেন। শ্ৰীকৃষ্ণ এই অধ্যায়ে যজ্ঞের অর্থ অতিশয় ব্যাপক করিয়া ধরিয়াছেন । শ্লোকের ঘ্যাখ্যা পড়িয়া হঠাৎ মনে হইতে পারে যে, শ্ৰীকৃষ্ণ বুঝি যজ্ঞ কৰ্ত্তব্য এই কথা বলিতেছেন, কিন্তু বাস্তবিক তাহা নহে । তিনি যজ্ঞের কর্তব্যতা সম্বন্ধে সাধারণের মতই বলিতেছেন । ইহা তাহার নিজের মত নহে, পরের শ্লোকেই বলিলেন— ৪৩২ “এইরূপ বহুবিধ যজ্ঞ বেদমুখে উক্ত হইয়াছে, מש\|8 তাপরে নিয়তাহারাঃ প্রাণান প্ৰাণেষু জুহ্বতি । সৰ্ব্বেগুপোতে যজ্ঞবিদো যজ্ঞক্ষয়িতকল্মষা: ॥ ৩০ যজ্ঞশিষ্টামৃতভুজে। যাস্তি ব্ৰহ্মসনাতনম্। নায়ং লোকোহস্ত্যযজ্ঞস্ত কুতোহন্তঃ কুরুসত্তম । ৩১ এবং বহুবিধা যজ্ঞ বিতত ব্ৰহ্মণো মুখে। কৰ্ম্মজ্ঞান বিদ্ধি তানসৰ্ব্বানেবংজ্ঞাত্বা বিমোক্ষ্যসে ॥ ৩২
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।