পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ho S99áు সাজসজ্জা, ছোটঘরের মৃত্তিকাশয়ন ! সে যেন অমরাবতীর শোভা দুই চক্ষু ভরিয়৷ পান করিতেছে, এমনই হইল তাহার সমস্ত মুখের ভাব । সংসারের সকল অভাবঅভিযোগ, দুখ-নিরাশা সব যেন অমৃতস্রোতে ধুইয়া গেল। যামিনী তাহাকে চিঠি লিখিয়াছে। কি লিখিয়াছে তাহ প্রতাপ জানে না। নীলাভ ধূসর খামখানির বুকের ঐশ্বৰ্ষ্য এখনও উদঘাটিত হয় নাই। সেটিকে মুঠার ভিতর চাপিয়া ধরিয়াই প্রতাপ যেন আনন্দে আত্মহারা হইয়া উঠিল। কিছুই যদি সে না লিথিয় থাকে, নিতান্ত সামান্ত ভদ্রতার দু-চারিটি উক্তি দিয়াই যদি চিঠি শেষ করিয়া থাকে, তবু প্রতাপের এ আনন্দের তুলনা নাই। যামিনী মনে করিয়া লিখিয়াছে ত ? তাহার লিখিবার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, কারণ প্রতাপ তাহাকে চিঠি লেখে নাই, তবু সে নিজে ইচ্ছা করিয়া লিথিয়াছে। এই ইচ্ছাচুকুর মূল্য কি কম ? যামিনীর মত মেয়ে, জ্ঞানদা যাহাকে সোনার খাচায় মানুষ করিতেছেন, সে কেন দরিদ্র গৃহশিক্ষক প্রতাপকে চিঠি লিখিতে বসিল ? ইহার উদ্ভব হৃদয়ের কোন ভাব হইতে ? চিঠিখান খুলিতে সে ইতস্ততঃ করিতে লাগিল । না খুলিয়াই যদি রাখিয় দেওয়া যায় ? সে-ই কি ভাল হয় না ? প্রতাপ তাহা হইলে কল্পনাকে লাগাম ছাড়িয়া দিতে পারে । সে নিজে যেমন একখানি চিঠি যামিনীকে লিখিতে চায়, সেইরকম একখানি চিঠি সে নীলাভ খামখানির ভিতর কল্পনা করিয়া লইতে পারে। যাহকিছু শুনিতে চায়, সবই প্রাণের শ্রবণ দিয়া শুনিতে পারে। খুলিলেই ত যেমন হোক শুধু একটি বাণী তাহার কাছে ধরা দিবে। অসংখ্য কথা, যাহা তাহার বুকের ভিতর বাজিয়া ফিরিতেছে, তাহ কি নীরব হইয়া যাইবে না ? কিন্তু না খুলিয়া সে শেষ পৰ্য্যস্ত পারিল না। ছোট চিঠি, কাগজের এক পৃষ্ঠাতেই শেষ হইয়াছে। ভিতরে ভাজ কর। নোট । প্রতাপ তাড়াতাড়ি গুণিয়া দেখিল, যামিনী সেই উপহারের বইখানার দাম পাঠায় নাই। তবে সে উপহার গ্রহণই করিয়াছে ! রাজুর আসিয়া পড়ার ভয় ছিল, সুতরাং চিঠিখানা এইবার সে সাবধানে খুলিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। বিশেষ-কিছু নয়, কয়েক ছত্র মাত্র। হয়ত এমন চিঠি শুধু ভদ্রতা-প্রণোদিত হইয়াই লেখা যায়। এমন কোনো কথা তাহার ভিতর নাই, যাহা যে-কোনো মানুষ যে-কোনে মানুষকে লিখিতে না পারে। কিন্তু প্রত্যেকটি কথা প্রতাপের হৃদয়ে যেন অমৃতবারি সিঞ্চন করিতে লাগিল । এ যে যামিনীর লেখা, তার প্রতাপকে লেখা ! যে-কেহ যামিনীকে জানে না, প্রতাপকে জানে না, সে ইহার মূল্য বুঝিবে কেমন করিয়া ? চিঠি যে সে লিখিয়াছে, তাঁহাই যে কতখানি ! যামিনী তাহার অসুখ শুনিয়া দুঃখিত হইয়াছে, যামিনী তাহার অনুপস্থিতে হয়ত বা ব্যথাও পাইয়াছে, যদিও সেকথা চিঠিতে উল্লেখ করে নাই । কত শুভকামন। সে জানাইয়াছে, প্রতাপের সাহায্য করিবার কোনো উপায় থাকিলে, এখনই সে তাহ করিতে প্রস্তুত, যদি সে উপায় প্রতাপ তাহাকে বলিয় দেয়। হায়, প্রতাপের সে সাধা যদি থাকিত ! একবার যামিনী আসিয়া তাহার এই দীন রোগশয্যার পাশ্বে দাড়াইলেই যে তাহার অৰ্দ্ধেক রোগ সারিয়া যায় ! কিন্তু সে কথা বলিবার সাহস প্রতাপের কই, তাহার অধিকারই বা কোথায় ? হৃদয়ের সম্পর্কে যামিনী তাহার প্রিয়তম অন্তরতম হইলেও বাহিরের সম্পর্কে কেহই নয়, প্রভুকন্যা মাত্র । সিড়িতে রাজুর পায়ের শব্দ শুনিয়া প্রতাপ তাড়াতাড়ি চিঠিখান বালিশের তলায় গুজিয়া রাখিয় তাহার উপর শুইয়া পড়িল । রাজু ভিতরে আসিয়া তোয়ালে দিয়া মুখ হাত মুছিয়া চিরুণী দিয়া মাথার চুল ঠিক করিত লাগিল । কিন্তু যেখানে বাঘের ভয়, সেইখানেই সন্ধ্য হয়। পিসিম কোথা হইতে হঠাৎ আবিভূত হইয়া জিজ্ঞাসা করিয়া বসিলেন “হঁী রে, কোথা থেকে চিঠি এল, বাড়ির ?” প্রতাপ অম্লানবদনে মিথ্যা কথা বলিল, “হঁ্য ।” “বে ভাল আছে, ছেলেপিলে সব ভাল ?” প্রতাপের আর পথ ছিল না, অগত্য বলিল, “হঁ্য। সবাই ভালই আছে।” পিসিমা সৌভাগ্যক্রমে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করিয়া