পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W ६ 8 মার্গের উপদেশ দিয়াছেন। এই অধ্যায়ে শ্ৰীকৃষ্ণের নিজের মত পরিস্ফুট হইয়াছে। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি তিনি কোন বিশেষ মার্গকে একমাত্র মার্গ বলিয়া মনে করেন না। যে ঘে-মার্গের সাধক হউক শ্ৰীকৃষ্ণের উপদেশমত সাধনা করিলে তাহার মুক্তি হইবে। কোন মার্গই পরিত্যজ্য নহে। এইজনাই নবম অধ্যায়ে সমস্ত মার্গের উল্লেখ করিয়া শ্ৰীকৃষ্ণ বলিলেন আমাতেই সমস্ত আশ্রিত। শ্ৰীকৃষ্ণ নিজ নির্দিষ্ট উপায়কে রাজগুহ রাজবিদ্যা বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন; ইহা পবিত্র, উত্তম, প্রত্যক্ষবোধগম্য, ধৰ্ম্মপ্রদ, স্বথে প্রযোজ্য, অব্যয় ও স্ত্রী শূদ্ৰ, পাপী পুণ্যাত্মা নিৰ্ব্বিশেষে সকলের উপযোগী। নবম অধ্যায়ে যে শ্ৰীকৃষ্ণ সমস্ত সাধনমার্গের উল্লেখ করিয়াছেন তাহ। হঠাৎ বুঝা যায় না। ৯৭ শ্লোকে অহোরাত্রবাদের কথার আভাস আছে ; ৯৮-১০ শ্লোকে পরিবর্তিত কাপিল সাংখ্যবাদ, ৯/১১ শ্লোকে অবতারবাদ, ৯১২ শ্লোকে অধ্যাত্ম, অধিভূতবাদ, ৯১৫-১৬ শ্লোকে বিবিধ যজ্ঞ, মন্ত্র, ঔষধ ( রসসান্ত্রের সাহায্যে মোক্ষলাভ ), ৯১৭ শ্লোকে ওঁকারবাদ, ৯১৯-২১ শ্লোকে বেদোক্ত দেবতাগণ যজ্ঞ, স্বর্গ ইত্যাদি, ৯২২ শ্লোকে ধ্যান ৯২৩-২৫ অন্য দেবতা, পিতৃপূজা, ভূতপূজা ইত্যাদি, ৯৷২৬ শ্লোকে ফল পুপদি উপচারের দ্বারা পূজা, ৯২৭-২৮ শ্লোকে সংন্যাস মার্গ উল্লিখিত হইয়াছে। নবম অধ্যায়ে সমস্ত মার্গগুলির আলোচনা শেষ না হওয়ায় ১০ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকে শ্ৰীকৃষ্ণ বলিলেন,তোমাকে আরও বলিতেছি শোন’। ১০৪-৮ গ্লোকে বিবিধ মানসিক সাধন, যথা ক্ষমা, সত্য, অহিংসা ইত্যাদির কথা বলা হইয়াছে এবং ১০৯-১০ শ্লোকে ভক্তিবাদের কথা আছে। যে যে ভাবে বা যে যে বস্তুতে মানুষের ভগবদ্যুপাসনার ভাব উদ্দীপিত হয় ১০২০ শ্লোক হইতে অধ্যায়ের শেষ পর্যন্ত তাহার বিবরণ আছে। উপনিষদোক্ত আত্মা, রুদ্রাদিত্য প্রভৃতি বেদোক্ত এবং ইন্দ্রিয়াদি উপনিষদোক্ত দেবতা বৃহস্পতি, স্কন, ভৃগু প্রভৃতি সম্মানিত ব্যক্তিগণ, হিমালয়, গঙ্গা প্রভৃতি S99āు প্রাকৃতিক বস্তু, নানাবিধ গুণাবলী এই অধ্যায়ে উপাসা বলিয়া বিবৃত হইয়াছে। শ্রীকৃষ্ণের বক্তব্য এই যে, তাবৎ উপাস্য পদার্থ সহিত সমগ্র বিশ্ব আত্মাতে অবস্থিত। একাদশ অধ্যায়ে অর্জন এই সমস্তই কৃষ্ণের দেহে অবস্থিত দেখিতেছেন। দ্বাদশ অধ্যায়ে কৃষ্ণ বলিতেছেন আত্মাই যখন বিশ্বজগতের আধার তখন আত্মাতেই মনোনিবেশ কর। বিশ্বে আত্মদর্শন বা আত্মার বিশ্বদর্শন উভয় উপায়েই মুক্তি সম্ভব। আত্মপ্রীতি বা আত্মরতিই প্রকৃত ভক্তি। কৃষ্ণভক্তি আত্মরতি একই কথা। কোথায় এই আত্মার সন্ধান পাওয়া যাইবে তাহা ত্রয়োদশ অধ্যায়ে বলা হইয়াছে। আত্মা শরীরবাসী, এজন্য আত্মার সহিত শরীরের সম্বন্ধের জ্ঞান জন্মিলে আত্মদর্শন হয় । ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞের সম্বন্ধ-জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। প্রকৃতিজাত ত্রিগুণের দ্বারা এই জ্ঞান আবৃত, এইজন্য চতুর্দশ অধ্যায়ে সত্ত্ব, রজ, তমের আলোচন।। পঞ্চদশ অধ্যায়ে কি করিয়া নিগুৰ্ণ আত্মা মন ও ইন্দ্রিয়যুক্ত হইয়া বিষয়ভোগ করে এবং কি করিয়া আত্মজ্ঞানের দ্বারা তাহার বন্ধন মোচন হইতে পারে, তাহা আলোচিত হইয়াছে। কোনও ব্যক্তির কাৰ্য্যাকার্য্য বিচার করিলে তাহার মোক্ষের সম্ভাবনা কতটা বলা যায়। এই সম্পর্কেই ১৬ অধ্যায়ে দৈবী ও আম্বর সম্পদের আলোচনা। প্রকৃতিজাত ত্রিগুণভেদে মানুষের একই কৰ্ম্মের অনুষ্ঠানের বিশেষত্বে বিভিন্ন ফল হইতে পারে ; তাহ ১৭ অধ্যায়ে দেখানো হইয়াছে। যজ্ঞাদি কৰ্ম্ম অনুষ্ঠানের বিশেষত্বে বন্ধন বা মোক্ষ উভয়েরই হেতু হইতে পারে। ১৮শ অধ্যায়েও ত্যাগ জ্ঞান কৰ্ম্ম ইত্যাদির ত্ৰিবিধ ভেদ দেখানো হইয়াছে এবং মানুষের পক্ষে কি প্রকার আচার কর্তব্য তাহ স্বধর্মের ব্যাখ্যায় বল৷ হইয়াছে। গীতার সার ধর্মোপদেশ ১৮ অধ্যায়ের ৬৫৬৬ শ্লোকে বলিয়া শ্ৰীকৃষ্ণ নিজের অনুমোদিত নবম অধ্যায়ে আরন্ধ রাজগুহ রাজবিদ্যার ব্যাখ্যা শেষ করিলেন। এইখানেই গীতার সমাপ্তি। '