আশ্বিন শৃঙ্খল b^సి করিয়া হেমবালা বলিলেন, “ওর দোষ নেই, আমারই দেরি হয়ে গেল সব জিনিষপত্র গোছগাছ করতে। য হয়ে ছিল সব ! এসে অবধি 'ত ঐ করছি। রাত অবিশুি বেশ অনেকটাই হয়েছে, তা তোমরাও ত না খেয়েই আছ সব ? ঐ কচি বাচ্চাটা এত রাত অবধি শুকিয়ে আছে, ওকে ফেলে আমি নিজে খেয়ে নিলে সেট দেখতে খুব বেশী ভাল হ’ত কি ” হেমবালার কথার মধ্যেকার প্রচ্ছন্ন তিরস্কারটুকুকে বীণা গায়ে মাখিল না। র্তাহার পাশেই একটুখানি জায়গা করিয়া লইয়া বসিয়া পড়িল, কহিল, “হ্য পিসীম, তোমাদের দেশে আমায় একবার নিয়ে চল না। আমার একবার খুব পাড়াগায়ে যেতে ইচ্ছে করে । কখনও যাইনি জন্মে অবধি। একবার কেবল বৰ্দ্ধমানে গিয়ে দিনকতক ছিলাম, তা সে ত শহর ।" হেমবালা গম্ভীর মুখেই কহিলেন, “তা বেশ ত, এবারে পাড়াগেয়ে বর দেখে তোর আর-একটা বিয়ে দেব, তাহলেই হবে ত ?” দুটি হাতকে জোড় করিয়া কপালে ঠেকাইয়া বীণা কহিল, “রক্ষা কর বাবা, ঢের হয়েছে, আর না ।” মন্দির দিদিমার গা ঘেষিয়া দাড়াইয় আবদারের স্বরে কহিল, “আমাকেও পাড়াগেয়ে বর দেখে বিয়ে দিও দিদু।” হেমবালার মুখে তবু হাসি ফুটিল না, কহিলেন, “তোকে কি করবে ? তোকে দেখে ভয় পেয়ে যাবে।” মন্দিরা বিনাইয়া কাদিতে লাগিল । তাহাকে একহাতে জড়াইয়া আরও কাছে টানিয়া তীক্ষ বক্রদুষ্টিতে বীণাকে চকিতে একবার দেখিয়া লইয়া হেমবালা কহিলেন, “কেন বীণা, বাধাটা কি শুনি ?” বীণ খোলা জানালায় বাহিরের অন্ধকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া কহিল, “বেশ ত সুখে আছি ।” তারপর গম্ভীর হইয়া গেল। একটু পরে কহিল, “ইলু কি করছে দেখি একটু” বলিয়া ঘোমটার কাট, চুলের কাটা পুলিতে খুলিতে উঠিয়া পড়িল । তেতলায় ঐন্দ্রিলার পড়িবার ঘরে ঐন্দ্রিলা এবং বীণার ছোটভাই রাক্ত বসিয়া ছিল । রাহুর বয়স দশ এগারোর বেশী নহে, তদুপরি সে আজন্ম রুগ্ন, দরজা হইতে তাহার শরীরের প্রায় সমস্তটাই ঐন্দ্রিলার আড়ালে পড়িয়া গিয়াছিল। “কি করছিস রে ইলু,” বলিয়া ঘরে ঢুকিয়া রাহুকে দেখিতে পাইয়া বীণা বলিল, “তোর যে আজ ভারি মনোযোগ দেখছি রে রাহু ?” ঐন্দ্রিলা একটু হাসিয়া বলিল, “হ্যা, মনোযোগ ত কত ! বই ছুড়ে ফেলে এসে ছবি আঁকতে বসেছে।” বীণা ঝাঝিয়া কহিল, “এই বুঝি তোর এবার ফাষ্ট্র হবার নমুনা ? পরীক্ষার আর ক'দিন বাকী রে তোর ” রাহু ছবির খাস্ত হইতে মুখ না তুলিয়াই বলিল, “আর ত দু-বৎসর পর আমি জিওমেটি, করব, তখন ঢের ছবি অশকতে হবে।” বীণা কহিল, “তারও ক’বছর পরে ত ঘাস কাটবি, এখন থেকেই নেংটি প’রে তাহলে মাঠে নেমে পড়, না ?” ঐন্দ্রিলা বলিল, “রাহু সদার, যাও তোমার ঢের ছবি আঁকা হয়েছে, এবারে খেয়েদেয়ে ঘুম দাও গে।” বাহু বলিল, “বা রে, বাঘের যে ল্যাজ বাকী রইল !" ঐন্দ্রিলা বলিল, “এ বাঘট ল্যাজ কেটে সভ্য হয়েছে।” রাহু আবদার করিয়া বলিল, “ন, লাজ দিয়ে দাও।” বীণা কহিল, “তোরটাই না-হয় কেটে ওকে দিয়ে দে না ।” রাহু বলিল, “তুমি আমার সঙ্গে কথা বোলো না।” বীণ বলিল, “না বলতে হ’লে ত বাচি রে! তুই যা দেখি, খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়, দেপিস তোর সঙ্গে কেউ কথা বলতে যাবে না।” রাহু রাগ করিয়া ছবির খাতা ছুড়িয়া ফেলিয়া চলিয়। গেলে তাহার পরিত্যক্ত আসনটিতে বসিয়া চুলের কাট, ফিতা, ব্রেচি, কানের দুল, প্রভৃতি খুলিয়া খুলিয়া বীণা তাহার কোলের উপর রাখিতে লাগিল । ঐন্দ্রিলা কহিল, “কি হ’ল ক্লাবে ?” “হবে আবার কি ছাই, যা হয়।” “সবাই গোল হয়ে বসে কেবল গল্প করলে ?” "আর কি করব, নাচব ?”
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।