পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩৮

ভাদ্র দলবল সমেত কাৰ্ত্তিক কিছু পিছনে আসিতেছিল তাহারা শ্যামাচরণের কথা শুনিতে পাইল না, নিজেদের মধ্যে একটা পরামর্শ করিতেছিল। শ্যামাচরণ গ্রাম ছাড়াইতেই যুবকের জ্ঞতপদে তাহার পাশ্ববর্তী হইল। দলের সদার বলিষ্ঠ যুবক শ্যামাচরণের মুখের দিকে মুখ বাড়াইয়া বলিল,—দেওয়ানজীর কাছে কি পেলে ? রাগে শ্যামাচরণের সর্বাঙ্গ জলিয়া যাইতেছিল। বিকট মুখভদী করিয়া কহিল,—তোমার সে খোজে কাজ কি ? অবিলম্বে আর এক যুবক বলিল,—ও যে চাদ চাওয়া ছেলে, তোরা জানিস নে ? দেওয়ানজীর কাছে টাদ চাইতে গিয়েছিল। যুবকেরা যেন উতোর কাটাইতে আরম্ভ করিল। আর এক জন বলিল,—চেয়েছিল আস্ত টাদ, পেয়েচে আধখানা । আর একজন অমনি শ্যামাচরণের চক্ষের সম্মুখে নিজের হাত অৰ্দ্ধ মুষ্টির আকারে ধরিয়া বলিল,—অৰ্দ্ধচন্দ্র জান ত? যাকে ভাষায় বলে গলাধাক্কা । আরও চাই ? এবার কাত্তিকও অগ্রসর হইয়া আসিল । নাকী স্থর করিয়া, চক্ষু পাকাইয়া কহিল,—আমাকে বেতপেটা করবে না ? চল, আমার বাবার সাক্ষাতে আমাকে পিটিয়ে দেবে। যুবকেরা হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিল। কেহ বলিল,—এই যে হাতে বেত রয়েচে ; অপর কেহ বলিল,—আর একটু হলেই দরোয়ানী লাঠি খেতে হ’ত । —এমন সোনার টাদ ছেলের বাপ-মা কি নাম রেখেছিল ? –পদ্মলোচন। খ্যাদা পুতের যা নাম হয়ে থাকে। —শিক্ষেটা তেমন ভাল হয় নি, সদাচারের কিছু অভাব । चांगंडो \S —শেখাতে কতক্ষণ ? বলিয়াই এক যুবক খুব জোরে শ্যামাচরণের কান মলিয়া দিল । শ্যামাচরণ হাতের লাঠি তুলিতেই যুবকেরা সরিয়া গেল। শ্যামাচরণ ছড়ির ভিতর হইতে টানিয়া গুপ্তি বাহির করিল। যুবকদের ইচ্ছা ছিল লোকটাকে স্ব-কতক চড়চাপড় দিয়া ৰিদায় করিয়া দিবে। ইহার অধিক কিছু নয়। তাহাদের হাতে এক গাছ লাঠিও ছিল না, শ্যামাচরণের ছড়ির ভিতর গুপ্তি আছে তাহা জানিত না । কাৰ্ত্তিক তাড়াতাড়ি সকলের পিছনে গিয়া চেচাইতে লাগিল,— ওরে, খুনী রে, খুনী ! হয়ত বাবাকে খুন করতে এসেছিল । ডাক্‌, দরোয়ানদের ডাকু, ওকে ধরবে । খুনী শৰ শুনিতেই শ্যামাচরণের গায়ের রক্ত শুকাইয়া গেল, মুখ মান হষ্টল, গুপ্তি-স্থদ্ধ হাত কঁাপিতে লাগিল। আর একটি কথাও না কহিয়া ছড়ির ভিতর গুপ্তি পুরিয়া দিয়া সে বেগে পলায়ন করিল। যুবকের প্রথমে আশ্চর্ধা হইয়া গেল, তাহার পর শ্যামাচরণকে ঢ়িল ছুড়িয়া মারিতে আরম্ভ করিল। কয়েকটা তাহার পিঠে ও পায়ে লাগিল, কাত্তিকের একটা লোষ্ট্র শ্যামাচরণের মাথায় লাগিয়া মাখা কাটিয়া রক্ত পড়িতে লাগিল, কিন্তু শ্যামাচরণ থামিল না, পিছনে ফিরিয়া চাহিল না, কেবলই প্রাণপণে ছুটিতে লাগিল । সে দৃষ্টির বাহির হইলে কাত্তিক বলিল,—দেখলি, ওটা খুনী না হয়ে যায় না। যেই বলেচি খুনী আমনি ওর আত্মারাম শুকিয়ে গেল, ঠক ঠক ক’রে র্কাপতে লাগল, পালাবার পথ পায় না। আর খুনী না হ’লে লাঠির ভিতর গুপ্তি নিয়ে বেড়ায় ? এষ্ট মতের কেহু প্রতিবাদ করিল না। ক্রমশঃ