৭২ S99āు তারিণী:খুড়ে কাতরকণ্ঠে বলিলেন, “ত্য-ন একটা বলে যা না ?” ক্ষেন্তি যাইতে যাইতে পিছন ফিরিয়া বলিল, “দেশ ছেড়ে ত আর পালিয়ে যাচ্ছি না, মানে মানে ফিরে আসি আগে, তারপর শুনো।” কিন্তু দেখা গেল, দেশ ছাড়িয় যাওয়াই এখনকার মত তাহার ললাটের লিখন । গোবিন্দর-মা দোতলার সিড়ি বাহিয়া তবৃতবু করিয়া নামিয়া আসিতেছিল, ক্ষেস্তিকে দেখিবামাত্র বলিল, “এই যে ক্ষ্যাস্ত, তোমাকে খুঁজে খুজে সব হায়রাণ। মার সঙ্গে কলকেতায় যাবে, শীগগির করে তৈরী হয়ে নাও গে।” তারপর ক্ষেস্তির কানের কাছে মুখ লইয়া কহিল, “এ সংসারের অন্ন আর নয়, রাধাগোবিন্দজীর ভোগের প্রসাদ পেয়ে নৌকোয় উঠবেন, ঠাকুরকে তাড়া দিতে যাচ্ছি।” এমন যে ক্ষেন্তি সেও নীরবেই কপালে হাত ঠেকাইল, তারপর দ্বিরুক্তি না করিয়া ত্ৰস্তপদে সিড়ি উঠিতে লাগিল । হেমবালার মুখ দেখিয়া কিছু বুঝিবার উপায় নাই। ঠোটের কোণদুটা একটু শক্ত হইয়া আছে, তাও ভাল করিয়া লক্ষ্য না করিলে ধরা শক্ত। একটিমাত্র খোল জানলায় যে-রোদটুকু ঘরে আসিয়া পড়িয়াছে সেটুকুকে পিঠে করিয়া একটা জলচৌকি লইয়া বসিয়া তিনি স্বানান্তে আর্দ্র চুলের রাশ শুকাইতেছিলেন। ক্ষেস্তি স্বারের পাশে আসিয়া দাড়াইতেই চকিতে তাহার দিকে একবার চাহিয়া লইয়। বলিলেন, “ভেতরে আয়।” ক্ষেস্তি ভিতরে ঢুকিল মাত্রই ; চৌকাঠের এপাশে কপাট ঘেষিয়া জড়সড় হুইয়া দাড়াইল । হেমবালা তাহার দিকে না চাহিয়াই বলিলেন, “তুই আমার সঙ্গে কলকাতায় যেতে পাবুবিত ?” ক্ষেত্তি কহিল, “কেন পারব ন ম ? অবিশ্যি পারব। আপনার ভুকুমের গোলাম । যেখানে যেতে বলবেন, ঘাৰ । সংসারে আমার আর কেই বা আছে, আপনার প-দুটি আশ্রয় করেই বেঁচে আছি।” হেমবালা আঙুল চালাইয়া ভিজা চুলের জট ভাঙিয়া দিতে তি বলিলেন, “তাহলে তোর জিনিষপত্র চট করে সব গুছিয়ে নিগে যা । উঠব ।” ক্ষেন্তি পায়ের নখে পাথর-বাধানে মেঝে খুড়িবার চেষ্টা করিতে করিতে অনভ্যস্ত মৃদু গলায় বলিতে লাগিল, “সেই কথাই ত বলছি মা, জিনিষপত্র কিই বা আমার আছে যে গোছাব ? দুটি বই কাপড় নেই। সেবারে কলকেত থেকে ফিরে এসে সব ঝিদের একটা ক’রে কামিজ দিয়েছিলেন, সে ত কোনকালে ছিড়ে গিয়েছে। শীত এসে পড়ল, একখানা গরম গায়ের-কাপড় নেই। হাজার হোক আমরা রাজবাড়ির ঝি চাকর, লোকের কাছে আমাদের মুখ রেখে চলতে হয়ত মা ?” হেমবালা বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “নে-নে, সে-সব কলকাতায় গিয়ে হবে এখন। তুই যা ত, শীগগির করে গিয়ে তৈরী হ।...আর দেখ, দেওয়ানজীকে আগে একটু ডেকে দিয়ে যা ।” “আচ্ছা মা” বলিয়া ক্ষেস্তি বাহির হইয় গেল। পথে আবার তারিণীপুড়ে, গোবিন্দর-ম, মোক্ষদ, চাপ, নিস্তার, সরকারগিরি, মুক্তোর পিসি। ক্ষেন্তি এবার আর তাহদের হাত এড়াইবার কোনো চেষ্টাই করিল না । নীচে ভিতর-বারান্দার একপাশে সকলকে ডাকিয়৷ ভিড় জমাইয়া সবে বক্তৃত সুরু করিবে এমন সময় উপরে সিঁড়ির মুখ হইতে ইাক আসিল, “ক্ষ্যান্ত!” আলগোছে সিড়ির কাছে সরিয়া গিয়া ক্ষেন্তি বলিল, “མཱ་། །’’ “কি করছিস তুই ওখানে, যা শীগগির দেওয়ানজীর কাছে ” “ঘাচ্ছি মা” বলিয়া ইসারায় অন্যদের কাছ হইতে ছুটি লইয়া ক্ষেস্তি এবার প্রায় ছুটিয়াই চলিয়া গেল । কাছারীবাড়ির দক্ষিণ দিকের একটা ঘরে ময়লা মসীচিহ্নিত একটা ফরাসের উপরে স্তুপাকার খাতাপত্ৰ লইয় দেওয়ানজী বসিয়াছিলেন, ক্ষেন্তি আসিয়া একপাশে দাড়াইলে প্রথমে তাহার দিকে শূন্তদৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিলেন, তারপর ক্রমান্বয়ে সে ধে মামুষ, সে যে ক্ষেস্তি, সে যে মনিববাড়ীর খাস চাকরাণী, এবং তাহার যে কিছু বক্তব্য, থাকা সম্ভব এই উপলব্ধিগুলি রাশি রাশি ইজ-জের খাওয়া দাওয়া সেরেই নৌকোয়
পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।