পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

48 S99āు সে অশ্রুবিসর্জন করিতেছিল, হেমবালা তাহাকে বাধা দেন নাই, কিন্তু তারপর মেয়ের কাছে একবারও আর র্তাহার যাওয়াও হয় নাই । অন্দরের উঠান পার হইয়াই তাহার মনে হইল, উপরে তাহার শয়নঘরের পূবদিক্কার জানালাট কে যেন বন্ধ করিয়া দিল। ভাবিলেন ঐঞ্জিল হইবে । কিন্তু সিড়ি উঠিতে উঠিতে মন কেমন যেন সন্দিগ্ধ হইয়া উঠিল। যেন উপরে জুতার শব্দ অস্পষ্ট শুনিতে পাওয়া গেল। ভাবিলেন ফিরিয়া যাইবেন, এক মুহূৰ্ত্ত থামিলেনও, কিন্তু পরক্ষণেই মন স্থির করিয়া লইয়া দ্রুতগতিতে এবং দৃঢ়পদে উপরে গিয়া উঠিলেন । ভিতরে থাটের একপাশে চিরাভ্যস্ত স্থানটিতে নতমস্তকে নরেন্দ্রনারায়ণ বসিয়াছিলেন। হেমবালার বুকটা এক মুহূৰ্ত্ত দুরদুর করিয়া উঠিল। প্রশস্ত কক্ষের দূরতম কোণে মেহগনির বিশাল ড্রেসিং টেবিল | হেমবালা ছোট দেরাজ হইতে চাবির গোছ। বাহির করিলেন। একদিক্কার দেরাজে কেশরচনার সরঞ্জাম, অপরদিকে নিজের এবং ঐন্দ্রিলার নানাপ্রকারের প্রসাধন-দ্রব্য ; ব্রোচ স্কুল ইত্যাদি ছোটজাতীয় গহন । নীচের দেরাজদুটিতে সৰ্ব্বদা ব্যবহারের কাপড়-চোপড়। এক এক করিয়া সেগুলি বাহির করিয়া একপাশে গুছাইয়৷ রাখিতে লাগিলেন । স্বামীর দিকে তিনি দৃকপাত-মাত্র করেন নাই, নরেন্দ্রনারায়ণও বহুক্ষণ স্ত্রীর দিকে ফিরিয়া দেখিলেন না। তারপর অকস্মাৎ এক সময় কম্পিতপদে উঠিয় গিয়৷ সিড়ির দরজাট ভেজাইয়া দিয়া আসিলেন। হেমবালার অমনোযোগে বাধা পড়িল । পশ্চাৎ হইতে আয়নায় নরেন্দ্রের ছায়াপাত হইবামাত্র চকিতে নিজের মুখ তিনি নামাইয়া লইলেন। ফিরিয়া চাহিলেন না, কিন্তু তাহার জিনিস-গোছোনো বন্ধ হইয়া গেল । নরেন্দ্র কম্পিতকণ্ঠে কহিলেন, “আমি এই শেষবার তোমাকে বলতে এসেছি।” nার ঠোঁটের কাছটা একটু কাপিয়া গেল । ঘরে ঢুকিবার সময় কিছু চিস্তা করিয়া আসেন নাই, এক মুহূৰ্ত্ত থামিয় একটু ভাবিয়া লইয়া বলিলেন, “বেশ, শেষবারই বল ।” “কিছুতেই কি আমার অপরাধের ক্ষমা নেই ?” "যে-সংসার থেকে তুমি আমাকে এনেছিলে সেখানে এ-ধরণের অপরাধ ক্ষমা করতে কেউ আমায় শেখায়নি।” কিছুক্ষণ একটা অস্বস্তিভর নীরবতা, তারপর নরেন্দ্র আবার সাহস সঞ্চয় করিয়া কহিলেন, “মেয়ের দিকটাই না-হয় ভাব, আমাদের ঐ একমাত্র--” হেমবালা তাড়াতাড়ি কহিলেন, “আমি যা করছি, একমাত্র তার কথা ভেবেই কবৃছি। এখানকার অাবহাওয়া তার গায়ে কিছুতেই আমি আর লাগতে দিতে পারব না। নিজের কাছে কখনও তার মাথ৷ হেঁট না হয় তাও অবশ্য আমি দেখব।” নরেন্দ্র কেবল বলিলেন, গভীর বেদনার ছায়ার সঙ্গে তাহার মুখে অস্ফুট করুণ একটু হাসি থেলিয়৷ গেল। আবার কিছুক্ষণ স্তন্ধত, তারপর হঠাৎ একসময় মুখ তুলিয়৷ আবেগভর কণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, “যদি কথা দিই, জীবনে কখনও আর কোনো অপরাধ তোমার কাছে করব না ?” এবারে হেমবালা একটু হাসিলেন, তারপর কহিলেন, “তাতে লাভ হবে, কথা রাখতে না-পারার আরও একট অপরাধ তোমার বাড়বে | কথা যে রাখতে পারে সে এমন অপরাধ করে না ।” নরেন্দ্র নতমস্তকে কিছুক্ষণ চিন্তা করিলেন। বুঝিলেন একথা সত্য। কথা যে রাখিতেই পারিবেন জোর করিয়া তাহা বলিতে পার তাহার পক্ষে সম্ভব নহে। এ-জীবনে নিজেকে কতবার এ ধরণের কত কথা দিয়া শেষ পর্য্যস্ত তিনি কথা রাখিতে পারেন নাই। তবু একবার শেষ চেষ্ট হিসাবে কহিলেন, “যদি কথা রাখতে পারি, তুমি ফিরে আসবে বলে যাও ” হেমবালা দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “মেয়েমানুষ যখন যায়, ফেরবার পথ আর রেখে যায় না ।” কথাটা যুক্তির মত শুনাইল, কিন্তু কাৰ্য্যকারণ-সম্পর্কের মধ্যে কোথায় কেমন যেন একটা অস্পষ্টতার শৈথিলা রহিয়া গেল। অন্তত: বলিয়া হেমবালার মন খুণী হইল না। : "! به » ،