পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ শৃঙ্খল ዓፄ লায় সারি সারি জয়পুরী বাট ভরিয়া রাধাগোবিন্দজীর ভাগের প্রসাদ আসিল । হেমবালা পায়সের বাটি হইতে -আঙলের ডগায় করিয়া একটু পায়স লইয়া কপালের ছে তুলিয়া জিভে ঠেকাইলেন, অস্থথের ছল করিয়া কচুই খাইলেন না। ঐন্দ্রিলাও আসনে আসিয়া বসিল মাত্রই অন্ন তাহার গলায় বাধিয়া যাইতে লাগিল। শেষ অবধি সেও কিছুই প্রায় না-থাইয়া উঠিয়া-পড়িল । বাহিরের দেউড়িতে দেওয়ানজী অপেক্ষা করিতেছেন। জিনিসপত্র নদীর ঘাটে পাঠানো হইতেছে, ক্ষেস্থি ও প -দাইয়া তৈরী হইয়াছে। নীচে সিড়ির কাছে গ্রামের বর্ষীয়সী এবং অবিবাহিত নারীদের ভিড় । উঠনের একপাশে দুইটি পালকি এবং একটি ডুলি অপেক্ষা করিতেছে। লাট এবং লাটাই হাতে পাড়ার ছেলের দল সেখানে আসিয়া জড় হইয়াছে। কেহ কেহ পালকির ভর। কাধে কবিতে গিয়া বেহারীদের কাছে তাড় সুইতেছে। অন্যেরা তাহাতে আমোদ পাইয়৷ হৈ-হৈ কবিয়া উঠিতেছে । ঐন্দ্রিল নীচে নামিয়াই একবার চকিতের মত চারিপাশটা দেখিয়া লইল । আর ত সময় নাই। প্রতিবেশিনীরা তাহার মায়ের সিথিতে কপালে সিফুর, পায়ে আলতা পরাইয়া দিতেছে। পালকির মধ্যে বিছানা পাতা হইতেছে। হেমবালা ডাকিলেন, "ইলু, তোর কাতুপিসিমাকে প্রণাম করেছি ?” জাতিসম্পর্কে পিসি, খুড়ী, জ্যেঠা আরও কেহ কেহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন ; সকলকে প্রণাম করিয়া, সম্পর্কে যাহার ছোট তাহাদের প্রণাম গ্রহণ করিয়া ঐন্দ্রিলা দেখিল অবগুষ্ঠিত হেমবালা একদল প্রতিবেশিনীদের দ্বার পরিবৃত হইয়া রাধাগোবিন্দজীর মন্দিরের দিকে চলিয়াছেন। লুকাইয়া ছুটিয়া গিয়া সে একবার উপরের সব-ক’ট ঘর দেখিয়া আসিল । নীচে নামিয়া অভাগতদের কৌতুকদৃষ্টি বাচাইয়া একতলার ঘর-কটাও দেখিল। দ্রুতপদে উঠান অতিক্রম করিয়া কাছারীবাড়ির কাছাকাছি আসিতেই শুনিতে পাইল, পালকির খোলাদরজার সামনে দাড়াইয়া হেমবালা ডাকিতেছেন, "ইলু, কি কবৃছিল তুই ?” কলিকাতায় মামার সঙ্গে পরিচয় হইয় অবধি ঐন্দ্রিলা রাধাগোবিন্দজীর মন্দিরের দিকে পারতপক্ষে ষাইত না, আজ ঘটা করিয়া পূজা-দেউলের ভিত্তিগাত্রে মাথা ঠেকাইয় প্রণাম করিল, তারপর ফিরিবার পথে নরেন্দ্রের বসিবার ঘরটায় একবার উকি দিয়া দেখিয়া স্থিরপদে হেমবালার পাশে আসিয়া দঁাড়াইল । পালকি-দুটির দরজা খুলিল, বন্ধ হইল। ক্ষেন্তির ডুলির উপর মশারির কানাত পড়িল । বেহারারা পালকি ডুলি কাধে করিয়া দাড়াইতেই স্ত্রীকণ্ঠে হুলুধ্বনি হইল, ছেলের দল কোলাহল করিয়া উঠিল। এমন সময় আৰ্ত্তকণ্ঠের চীৎকারে সমস্ত কোলাহলকে অতিক্রম করিয়া এক বৃদ্ধ ঘৰ্ম্মাক্ত দেহে স্থাপাইতে ইণপাইতে সেখানে অগসিয়া উপস্থিত হইল। পালকির পিছনে ছুটিতে ছুটিতে কঁাদিতে কঁাদিতে কহিতে লাগিল “রাণীম গো, আমার ক্ষেতের এই আনাজ-ক’টি তোমায় নিতে হবে। আমি এই রোদরে তিনকোশ পথ হেঁটে এসেছি তোমার পায়ে নিবেদন ক’রে যাব বলে । তুমি 'না' বললে চলবে না।” বেহারারা থামিল না দেখিয় সে আনাজের ঝুড়িটা উঠানে নামাইয়া রাখিয়া যাহাকে সম্মুখে পাইল তাহারই পায়ে ধরিয়া বলিতে লাগিল, “পায়ে পড়ি বাছ, পায়ে পড়ি। আমার এই আনাজ-ক’টি ওঁকে নিতে বল। মা আমার মুখ তুলে চেয়েছিল ব’লে আমার ছেলেটা সেবার কয়েদ হতে হতে ছাড়া পেল, আমি বড় সাধ ক’রে আমার জগদ্ধাত্রী মাকে দেব ব’লে নিয়ে এসেছি। সদরে শুনলাম মা আমার রাজরাজত্ব ফেলে বনবাসে যাচ্ছেন, পড়ি কি মরি ছুটে এসেছি। আমাকে পায়ে ঠেলে গেলে এ-জায়গা ছেড়ে নড়ব না, ধর্না দিয়ে পড়ে থাকব ।” পালকি ততক্ষণ খিড়কির দরজা দিয়া বাহির হইয়া গিয়াছে, বুড়ির শোক দ্বিগুণিত হইয়া উঠিল,স্বেদজলের সঙ্গে অশ্রুজল মিশিয়া তাহার বিশীর্ণ গগু বাহিয়া গড়াইয়া পড়িতে লাগিল। যাহার উপস্থিত ছিল সকলেই তাহাকে সাহায্য করার পরিবর্তে তিরস্কার করিল। অতঃপর সে মাটিতে লুটাইয়া পড়িবার জোগাড় করিতেছে দেখিয়া দুজন চাকর *মিলিয়া ধরাধরি করিয়া তাহাকে বাছিয়_ ফরিয়া