পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԵ* S99āు বারান্দা হইতে নরেন্দ্রনারায়ণ গর্জন করিয়া উঠিলেন, “ন—ন, ছেড়ে দে ওকে।” তারপর ত্বরিতে উঠানে নামিয়া আসিয়া কহিলেন, “ডুলিবেহারাদের থামৃতে বল, এ আনাজ নিয়ে যেতে হবে । তারপর এ তা’র পথে ফেলে দিয়ে যাক্ বা আর-কিছু করুক সে তারা ভাববে।” চাকরদের একজন আনাজের ঝুড়িট। কাধে তুলিয়া লইয়৷ উৰ্দ্ধশ্বাসে খিড়কির দরজার দিকে ছুটিল। বুড়ী সেইখানেই নরেন্দ্রনারায়ণের পায়ের কাছে মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া বলিতে লাগিল, “বাবা গো, দীর্ঘজীবী হও, ভগবান তোমাকে রাজা করেছেন, আর কি আশীৰ্ব্বাদ তোমায়ু করব বাবা ? আমি বড় সাধ ক’রে আমার ক্ষেতের পয়লা-প্রথম বেগুন যে-ক’টা পেয়েছি তুলে এনেছি। কলমী শাক, কুমড়ার-ফুল। লাউ একটা ছিল, বইতে পারব না বলে আর আনিনি। হ্যা বাবা, তোমার জন্যে চারটি বেগুন ওরা তুলে রাখলে না ?...” নরেন্দ্রনারায়ণ ত্বরিত পদেই আবার উঠান অতিক্রম করিয়৷ কাছারীবাড়ির দরজা ঠেলিয়া ভিতরে অদৃত হইয় গেলেন । বাড়ী হইতে নদীর ঘাট দেড়মাইল-টাক দূরে। খানিকট পথ আসিয়া ঐন্দ্রিলা একবার পালকির দরজ। খুলিয়া মুখ বাড়াইয়া পিছনে চাহিয়া দেখিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু কিছুই বিশেষ দেখিতে পাইল না। জেলেপাড়ার মধ্য দিয়া পালকি চলিতেছে, ঘরবাড়ী গাছপালার ভিড়ে পিছনের পথ ঢাকা পড়িয়া গিয়াছে । এক প্রৌঢ় জেলেনী মলিন শতছিন্ন একখানি কাপড়ে লজ্জা নিবারণ করিয়া বসিয়া আকসী-বাড়ি হাতে রোদে-ঝুলানো মাছ পাহারা দিতেছিল, তাড়াতাড়ি ছুটিয়া আসিয়া পথের পাশে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণাম করিল। পথের এক পাশে দুটি ছোট ছোট মেয়ে, পরনে গামছা, নাকে নোলক, একজনের কাখে প্রায় তার নিজেরই সমান ওজনের একটা উলঙ্গ ছেলে, ভয়কৌতুকভর দৃষ্টি লইয়া গলাগলি জড়সড় তামাস দেখিবার লোভে দাড়াইয়া আছে। পশ্চাৎ হইতে কেএকজন চীৎকার করিয়া বলিল, গড় কর, হতভাগীরা গড়. কর । মেয়ে ছুটি থতমত খাইয়া কথাটা তলাইয়া বুঝিবার চেষ্টা করিতেছে, ততক্ষণে ঐন্দ্রিলার পালকি তাহাদের অতিক্রম করিয়া গেল । নদীর ঘাটে আসিয়া পালকি নামিলে ঐন্দ্রিলা বাহির হইয়া প্রথমেই পশ্চাতে চাহিয়৷ দেখিল, ছোট মাঠটির ওপারে আম-জাম-কাটাল-জলপাই-লিচুগাছের নিবিড় যবনিকার উদ্ধে তাহাদের ভিতর মহলের দুতলার একটি দিক্‌ চোখে পড়িতেছে। শাদা চুণকামের উপর দুপুরের রোদ পড়িয়া জলিতেছে, হঠাৎ চাহিলে চোখ ফিরাইয়া লইতে হয়, তবু আগ্রহভর দৃষ্টিতে সেইদিকে চাহিয়াই সে দাড়াইয়া রহিল। মা যখন ডাকিলেন তখন তাহার চমক ভাঙিল। তবু নৌকায় উঠিতে গিয়াও বারবার পশ্চাতে তাকাইল, পা ধুইতে অকারণেই ইচ্ছ। করিয়া দেরি করিল ; অবশেষে যখন উঠিল, অবাধ্য অশ্রু কিছুতেই আর বারণ মানিতেছে না। নিজের দুৰ্ব্বলত পাছে কাহারও চোখে পড়ে এই ভয়ে তাড়াতাড়ি সে ছইয়ের মধ্যে ঢুকিয় বিছানার উপর উপুড় হইয়া লুটাইয়। পড়িল । ழ்! কিছুক্ষণ কাদিয়া বুকের ভার একটু লঘু হইলে অনুভব করিল, হেমবালা নীরবে আসিয়া পাশে বসিয় তাহার গায়ে একটি হাত রাখিলেন । সে প্রাণপণে ক্ৰন্দনবেগ রোধ করিল, কিন্তু উঠিল না, মুখ তুলিয়া হেমবালার মুখের দিকে দেখিলও না। পাল তোলা হইতেছে, মাঝিমাল্লাদের কোলাহল । দেওয়ানজী চাকরবাকর লইয়া অপর একটি নৌকায় উঠিয়াছেন, তাহার কণ্ঠস্বর শোনা যাইতেছে । গম্ভীর গলায় মাঝিদের তিনি প্রতি পদে উপদেশ দিতেছেন, তাহাদের প্রত্যেকটি কাজের সমালোচনা করিতেছেন। কোনও কোনও বিষয়ে তাহার উপদেশ অবহেলিত হইতেছে বলিয় তাহারা মাঝে মাঝে তাড়া খাইতেছে। কিন্তু নিজেদের কাজ তাহারা দেওয়ানজী অপেক্ষা বেশী বোঝে, তাহার কোনও কোনও উপদেশ অমান্য না করিয়া তাহাদের উপায় নাই । নীচে সহসা জলস্রোত অধীর উচ্ছ্বাসে কলকল করিয়৷ উঠিল। নৌকার মুখ ঘুরিয়া যাইতেছে, তীব্র গতিতে ঘুরিতেছে। ঠিক কতটা ঘুরিল ঐঞ্জিলা অনুভব করিতে পারিল না, একবার মনে হইল মুখটা ঘুরিয়া ঠিক যেন