পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ ‘পদ্মাবত’ কাব্য এবং পল্লিনীর অনৈতিহাসিকভা b-n ১৭৬২ : ( জানুয়ারি, ১৬৭৩ খৃ. ) । নিখিলবাবু বলিয়াছেন, “রাণী-বংশের অতুমতিক্রমে লিখিত হওয়ায় তাহারই কথা বিশ্বাসযোগ্য” ( পৃ. ৮১৬ )। এটি শুধু আহমান। গৌরীশঙ্করজী এই প্রশস্তি সম্পাদন করিয়া চেন এবং তাহার চেয়ে এই প্রশস্তির সহিত ঘনিষ্ট পরিচয় কাহারও আছে কি-না সন্দেহ । ঐতিহাসিক মূল্য থাকিলে তিনি ইহা উদ্ধৃত করিয়া নিশ্চয় বিচার করিতেন । কিন্তু পদ্মিনী-উপাখ্যান-সম্পর্কে ইনি কোথাও রাজপ্রশস্তির উল্লেখও আবখ্যক মনে করেন নাই। ইহার ঐতিহাসিকত। সম্বন্ধে গোপীশঙ্কর জী লিথিয়াছেন—“প্রারম্ভের কয়েকটি সর্গে মেবারের যে প্রাচীন ইতিহাস লেখা হইয়াছে উল্লাহ। ৬{টদের খ্যাত ইত্যাদির উপর নির্ভর করিয় রচিত ওয়ায় অধিক বিশ্বাসযোগ্য নয়.” ( ঐ, ৩য় ভাগ, মেবারের সকল প্রশস্তি ঐতিহাসিক গবেষণা করিয়া লিথিত হইত না । তিন শত সত্তর বৎসর পরে রচিত একটি কাব্যকে আমীর খসরু-কুত সমসাময়িক ইতিহাস ‘তারিখই-আলাই’, এবং জীয়াউদ্দীন বারণীর ‘তারিখ-ই-ফিরোজশাহীর চেয়ে অধিকতর প্রমাণ্য বলিয়া গ্রহণ করা উচিত কি-না সুধীমণ্ডলী বিচার করিবেন । আলাউদ্দীনের সময়ের কথা দূবে থাক, আকবরের সমকালীন মহারাণ। প্রতাপের ইতিহাস, সম্বন্ধেও রাজপ্রশস্তিকার ভুল করিয়াছেন। প্রশস্তি-রচনার এক শত বৎসর পূৰ্ব্বে হলীঘাটের যুদ্ধ হই আছিল । এই যুদ্ধ-বৰ্ণনায় প্রতাপের পলায়ন, খোরাসানী ও মুলতানী সৈনিকের পশ্চাৎ অনুসরণ, “খোরাসানী মুলতানীক অর্গল” শক্তসিংহ কর্তৃক প্রতাপের প্রাণরক্ষার কথা লিখিত হইয়াছে। অথচ শক্তসিংহ হলদীঘাটের যুদ্ধে আদেী উপস্থিত ছিলেন ন, এবং বদায়ুনী—যিনি স্বয়ং মোগলপক্ষে লড়াই করিয়াছিলেন–লিথিয়া গিয়াছেন, যুদ্ধেশেষে সারাদিন মোগলের রাণার গুপ্ত আক্রমণের ভয়ে আড়ষ্ট ছিল ; রাণাকে অনুসরণ করিবার মত শক্তি মোগলদের ছিল না। ইহার চেয়ে অমার্জনীয় ভুল-রাজপ্রশস্তিকার লিথিয়াছেন, প্রতাপ “সেখু” অর্থাৎ কুমার সেলিমকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়াছিলেন, অথচ মোগল-দরবারের ইতিহাসের স্থত দ্বার প্রমাণ হয় কুমার সেলিম প্রতাপের বিরুদ্ধে কোন অভিধান করেন নাই ; প্রতাপের মৃত্যুর তিন বৎসর পরে কুমার সেলিম মহাবাণ। অমরসিংহের বিরুদ্ধে প্রেরিত হইয়াছিলেন । পদ্মাবত-উপাখ্যানের জন্য রাজপ্রশস্তির প্রামাণিকত কতটুকু ইহু হইতে সহজেই অল্পমান করা যায় । টডের ‘রাজস্থান’ ( ১৮২৯ ) মহামতি টড সাহেব উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে রাজস্থানের ইতিহাস উদ্ধার করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, তখন রাজপুতানার ইতিহাস অজ্ঞানত অন্ধকারে আচ্ছন্ন । ভাট-চারণের ইতিহাস ভুলির গিয়াছে। তাহার কল্পনামূলক “খ্যাত" ইত্যাদি গান করিয়া জীবিকানিৰ্ব্বাহ করিত। এই খ্যাতগুলিতে আমাদের বঙ্কিমচন্দ্র, রমেশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল প্রভৃতির উপন্যাস-নাটকের চেয়েও প্রকৃত ইতিহাসের ভাগ কম ছিল। টড সাহেব আঁধারে হাতড়াইয়া যাহা কিছু পাইয়াছেন কুড়াইয়া সংগ্ৰহ করিয়াছেন। তিনি নিজ হইতে মনগড় কিছু লিখেন নাই ; কিন্তু ভাট ও কবিদের মনগড়া কথায় তাহার ইতিহাস ভৰ্ত্তি করিয়াছেন। এটা ঐতিহাসিকের আপদ্ধৰ্ম্ম—“মধ্বাভাবে গুড়ং দদ্যাৎ” ব্যবস্থা। ধরুন আজ হইতে দুই শত বৎসর পরে কোন রাজনৈতিক কিংব। প্রাকৃতিক বিপ্লবে আমাদের দেশ হইতে আকবর, আওরঙ্গজেব প্রভৃতির সমসাময়িক ফাসি ইতিহাস এবং স্তর যদুনাথ ইত্যাদির গবেষণামূলক ইতিহাস নষ্ট হইয়া গিয়াছে—শুধু বঙ্কিমচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলালের উপন্যাস ও নাটকগুলি রহিয়া গেল। এ অবস্থায় আমেরিকার কোন পণ্ডিত যদি এদেশের ইতিহাস-উদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হন এবং উপন্যাস ও নাটকগুলির চুম্বক-কথা ইতিহাসের আকারে লিখিয়া যান, উহা যেরূপ ইতিহাস দাড়াইবে টডের ইতিহাসও প্রায় সেই রকম দাড়াইয়াছে। মহামহোপাধ্যায় গৌরীশঙ্কর হীরাচাদ ওঝা মহাশয় চল্লিশ বৎসর অক্লান্ত পরিশ্রমে রাজপুতানার ইতিহাস অধ্যয়ন করিয়া টডের রাজস্থানের সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশিত “ করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন । এ-কাজে কিছুদূর অগ্রসর হইয়া সম্প্রতি ছাড়িয়া দিয়াছেন; কারণ তিনি লিখিলেন,