পাতা:প্রবাসী (দ্বাবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] হয়ে উঠছে, বুহুিরের কোনো টীকা বা iঅন্বয়ের জন্তে কোথাও লেশমাত্র অপেক্ষ রাখেনি । এ হল ভারতীয় শিল্পপদ্ধতির একটি ধারা ; এ ছাড়াও আর-একটি প্রণালী আছে যেখানে মানসমূৰ্ত্তিকে রূপ দেওয়া নয়, বা প্রকৃতিকে ভাবে অনুপ্রাণিত করে দেখানোই হচ্ছে শিল্পীর উদেশ্ব। আর, ভেবে দেখতে গেলে আধ্যাত্মিক জগৎ এবং প্রাকৃতিক জগতের মধ্যে যে একটা সুস্পষ্ট স্বনির্দিষ্ট সীমারেখা আছে তাও ত নয় । “অসীম সে চায় সীমার নিবিড় সজ”, যা অরূপ এবং নিরাকার তারও পরিচয় ত আমরা বিশ্ববৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে রূপের মধ্য দিয়েই পাই ; এই প্রকৃতি এই বাস্তবজগৎ সেও ত এক অনিৰ্ব্বচনীয় অপরিমের প্রাণশক্তিরই অভিব্যঞ্জনায় স্পন্দমান । সুতরাং শিল্পীর পক্ষে দু-ই সমান লতা, এবং র্তার রচনার জন্তে জ্বয়েরই সমান দরকার । তিনি আমাদের এই মাটির কাছ থেকেই ফুল ধার করে তবে ত তাকে পাথরের গায়ে গায়ে কোমল কম্পিত মৃণালবৃন্তটির উপর অপূৰ্ব্ব লাবণ্য-লহরে লীলাম্বিত করে’ তুলতে পারলেন । ফুল, পাতা, জল, পাখী সেখানে এক বিশুদ্ধ স্বরের অমরাবতীতে স্থান পেল-সেই দ্বন্দ্রবিরোধবৈষম্যবর্জিত ছন্দোময় জগতে • যেখানে প্রতি পুষ্পকোরক, প্রতি কোমল পত্রপল্লব এক অনন্ত সৌন্দর্ঘ্যের রূপরশ্মিপাতে সমূদ্ভাসিত, যেখানে কোনে কিছুই ব্যর্থ বা অপ্রাসঙ্গিক নয়, কুল্পনা এবং বাস্তবিকতা যেখানে অপরূপ মিলনের মাধুধ্যে বিলীন হল। এই যে রূপহষ্টি এ ত কেবল আলঙ্কারিক নয়, এ ত কেবল সাজসজ্জা শিল্পচাতুৰ্য্যসংক্রান্ত নয়, এ যে “সৌন্দর্ঘ্যের পুষ্পপুঞ্জে প্রশান্ত পাবাণে” বিকশিত একটি করুণ কমলের মুগ্ধ জয়গান। প্রকৃতির শুধু অবিকল নকল করে যাওয়া, বা কেবল তার ভাবকে রূপ দেওয়া, এর কোনটাই ভারতীয় শিল্পীর ঠিক আদর্শ নয় ; প্রকৃতির নিবিড়-নিহিত গতিবেগ, তার গোপন প্রাণস্পন্দনকে তিনি উপলব্ধি করে নেন এবং তারই তালে তালে নিজের মনোধৰ্ম্ম এবং স্বভাবগত স্বষ্টিপ্রণালী অনুসারে তিনি একটা স্বতন্ত্র ভাবোজ্জ্বল রূপরচনা করতে .বসেম। আমরা যে বিশেষ শিল্পরচনাটির কথা বলছিলাম দেখানে প্রস্তর-ক্ষোদিত ঐ কম্পিত পদ্মবৃন্তগুলি তাদের ভারতীয় শিল্পপ্রতিভা io 诊e使 উপরকার পূর্ণকুহুমিত স্বভৌল পদ্মফুল এবং স্থঙ্কাগ্র কমল-কলিকার মাধুৰ্যসভার নিয়ে অত্তি মধুর স্বযমার সহিত প্রকৃতির একটা ভারী অপূর্ব ছদ্মকে ছলিয়ে তুলেছে। " ভারতীয় শিল্পকলায় প্রত্যেক জিনিষকেই এমনি একটা অনুভূতির প্রাবল্য, একটা নিবিড়তা এবং একাগ্রতার সঙ্গে ধরে’e দেখানো হয়, কারণ যদিও চেতনাশক্তির স্বল্পতাহেতু অল্পেতেই শিল্পীর মন সাড়া দেয়, তৎসত্বেও কল্পনাবিকাশের, জন্যে তাকে কোনো বিশিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধ থাকৃতে হয় না, কোনো বাহিক বস্তুসামগ্রীর উপর একান্তভাবে তার অবলম্বন না করলে চলে। তাই তিনি ক্রমাগত নূতন নূতন রচনার বিষয় এবং তার জন্তে নূতন নূতন নিয়ম এবং প্রয়োগপ্রণালী উদ্ভব করে যান। বস্তুত ভারতের মত এমন স্বাধীনতাপ্রিয় এবং স্বাতন্ত্র্যচারী শিল্পপ্রতিভা জগতে আর দ্বিতীয় নেই। নিজের বিশেষত্ব এবং স্বগঠিত নিয়মপ্রণালীকে এখানে এতদূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় যে শেষে আপনার উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছাকেও সম্পূর্ণভাবে- কার্ঘ্যে পরিণত করে তোলা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না । এইজন্তে শেষে এমন সব প্রকাশপদ্ধতি এমন সব নিরীক্ষণ-প্রণালীগত নিয়মের স্বষ্টি করতে হয় যু। সমগ্র শিল্পরচনার প্রতি সাধারণ ভাবে প্রযোজ্য হতে পারে না, অথচ ছবির প্রত্যেক অংশের উপর খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে আপন অধিকার বিস্তার করে । এর একটা ভাল দৃষ্টান্ত এলোরায় যে একটা পাথরে-কাটা মন্দির আছে সেইটে। এই শিল্পরচনায় অতি স্বল্প স্বনিপুণ কারুকার্ষ্য এবং-জপধ্যাপ্ত জটিল রেখার বৈচিত্র্য যেন স্বষ্টির অজস্রত্বে উৎসারিত হয়ে সকল বাধাবিঘ্ন একেবারে আচ্ছন্ন করে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করে দিয়েছে। এখানে দেখতে পাই শিল্পজনিত সংযমের বদলে অফুরন্ত শক্তির আতিশয্য, সীমা ও পরিমাণের স্থানে পূর্ণতা ও সমগ্রতা, এবং রচনাবিন্যাসের পরিবর্ভে স্থষ্টির একটা বিপুল উদ্যম ও দ্বিধাবিহীন আনন্দ-উচ্ছ্বাস । এই প্রকার শিল্পশ্বটি রূপপ্রকাশের যা সবচেয়ে সহজ বাহুল্যবর্তি উপায়-রেখ-ভার মধ্যেই নিজেকে