পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وليسون মণ্ডিত ঐক্যলাভ করে না, কারণ সে কিছুই বর্জন করে না, সকলই গ্রহণ করিয়া জমা করিয়া রাখিতে চায়। বাণেশ্বরের মনের সহিত অরুণের মনের এইখানে প্রভেদ । সত্য ও সভ্যতার প্রকৃত রূপ সম্বন্ধে বাণেশ্বরের একটি স্পষ্ট ধারণ, নিজ মত আছে। কিছু পাইলেই সে বিচার করে, বিশ্লেষণ করে। সে নিজ মতের প্রভাবে পরিবর্তন ঘটাইতে চায়, নিজে পরিবর্তিত হইতে চায় না। অরুণের মধ্যে দুইটি মানুষ যেন ধীরে গড়িয়া উঠিতে লাগিল, একটি প্রতিদিনের কলেজে-পড়া সাধারণ অরুণ, আর একটি নিত্যকালের স্বপ্ন-দ্রষ্টা কল্পলোকবাসী অরুণ ; তাহার বাস্তব জীবনের খাদের উপর কল্পলোকের রসধার প্রবাহিত হইয়া চলিল, স্বর্ণশস্তভর মাঠের মধ্য দিয়া ভদ্রের ভরানদী যেমন বহিয়া যায়। আর এই কল্পনাজগতের উপর জাগিয়া রহিল উমার আনন্দকর সপ্রেম দৃষ্টি, শরতের আলোভরা আকাশের স্বনিৰ্ম্মল স্বচ্ছ নীলিমার মত । প্রেম ছিল বলিয়া অরুণের দ্বৈতজীবনে কোন সংঘাত ছিল না; নতুবা বাস্তব তটভূমিতে ভাবধারার আঘাতে ঘোর আবর্ভের সৃষ্টি হইত, অরুণকে কোন অশাস্ত অতলতায় ডুবিয়া মরিতে হইত। উমার একটু হাসিভর। চাউনিতে সমস্ত দিনটি প্রসন্নতাভর হয়, উমার মুখের একটু বিষ্ণতায় স্বয্যের আলে। স্নান হইয় আসে । উমা যেদিন ভাল করিয়া কথা কয় না, অরুণের দিনরাত্রি নিরানন্দময়, উমা যেদিন ডাকিয়া গান শোনায়, অরুণের ইচ্ছা করে কোন মহৎ কায্যে জীবন উৎসর্গ করিয়৷ দেয় । সে চণ্ডীদাস খুলিয়া পড়িতে বসে – “পারিতি বলিয়া, এ তিন সাগর এ তিন ভুবন সার ।” অরুণ বুঝিতে পারে না, কেন একদিন উমা গল্পোচ্ছ,সে হাস্যময়ী, আবার অন্যদিন গম্ভীরা স্বল্পভাষিণী। উম তাহার কাছে রহস্যময়ী হইয় ওঠে। নদীর স্রোতের জোয়ারভাটার মত উমার মনের অবস্থায় যে আনন্দস্রোত কখনও প্রবল, কখনও মৃদু হয়, তাহার রহস্য অরুণ কিছুই জানে না। অরুণ ভাবে উমা দিন দিন বড় 'মুড়ী' ( moody ) হইয়। উঠিতেছে। তাহার মন খারাপ হইয়া যায়। প্রবাসী >Nご8ミ. অরুণের অন্তরও মধ্যে মধ্যে বিষন্নতার ভারে আনত হইয় পড়ে। এ বিষাদের সে কারণ খুজিয়া পায় না। স্তষ্টির মূলে কোন না-পাওয়ার বেদন আছে, এ বুঝি এলিমেণ্টাল GGIRafai' ( elemental melancholy ), sfērā statwg সহিত এ বেদনা ছায়ার মত জড়িত ; এ-বিষ্ণতা কবি শেলীর জীবনেও ছিল । শেলী অরুণের অতি প্রিয়, শেলীকে তাহার পূজা করিতে ইচ্ছা করে,—শেলীর প্রেম, সমাজ-বিদ্রোহ, ভাবুকত, স্বাধীনতাপ্রিয়ত, উদাসত, আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য তৃষ্ণ,— শেলীর মনের সহিত তাহার মনের গভীর মিল আছে, সে যদি শেলীর মত কবিতা লিখিতে পারিত ! যৌবনের উচ্ছলিত আনন্দে বিষাদের অন্ধকার কাটিয়া যায়। চারিদিকে যেন কোন অভাবনীয় রহস্য, মাধুয্যের আবৰ্ত্ত । দিন অপেক্ষ রান্ত্রি তাহার ভাল লাগে। গভীর রাত্রি পৰ্য্যন্ত সে বই পড়ে। ঠাকুম মাঝে মাঝে আসিয়া বলিয়া যান, এখনও পড়ছিল, যা ঘুমোতে যা । অরুণ বই বন্ধ করে, কিন্তু ঘুমাইতে যায় না। বারান্দায় চুপ করিয়া বসে অথবা বাগানে নামিয়া যায় ! মেঘহীন পাণ্ডু আকাশে চন্দ্র একাকী, নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের মত নীলিমার বিস্তার, ফাঙ্কন রাত্রির নিস্তন্ধ উদার শুভ্রতা, ছায়ামুগ্ধ তরুশ্রেণীর গন্ধভরা অন্ধকার, জ্যোৎস্নানিশীথের নৈঃশব্দে সে নিজ হৃদয়ের মধ্যে আবিষ্ট হইয়া যায়, বাহিরের সকলে অজান, কোন রহস্যময় জীবনপথে সে একাকী পথিক। আম্রবন তালবন মৰ্ম্মরিত হইয় ওঠে, সমস্ত আকাশ যেন কি কথা বলিতে চায়, অব্যক্ত বেদনায় পাণ্ডুর। অরুণের চোখে জল আসে। কোন চৈত্রের রাত্রে যৌবনের মত্ততা লাগে। ইচ্ছা হয়, সমস্ত রাত্রি নিদ্রাহীন কাটাইয়া দেয়। মধ্যাহ্ন রৌদ্রের প্রখর শুভ্রতার মত জ্যোৎস্না। কোন বিশ্বব্যাপিনী মায়াবিনী অবগুণ্ঠন খসাইয় তাহাকে ইঙ্গিত করে। প্রাচীন উদ্যানের ক্ষুদ্র গুপ্তদ্বার খুলিয়া অরুণ মাঝে মাঝে স্বপ্তসৌধ কলিকাতার জনবিরল স্তন্ধ পথে বাহির হইয়া যায়। কল্পনা করে, এই বুঝি কালিদাসের উজ্জয়িনীর রক্তাশোক ও বকুলতরুর বীথিক, কুস্বস্তরঞ্জিত বস্ত্রপরিহিতা কোন অভিসারিক