পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

وقاسيا ؟ প্রবাসী ১৩৪২ চমকিয়া জাগিয়া অরুণ ক্ষুব্ধ স্বরে বলিল—কি হয়েছে, কি ডাকাত পড়ল নাকি ! —ঠাকুমার বড় অমুখ । —ঠাকুমার ? ঠাকুমাকে কখনও অস্বস্থ হইতে দেখা যায় নাই। প্রতিমার পাংশু মুখের দিকে অরুণ ভীতভাবে চাহিল। —ই, ঠাকুমার শেষরাত থেকে বমি হচ্ছে । —জালালে । অরুণ বিছানা হইতে উঠিয়া চোপ মুখ ধুইয়া পাঞ্জাবীটা খুজিতে লাগিল। —ডাক্তার এসেছে ? --না, কাকাকে এখনও জাগান হয় নি। তুমি একবার হরিসাধন-দাদাকে ডেকে পাঠাও। --হরিসাধন কি করবে ? বিরক্তির সহিত অরুণ প্রতিমার দিকে চাহিল। প্রতিমা কি তাহাকে অপদার্থ মনে করে । হরিসাধনের উপর তাহার এত নির্ভর বিশ্বাস ! অবশ্য হরিসাধন রোগীর সেবা করিতে অত্যন্ত পারদর্শী। অরুণ দরোয়ানকে ডাকিয়া ডাক্তার বম্বর নিকট চিঠি পাঠাইল, কাকাকে জাগাইয়৷ তুলিল, হরিসাধনকেও একটি চিঠি লিখিতে হইল। প্রতিমার মনে সে ব্যথা দিতে পারে না । সমস্ত বাড়িতে হৈ চৈ পড়িয়া গেল । বয়সবুদ্ধির সহিত ঠাকুমা লোভী হইয়া পড়িয়াছেন। গত রাত্রে কোন দোকানের বাসী মিষ্টান্ন অধিক পরিমাণে খাইয়াই এই কাণ্ড । ঠাকুমা সারিয়া উঠিলেন, শিবপ্রসাদের অসুখ হইল । কিছুদিন হইতেই তাহার শরীর ভাল যাইতেছিল না। পূজার সময়ে সকলে চেঞ্জে যাবার কথা ছিল, কেন যে যাওয়া হইল না, অরুণ বুঝিতে পারিল না। জর কয়েক দিন ধরিয়া চলিল, ছাড়িতে চায় না। রক্তপরীক্ষা করিয়া দেখা গেল ম্যালেরিয়া নয়। টাইফয়েড় নয় ত ? শিবপ্রসাদ হাসিয়া বলেন–জরটা কি জন্যে জানি, লিভার লিভার। কিন্তু কোন উপায় নেই ডক্টর বোস্। ডাক্তার বন্ধ বলিলেন—এবার মদর্ট ছাড়তে হবে। শিবপ্রসাদ বলিলেন—তার চেয়ে আত্মহত্যা করতে বলুন। শিবপ্রসাদ অসুস্থ হওয়াতে অরুণ তাঁহাকে অত্যন্ত নিকটে পাইল। অন্য সময় তাহার সহিত দেখা, গল্প করা: অধিক ক্ষণ হইয় ওঠে না। অবসর পাইলেই অরুণ শিবপ্রসাদের রোগশয্যাপাশ্বে গিয়া বসিত, গ্রামোফোন বাজাইত, বই পড়িয়া শোনাইত, বেহালা বাজাইত, নানা গল্প হইত। অরুণের মনে হইত, শিবপ্রসাদের জীবনে কোথায় ব্যর্থতা, গভীর বেদনা আড়ে, অল্প বয়সে সে তাহার জীবনের রহস্ত বুঝিয় উঠতে পারে নাই, এখন কিছু বুঝিতে পারে। কাকার প্রতি তাহার গভীর প্রীতি ও সমবেদন জাগিত । রাত বারটা হইবে। অরুণ শুইয়াছিল, ধীরে বিছানা হইতে উঠিল। ঘুম আসিতেছে না। অন্ধকার আকাশ। সমস্ত দিন অবিশ্রাম বৃষ্টি হইয়াছে। এখন বৃষ্টি থামিয়াছে। বারিসিক্ত বৃক্ষশাখাগুলিতে ঝোড়ো বাতাস ক্ষ্যাপা কুকুরের মত আৰ্ত্তনাদ করিতেছে, সাশীর কাচ ঝন ঝন শব্দে কঁপিয়া উঠতেছে। সহসা ছকু খানসাম দরজায় টোক মারিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। --থোকা বাবা, সাহেব সেলাম দিয়েছেন । —কাক ? আমায় ডাকছেন ? —ই জলদি আসতে বললেন। অরুণের বুক কঁাপিয়া উঠিল। হঠাৎ কাকার কি অস্থখ বাড়িল । আধ ঘণ্টা পূৰ্ব্বে সে কাকাকে নিদ্রিত দেখিয়া আসিয়াছে । বৃহৎ শয়নগৃহ অল্পালোকিত । পুরাতন পন্থের কাজ-করা মলিন দেওয়ালে খাটের, চেয়ারের, আলমারীর কালে ছায়৷ পড়িয়াছে। ক্লারেট-রঙের ভারী পর্দাগুলি কালো দেখাইতেছে। শিবপ্রসাদ মৃদুকণ্ঠে বলিলেন—খোকা আয়, একটা বিশেষ কথা আছে। ছকু থানসামাকে তিনি চলিয়া যাইতে বলিলেন । অরুণ ধীরে দরজা বন্ধ করিয়া ঘরের মধ্যে হতভম্বের মত দাড়াইল। শীতল স্তন্ধ গৃহ। বাহিরে জলে বাতাসের একটানা হু হু শব্দ ।