পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

عمواسسوا —বাবা, আমার আবার মত ? তবে ও মেয়ে ষা একগুঁয়ে, ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া চলবে না । অরুণ ধীরে বলিল—উচিতও হবে না। ওকে পড়তে দাও মামী, বিয়ে ত সবাই করছে, ওর হয়ত জীবনের অন্য কোন আদর্শ আছে । মামীম বলিলেন —আমারও তাই মনে হয়। সব মেয়ে যে ঘরসংসার করবে এমন কোন কথা নেই। তবে, তার চেয়ে বড় কাজ যদি থাকে, তবেই ত বিয়ে না-করা ঠিক হবে। সংসারের নানা দুঃখ চিস্তা কিছুক্ষণের জন্য ভুলিয়া যাইবার একটি অপূৰ্ব্ব স্থান অরুণ একদিন অত্যাশ্চৰ্য্যকরভাবে আবিষ্কার করিল। শীতের সন্ধ্যা। টিপ, টিপ, বৃষ্টি হইতেছে। পথ কাদায় ভর। অরুণ মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে যাইতেছিল, কোন নুতন ইংরেজী উপন্যাস বা ম্যাগাজিন কিনিবে। সহসা ঝম-ঝম করিয়া বুষ্টি আরম্ভ হইল । জলসিক্ত ধূমকুণ্ডলী নিরানন্দ নগরের উপর আতঙ্কের মত। সম্মুখে একটি বায়স্কোপ-হুল দেখিয়া অরুণ তাহার বারান্দায় উঠিয়া কিছুক্ষণ দাড়াইল । বড় এক, বড় মন খারাপ লাগে। টিকিট কিনিয়া সে বায়স্কোপ-গুহে প্রবেশ করিল। ছবি দেখান কিছুক্ষণ মুরু হইয়াছে। অন্ধকার বিরাট গৃহ। সাদ পর্দার ওপর সাদায়-কালোয় নানা ছায়াছবি, মানবের কামনা, লালসা, ঈর্ষা, বেদনার অত্যাশ্চৰ্য্যকর মূক অভিনয়। অৰ্দ্ধনগ্ন নারীদের সিন্ধু-তরঙ্গে স্বানলীলা, রসভারাক্রান্ত দ্রাক্ষাফলের মত যুবতী-তনু তম্বী নটীগণের রঙ্গমঞ্চে নৃত্যোৎসব ; প্রেমিক-প্রেমিকার মত্ত উল্লাস , আবেগময় ভঙ্গ, ভাবের অত্যুক্তি, অতিরঞ্জিত অভিনয় । এ যেন এক মদিরামত্ত অবাস্তবলোক। প্রতিদিনের তুচ্ছতা, বিষাদ, বৈচিত্র্যহীনতার মধ্যে এই অন্ধকার গুহে ছায়াচিত্রের জগৎ অনাস্বাদিত চঞ্চল পুলকময়। কোন দিন মন খারাপ হইলে অরুণ বায়স্কোপে আশ্রয় লইতে আরম্ভ করিল। প্রবাসী ১৩৪২ সবদিন এক যাইতে ভাল লাগে না । একদিন সে উমাকে নিরালায় বলিল-উমা, চল, বায়স্কোপ যাবে ? উমা আশ্চৰ্য্যাম্বিত হইয়া বলিল--কি বলছ ? —বলছি, বায়স্কোপ দেখতে যাবে, একটা ভাল ফিল্ম এসেছে । - _ কলেজের এক সহপাঠিনীর কাছে ফিল্মটির খুব স্থখ্যাতি শুনিয়াছে। উমা চুপ করিয়া রহিল। —শোন, গাড়ী এনেছি, মামীমাকে বলে আসি তুমি আমার সঙ্গে মার্কেটিং করতে যাচ্ছ, তোমার ত কি সব কেনবার ছিল । —লোভ হচ্ছে বটে। —চল, বেশ ভাল লাগবে । বায়স্কোপ দেখিয় তাহারা বহুক্ষণ মিউনিসিপ্যাল মার্কেটে ঘুরিল, কেক, ফল কিনিল, ইংরেজী সচিত্র মাসিক পত্রিক কিনিল । তাহারা যেন কোন স্বপ্নের ঘোরে চলিয়াছে। আলোক বড় উজ্জল, জীবন উল্লাসময় । বাড়ির সিড়িতে চন্দ্রা অরুণকে বলিল --অরুণদা, জানি তোমরা কোথায় গেছলে ? উমা একটু ভয় পাইয়। বলিল—কোথায় রে ? চন্দ্র গম্ভীর ভাবে বলিল, বায়স্কোপ । অরুণ চন্দ্রার হাতে কেক ও ডালমুটের ঠোঙা দিয়া বলিল-বা, আমরা ত মার্কেটিং করছিলুম। ডালমুট পাইয়া চন্দ্র বলিল—আচ্ছ, আমি মাকে বলব না, আমায় এক দিন নিয়ে যেতে হবে কিন্তু । উমা বলিল—কি পাকা মেয়ে । চন্দ্র বলিল—তাই ত ! কেকগুলি বেশ । ইহার পর অরুণ উমাকে এক বায়স্কোপে লইয়৷ ঘাইতে সাহস করিত না, অজয় ও শীলাকেও লইয়া যাইতে হইত। এক বায়স্কোপ ফাইতেও তাহার ভাল লাগিত না । ( ক্রমশ: )