পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রসঙ্গ—ত্রিকালব্যাপী স্বদেশপ্রীতি কীৰ্ত্তিক SBNご প্রতি প্রীতি অতীতের স্বদেশের প্রতি প্রীতির বর্তমান সময়ে র্যাহারা ভাষাবিজ্ঞানের এইরূপ নানা শাখার অল্পবৃত্তি । অনুশীলন করেন, সংস্কৃতাদি ভারতীয় ভাষা তাহাদের জানা সেই অতীতকে জানিতে হইলে অতীতের ইতিহাসের রাজারাজড়ার যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা ঐতিহাসিক পাঠ্যপুস্তকে লিখিত তৎকালীন আচার-ব্যবহারের বৃত্তান্ত পাঠই যথেষ্ট নহে। ব্যাপক অর্থে প্রাচীন সাহিত্য যাহা আছে, তৎসমুদ্ৰয়ের সহিত পরিচিত হওয়া আবশ্যক। আমাদের দেশের এই প্রাচীনতম সাহিত্য সংস্কৃত ও তাহার জ্ঞাতি প্রাকৃত ও পালিতে লিখিত। তাহার সহিত পরিচয় চাই। মূলগ্রন্থ পাঠ করিবার মত প্রাচীনভাষাজ্ঞান সকলের থাকা সম্ভবপর নহে, কিন্তু আধুনিক বাংলা বা অন্য আধুনিক ভারতীয় ভাষার অনুবাদের সাহায্যে প্রাচীন সাহিত্যের সহিত পরিচয় ধটিতে পারে। তাহা হইলেও প্রাচীন ভাষার কিছু জ্ঞান থাকা নানা দিক দিয়া বাঞ্ছনীয়। প্রাচীন সাহিত্য ব্যতীত প্রাচীনস্তম্ভ,শিলালেখ, তাম্রশাসন, প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র, প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন, প্রাচীন গুহাচিত্রাদি প্রভৃতির সহিতও পরিচয় বাঞ্ছনীয়। সংস্কৃত প্রভৃতি প্রাচীন ভাষার জ্ঞান কেবল অতীত সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের জন্যই যে আমাদের থাকা আবশুক তাহা নহে ; বাংলার সহিত সংস্কৃতের সম্বন্ধ এত ঘনিষ্ঠ, সংস্কৃতের উপর বাংলা এত বেশী নির্ভর করে, যে, বাংলার ব্যাপক গভীর ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের জন্য কিছু সংস্কৃত না জানিলে চলে না। বাংলায় যিনি আধুনিক জ্ঞানগর্ভ যে-কোন বিষয়েই কিছু লিখুন না—তাহা গণিত, রসায়নীবিষ্ঠা, বেতারবার্তা, আকাশযান, বা অন্য কিছুই হউক না—তাহাকে নূতন শব্দ কিছু রচনা করিতে হইবে, কিংবা অন্যের রচিত নূতন শব্দ ব্যবহার করিতে হইবে। নিজে নূতন শব্দ গড়িতে হইলে তাহা সংস্কৃত ধাতু হইতে গড়িতে হইবে, কারণ সেইরূপ শব্দই বাংলা ভাষার অধিকাংশ অন্য শব্দের সহুিত সমঞ্জসীভূত হইবে। যদি তিনি অন্যের গড় নূতন শব্দ ব্যবহার করেন, তাহা হইলে তাহা ঠিক হইয়াছে কি না পরীক্ষা করিতে ইলে কিছু সংস্কৃত জানিতে হইবে। বিজ্ঞানসম্মত ব্যাকরণ প্রাচীনকালে সংস্কৃতে রচিত হইয়াছিল। প্রাচীন সংস্কৃত ব্যাকরণে তাহার রচয়িতাদিগের উচ্চারণবিজ্ঞান ও ধ্বনিবিজ্ঞানের জ্ঞানের পরিচয়ও পাওয়া যায়। থাকিলে তাহা খুব কাজে লাগে। সংস্কৃত গ্ৰীক লাটিন প্রভৃতি ভাষা যে ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত, তাহার তুলনামূলক চর্চার জন্ত সংস্কৃতের জ্ঞান অত্যাবশ্বক। গণিতের কোন কোন শাখার, জ্যোতিযের, রসায়নীবিদ্যার, উদ্ভিদবিদ্যার এবং আরও কোন কোন বিদ্যার কতকগুলি বিষয়ের প্রাচীন ভারতীয়েরা চর্চা করিয়াছিলেন। তাহার জ্ঞান এই সকল বিদ্যার বর্তমান অনুশীলকদের কাজে লাগিতে পারে। দর্শনের ত কথাই নাই। যাহা ইউরোপীয়েরা নূতন মনে করেন বা করিতেন এরূপ কোন কোন দার্শনিক মত প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে আছে | - আমরা যদি দেশহিতকর কোন চেষ্টায় নিযুক্ত থাকি, তাহার ফল অনেক সময় হয়ত আমাদের জীবিতকালে ফলিবার সম্ভাবনা দেখা যায় না। এখন ফল দেখিতে না-পাইলেও ভবিষ্যতে এই চেষ্টার ফলে দেশ কেমন হইবে, জাতি কেমন হইবে, তাহা কল্পনা করিয়া আমরা তৃপ্ত হই--যেমন কেহ বনস্পতিবহুল উদ্যানরচনা আরম্ভ করিয়া ইহা ভাবিয়া স্বধী হইতে পারেন, যে, তাহার পৌত্রপৌত্রীরা দৌহিত্রদৌহিত্রীরা এই উদ্যানের আনন্দ সম্ভোগ করিবে। ভবিষ্যতের স্বদেশের প্রতি প্রতি বস্তুটি কি, তাহ আমরা এই প্রকারে কিযুৎপরিমাণে উপলব্ধি করিতে পারি। যে-দেশের অতীত বৰ্ত্তমান ভবিষ্যৎ এক স্বতায় গাঁথা মণিহারের মত, ধন্য সেই দেশ। এই প্রকার আদর্শ দেশ বস্তুতঃ একটিও নাই। এমন দেশ একটিও নাই যাহার অতীত কেবলই গৌরবের বস্তু, যাহার বর্তমান নিষ্কলঙ্ক এবং নিরবচ্ছিন্ন আনন্দের প্রস্রবণ, এবং যাহার ভবিষ্যৎকে দুঃখের, কালিমার, অশুভের বোঝা বহিতে হইবে না। অতীতের উপর আমাদের হাত নাই। অতীত হইতে আমরা যেমন আনন্দের ও গৌরবের কিছু, কল্যাণকর কিছু পাইয়াছি, তেমনি দুঃখের, অগৌরবের, অকল্যাণের ও লজার জনয়িত কিছুও পাইয়াছি। কিন্তু আমরা যদি ভাল যাহা কেবল সেগুলিকেই পোষণ ও রক্ষা করি, তাহ হইলে কেবল যে আমাদের দেশের বর্তমান ভাল হইবে, তাহা নহে, ভবিষ্যৎও ভাল হইবে । আমরা অতীত হইতে