পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাকাল ঐশাস্তা দেবী দর্পনারায়ণ চক্রবর্তীর দুই পুত্রবধূ, স্বরেশ্বরী আর চন্দ্রজ্যোতি । খুব বড়ঘর হইতেই চক্রবর্তী-মহাশয় ছেলেদের বউ আনিয়াছিলেন, কিন্তু বধুমাতার পিতৃগৃহ হইতে ধনরত্ব যতই আমুন না কেন, বড় মন আনিতে পারেন নাই। দুই জায়ে প্রকাশ্যে কলহবিবাদ বড় দেখা যাইত না বটে, কারণ সেটাতে লোকের কাছে খাটে হইতে হয়, শ্বশুরের কাছেও ধরা পড়িয়া যাইতে হয়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যা ভাব ছিল তাঁহাকে অহি-নকুলের সৌহার্দ্য বলিলেও চলে। স্বরেশ্বরী আর চন্দ্ৰজ্যোতি শুধু যে দশ জনের ভয়েই প্রকাশু ঝগড়াটা যথাসাধ্য চাপিয়া যাইতেন তাহা নয়, পরস্পরকে তাহারা হিংসার সহিত কিছু পরিমাণ ভয়ও করিয়া চলিতেন। শাশুড়ী বিষ্ণুপ্রিয়া বাচিয়া থাকিতেই সুরেশ্বরীর বিবাহ হইয়াছিল, এবং তাহা শাশুড়ীর বিশেষ ইচ্ছাতেই হইয়াছিল । স্বরেশ্বরী দেখিতে স্বন্দরী ছিলেন না, রসনাও ছিল তাহার ক্ষুরধার। সেই জন্য অন্যান্য ভগিনীদের তুলনায় এবং সেকালের বাঙালীর ঘরের তুলনায় তাহার বিবাহ হইতে যথেষ্টই দেরি হইয়া গিয়াছিল। পনের বৎসরের মেয়ে অত বড় প্রতিপত্তিশালী ব্রাহ্মণের ঘরের বলিয়াই লোকে সহ করিত, অন্ত ঘর হইলে এত দিনে সমাজে মহা প্রলয় বাধিয়া যাইত। যাহাই হউক, স্বরেশ্বরীর মাত আহার-নিদ্রা ছাড়িবার উদ্যোগ করিতেছেন দেখিয়া পিতা শেষ চেষ্টা স্বরূপ দপনারায়ণের দরজায় গিয়া উপস্থিত হইলেন। উভয়েই মানী লোক, কেহ কাহারও কথা সহজে ঠেলিতে পারিবেন না ; কিন্তু তবু দপনারায়ণ বলিলেন, “বাড়ুজোমশায়, আমার ঐ প্রথম সন্তান, বয়সও বেশী নয়, একটি ছোটখাট সুন্দরী মেয়ে দেখে দেবারই সকলের ইচ্ছা ।” স্বরেশ্বরীর পিতা বলিলেন, “আমি কন্যার পিতা, তাই আজ আপনার দ্বারস্থ হয়েছি এবং আপনি আমাকে এত সহজে প্রত্যাখ্যান করতে পারছেন, নহ'লে এমন লোক এ তল্লাটে কে আছে যে আমি একবার ডাক দিলে মুখ ফেরাতে সাহস করে ? যাই হোক, রাণীজীর মতটা একবার নিন। তিনি যদি আমার মা স্বরেশ্বরীকে গ্ৰহণ না করেন, আমি আর দ্বিতীয় কথা বলব না ।” দর্পনারায়ণ অন্দরে গিয়া গৃহিণীর কাছে কথা পাড়িলেন। আগে-ভাগে তাঁহাকে সতর্ক করিবার জন্য বলিলেন, “দেখ, আমাদের অমন কন্দপের মত ছেলে, কিইবা তার বয়স, দেখে শুনে লক্ষ্মীঠাকরুণের মত বউ আমি তোমায় এনে দেব। : এ বিয়ের কথা তুমি কানে তুলে না । মেয়ে শুনেছি, পাচ জনের সামনে বার করবার মতই নয়। নইলে কি আর এ টাকার কুমীরের মেয়ের বিয়ে হয় না ?” গৃহিণী বলিলেন, “কিন্তু আমন ঘর যে আর মাথা খুড়লেও পাব না । যেদিন থেকে ইন্দির আমার কোলে এসেছে, সেইদিন থেকেই আমার ঐ ঘরের উপর নজর । তা এমনই অদেষ্ট, যে, ছেলে আমার বিয়ের যুগ্যি হবার আগেই ওদের সব ক’টা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। গিল্পীর এই ত কোলের মেয়ে, আর ত হবে না। এধরে বিয়ে দিতে হ’লে ঐ মেয়েকেই আমায় নিতে হবে, তা কালোই হোক অবি ফুচ্ছিতই হোক।” দপনারায়ণ দর্পভরে মাথা ঝাড়া দিয়া বলিলেন, “গিল্পী, তুমি কি এমনই হা-ঘরের মেয়ে না বউ যে বড়ঘরের মেয়ের লোভে তোমার জিভে জল গড়াচ্ছে ? পদ্মনারায়ণ চক্রবর্তীর ঘর স্পর্শমণি, যা ছোবে তাই সোনা হয়ে যাবে, ছোট বড় বিচার করা কি তোমার সাজে ? যাদের সাত স্কুল ফোপর', তারাই জাতে উঠবার জন্তে বড়ঘর খুঁজে বেড়ায়, তোমার কোন স্কুলে কি খুৎ আছে যে তুমি ঢাকা দেবার জন্তে সোনা দানার ঘর দেখছ? ছেলে ত তোমার শ্বশুরঘর করবে না, বউই করবে।” গৃহিণী ফাদি নথ নাড়া দিয়া বলিলেন, “তা হোক, আমল