পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লটারীর টিকিট ঐশিবপ্রসাদ মুস্তফী সব কথাতেই বডবাবু ধৰ্ম্মকে বলেন, না পোষায়, চাকরি ছেড়ে দাও । শিশিরকে আপিস করতে যেতে হয় শুমবাজার থেকে, এই পথটা সে প্রায়ই পায়ে হেঁটে যাবার চেষ্টা করে, অতটা পথ যেতে একটু দেরি হয়ষ্ট । তা ছাড়া মেয়েট একদিন কোথা থেকে কি থেয়ে এসে এমন কাণ্ড সুরু করলে যে শিশির তার পরের দিন আপিসে যেতে পারলে না । চারিদিকেই তখন কলেরা হচ্ছিল । কিন্তু এ সমস্ত কথা সকরুণভাবে বড়বাবুকে বলে কোন লাভই নেই, তার ঐ এক কথা, না পোষায়, চাকরি ছেড়ে দাওঁ । সে ক্ষমতা যে শিশিরের নেই, তাই ন রোজ এই অপমান সয়েও টিকে থাক! রোজকার মত সেদিনও সন্ধ্য ছ’টার সময় শিশির যপন ডালহৌসী স্কোয়ারে এসে দাড়াল, দেখলে কত লোক ট্রাম কিংবা বাস্ লক্ষ্য ক'রে দৌড়চ্ছে । সেদিন সকাল থেকেই শিশির স্বস্থ বোধ করছিল না, পাছে বাড়াবাড়ি হ'য়ে আপিস কামাই হয় তাই ভাতও থায় নি, তার ওপর সারা দিনের থটুনি, কাজেই সেই দুৰ্ব্বল দেহে ঠেটে যাওয়া সম্ভব হবে না বলে সেকেণ্ড ক্লাস ট্রামে উঠে পড়ল। এও তবু একটু সুখ । শরীরের কোন পরিশ্রম নেই, শুধু চুপচাপ বসে থাক, হয় বাইরের দিকে চেয়ে দেখ, কত অসংখ্য দোকান, বিচিত্র জনস্রোত, অস্তুত গোলমাল, নয় ত ট্রামের ভিতরে দেখ, কত লোকের কত রকম কথা--- সৰ্ব্বমুদ্ধ কেমন একটা অস্পষ্ট আবেশে সমস্ত মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ হ'য়ে থাকে, মন্দ লাগে না । বাড়ি এসে শিশির একেবারে ধপ ক’রে বিছানার ওপর গুয়ে পড়ে। মেয়েটা জুতোর ফিতে খুলতে থাকে, স্ত্রী পাশেই দাড়িয়ে হাওয়া করতে করতে জিজ্ঞাসা করে, এখন কেমন আছ ? এও তবু একটু মুখ ! শিশির উত্তর দেয়, ভাল । —তাহলে রাত্রে থাবে ত? যাই, ব্যবস্থা করিগে। সেই এক কথা। রায় আর খাওয়া আর আপিস যাওয়া। এই ভাবে একঘেয়ে জীবনটাকে আর কতদিন ব’য়ে বেড়াতে হবে কে জানে ! আপিলে হলধর বাবু বলছিলেন, লটারীর টিকিটু কিনতে। লটারীতে টাকা পাওয়ার ভাগ্য কি আমাদের ? টাকা পাবে সাহেবের খানসাম কিংবা রেঙ্গুনের কোন দপ্তরী। হলধর বাবু বলছিলেন, প্রথম পুরস্কার নাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা। চুলোয় যাক প্রথম পুরস্কার, যদি হাজার পাচেক টাকাও পাই, তাহলে সকলের আগে এই চাকরিট ছেড়ে দি । বড়বাবুর পিচুনি পেয়ে গেয়ে ত আর পারা যায় না। মনে কর ঘেদিন টাকাটা পেয়েছি। 'ন পোষায়, চাকুরি ছেড়ে দাও-এই দিলাম ছেড়ে আপনার চাকুরি । চাকুরির নিকুচি করেছে—আমাদের কি মনে করেন আপনি, চাকর না আর কিছু ? বড়বাবু ত অবাক । সেই শিশির, বলে কি ? ব্যস্ । তার পর ফাষ্ট ক্লাস ট্রামে চ'ড়ে বাড়ি আসা, কমলাকে খবর দেওয়া, তথনই বাজার থেকে ভাল মন্দ কিছু কিনে এনে রাত্রের জোগাড় করা ! তার পর একদিন কলকাতার বাস উঠিয়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়া, নইলে ও টাকায় চিরকাল ত চলবে না । ছেলেবেলায় শিশির একবার রূপনারাণপুর গিয়েছিল, সেকথা এখনও ওর বেশ মনে পড়ে। চারিদিকে বিস্তীর্ণ খোল মাঠ, মাঝে মাঝে শাল শিমুল দাড়িয়ে, তাদের ওপরে মুক্ত আকাশ--- সৰ্ব্বত্র প্রাণের একটা অবাধ সহজ বিস্তার। সেখানে নিজেদের একটা ছোট কুঁড়ে বানানো যাবে, কিছু জমি নিয়ে চাষবাস মুরু করে দিতে হবে। নিজেদের তৈরি তরিতরকারী, তাতে যেমন ভিটামিন তেমনি সস্তা। কয়েকটা ফুলের গাছ, কমলার ফুলের গাছের খুব সখ। শোবার ঘরের দরজার কাছে একটা টবে গোলাপগাছ লাগিয়েছিল, তা সে কিছুতেই বঁাচল না। ছেলবেলায় কমলার খুব পাখীরও সখ ছিল । ক্রমে সব হবে। প্রথমে এই চাকুরি না ছেড়ে দিলে আর বেঁচে মুখ নেই। একেবারে অমানুষ করে দিলে। এই ক’টা টাকা নইলে যে স্ত্রী পুত্র নিয়ে না খেতে পেয়ে মরে যাব,