পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কীৰ্ত্তিক করিলে আমাদের দেশেও নানাবিধ পুষ্টিকর পশুখাদ্য জন্মাইতে পারা যায়। কয়েক বৎসর পূৰ্ব্বে কাশিমবাজারের সরকারী রুষিক্ষেত্রে গিয়াছিলাম। সেখানে প্রচুর জোয়ারের গাছ জন্মিয়াছে দেখিলাম। মহারাজার নিকট শুনিলাম ঐ সকল গাছ বিচালীর মত শুকাইয়া পাল দিয়া রাখা হয় এবং শুকনা সময়ে উহা খাইয়াই খামারের গরু বাচে। ঢাকার সরকারী কৃষিক্ষেত্রেও জোয়ারের গাছ জন্মে। গাছগুলি কাটিয়া একটি গৰ্ত্তের মধ্যে জমা করা হয় এবং তাহার উপরে ঘাসের চাপড়া দিয়া গৰ্ত্তের মুখ ঢাকিয় দেওয়া হয়। পরে অনাবৃষ্টির সময় এই সংরক্ষিত জোয়ার গাছ উপাদেয় ও পুষ্টিকর পশুখাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয় । স্থানীয় ভাষায় এই সংরক্ষণপ্রণালীকে ‘সাইলেট্‌ ( ensilage ) করা বলে। ফরিদপুরের কৃষিক্ষেত্রে অবস্থানকালে শ্ৰীযুক্ত দেবেন্দ্রনাথ মিত্র আমাকে বলিয়াছিলেন যে ঐ অঞ্চলের অনেক জমি পদ্মার পলিমাটি হইতে উদ্ভূত, স্বতরাং শীত ও গ্রীষ্ম কালে সমান রস থাকে। একটু যত্ন করিলেই, যখন পাট ও ধানের ফসল উঠিয়া যায় তখন ভুট্ট, জেয়ার ও মাসকলাই প্রভৃতি নানাবিধ সব জী সহজেই উৎপন্ন হইতে পারে । তাহ হইলে আর পাটচাষের দেশে গৃহস্থ ও চাষীকে অসময়ের জন্য উচ্চমূল্যে বিচালী সংগ্ৰহ করিতে হইত না । ঢাকা ও কাশিমবাজারের ন্যায় প্রতি গ্রামে জোয়ার প্রভৃতি চাষের ব্যবস্থা অনায়াসেই হইতে পারে। পশ্চিম গোয়ালারা কি প্রণালীতে ভুট্টা ও জোয়ারের গাছগুলি ব্যবহার করে এবং খাদি প্রতিষ্ঠানে সোদপুরের গোশালাতেই বা কিরূপে এই প্রকারের গো-খাদ্যের সংস্থান করা হয়, তাহ পূর্ব প্রবন্ধে দেখাইয়াছি। বিলাতের গাজর, শালগম প্রভৃতির কথা পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। এই সকল সবজী বহুদিন পর্য্যন্ত সরস থাকে ; মৃতরাং শুকনা সময়ের জন্য অনায়াসেই সঞ্চিত করিয়া রাখা যাইতে পারে। আমরাও এই সকলের চাষ করিতে পারি। বাংলার মাটিতে সোনা ফলে, কিন্তু কুঁড়েমি ও অজ্ঞতার বশে বৎসরের অৰ্দ্ধেক দিন সেই মাটি নিফলা পড়িয়া থাকে। এই অপচয়ের পাপেই গো-জাতি ধ্বংসের পথে উঠিয়াছে, দুধের বাজারে আগুন লাগিয়াছে এবং আমাদের বংশধরগণ দুগ্ধ অভাবে দিনদিন পর্ণ ও রুগ্ন হইয়া অবশেষে অকালমৃত্যু বরণ করিতেছে। গোপালন ও অল্পসমস্যা 속 প্রসঙ্গক্রমে শৈশবকালের কথা মনে পড়িয়া গেল।* তখন দুগ্ধবতী গাভীর সেবা প্রত্যেক হিন্দুর পক্ষে ধৰ্ম্মকৰ্ম্মের অঙ্গস্বরূপ ছিল। আমাদের বাড়িতে নানা প্রকারের গাভী ছিল । আমার বেশ মনে আছে আমার মা স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়৷ এই সকল গাভীর আহারের তত্ত্বাবধান করিতেন ; ,ামাদের বাড়ির এই নিয়ম ছিল যে শিশুরা অন্ততঃ পাচ বৎসর বয়স পৰ্য্যন্ত দুগ্ধাহারী থাকিবে। এমন কি সম্পন্ন গৃহস্বামী ও গৃহিণীর প্রত্যুষে গোশাল পরিষ্কার করিতে দ্বিধা বোধ করিতেন না । গোয়াল হইতে যে আবর্জন ঝাটাইয়া বাহির করা হইত তাহাতে উত্তম সারের কাজ চলিত । চালের খুদ ও কুঁড়োর সহিত কলাগাছ কিংবা লাউয়ের টুকর সিদ্ধ করিয়া এক রকম ফ্যানসা ভাত প্রস্তুত হইত, উহা গাভীর দৈনন্দিন খাদ্য ছিল। গ্রাম্য পঞ্চায়েৎ গোচারণের জন্য পৃথক মাঠ নিৰ্দ্ধারিত করিয়া দিতেন, সেখানে যথেচ্ছ বিচরণ করিয়া গাভীগণ পুষ্ট হইত। ধানের ফসল উঠিয়া গেলে প্রচুর বিচালী পালা দিয়া রাখা হইত। শীতকালে মাঠে যখন ঘাস থাকিত না, তখন এই সঞ্চিত বিচালী কাজে লাগিত। তিসি ও সরিষার খইল বিচালীর সহিত মিশাইয়া খাওয়াইলেও গাভীর দুধের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাইতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই খইলও আর গরুর ভোগে আসে না। দেশের কতক থইল পানের বরজে উত্তম সাররূপে ব্যবহৃত হয়। এতদ্ব্যতীত বিদেশেও কম রপ্তানী হয় না। কলিকাতার সন্নিকটে গৌরীপুর অঞ্চলে যে-সকল তেলের কল আছে সেখান হইতে প্রচুর তিসির খইল জাহাজ ভরিয়া বিদেশে যায়—সেখানকার পশুদের খোরাক জোগাইতে । আমাদের হাতে গোজাতির যেখানে এত দুৰ্গতি চলিতেছে, ঠিক তাহারই পার্থে পশ্চিম গোয়ালারা কিরূপে গো-সেবায় তৎপরতা দেখাইতেছে এবং দুধের ব্যবসায়ে একচেটিয়া অধিকার ও সাফল্য লাভ করিতেছে তাহার আভাস পূর্ব প্রবন্ধে দিয়াছি। তাহাদের ও খাদি প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্তে বোঝা যায় যে চেষ্টা করিলে গোচারণভূমির অভাবে গোয়ালে বাধা গরুর উপযুক্ত খাদ্যের অভাব হয় না, এবং ছন্থেরও অপ্রাচুর্ঘ্য হয় না। • attata wiłłoto (“Life & Experiences” &c., vol. I) eae-a পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য । 峰