পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অগ্রহণয়ণ জলতরঙ্গ SN9 శ్రీ তার পর হঠাৎ কি হইয়া গেল, হাওয়া ছিল না, হঠাৎ কোথা হইতে এক ঝলক হাওয়া বহিয়া গেল, খালের জল ছল ছল করিয়া নাচিয়া উঠিল, বাছুড়ের ঝণক কালো ছায় ফেলিয়া মাথার উপর উড়িতে লাগিল। চমক ভাঙিয়া ত্ৰিলোচন সেই মূহুর্ভে শুনিল—হু-হু-হু-হু—অনেক দূরের বিরামবিহীন একটা একটানা শব্দ। ঘুমের দেশে কোথায় বিপ্লব বাধিয়া গেছে, শত সহস্ৰে মিলিয়া মাথা খোড়াখুড়ি করিতেছে—বাতাসে চাদের আলোর ক্ষীণতম করুণতম কান্না। গ্রহ-গ্ৰহাস্তরের কোটি কোটি ক্রোশ পার হইয়া আসা কান্না,— নিশীথ রাত্রি নিরালা পৃথিবী মেঘহীন আকাশ একসঙ্গে গল। মিলাইয়া কঁদিতে বসিয়াছে—মৃত্যুপুরীর কঠিন কালে কপাটের কাক হইতে কান্না অনেক কষ্টে গলিয়া গলিয়া যেন বাহির হইয়া আসিতেছে।--যে রাত্রে চাদ বড় উজ্জল হইয়া মাথায় জাগিয়া থাকে, কিছুতে কোন রকমে চোখের পাতা এক হইতে চায় না—অনন্ত-আয়তন সৌরজগতের মধ্যে ক্লাস্ত শ্লথ চরণ নিঃসঙ্গ পৃথিবীর একটি মাত্র অধিবাসী--সেই ইহা শুনিতে পায় কখনও কখনও। ত্রিলোচন শুনিতে লাগিল ; সমস্ত ইন্দ্রিয় উন্মুখ করিয়া অর্থ বুঝিবার চেষ্টা করিল,-মাঠের পারে, গাঙের ধারে কারা আসিয়া জমিয়াছে, কেউ করুশ শাস্ত চোখে তাকাইয়া থাকে, কেউ মাথা নাড়িয়া ইসারা করে, কেউ হাততালি দেয়, কেউ বা অস্পষ্ট ক্ষীণ কণ্ঠে অথচ প্রাণপণবলে ডাকাডাকি করে— atal—al-ol-coil-6-8-s— —যাই । স্বপ্নাচ্ছল্পের মত ত্রিলোচন ছুটিল। ছুটিয়া নদীতীরে নুতন বাধের ধারে আসিল । জোয়ার আসিয়াছে। ভরা পূর্ণিমার প্রমত্তবেগ জোয়ার। জলতরঙ্গ অধীর আবেগে গধের গায়ে মাথা ভাঙিতেছে। জলভূমি হইতে দূরে নিস্তব্ধ নদীকূলে ভয় পাইয়া তারা খালের পথে গ্রামে গিয়া ঢুকিতে চায়। কঠিন মাটি পথ দিবে না। ছুটিয়া আসিয়া লাফাইয়া এক-এক বার বাধ পার হইতে চায়, আছাড় খাইয়া পড়িয়া যায় ; উচু বাঁধ কিছুতে পার হওয়া যায় না। বাধের একেবারে উপরে গিয়া ত্রিলোচন দাড়াইল । থালার মত চাদ পশ্চিমে ঢলিয়াছে। অনেক বার সে ইতস্তত করিল, অনেকক্ষণ বঁাধের এপার-ওপার ঘুরিয়া বেড়াইল । তার পর এদিক-ওদিক চাহিয় একটি মাটির চাই তুলিয়া ছুড়িয়া ফেলিল। ফিসফিস্ করিয়া কহিল—আয়, গুড়ি মেরে আয়—ওরে হারামজাদার, সাবধান ---বাধ ভাঙে না যেন। পারলি নে ? অায়—আয়— আর একটা—তার পর আবার আরও—আরও– বিশত্ৰিশটা চাই ফেলিয়া দিতে আর তাহাকে কষ্ট করিতে হইল না, জলধারা পথ পাইয়া গেল। অসীম শ্রমে এতদিন ধরিয়া এত লোকে মিলিয়া বাধ দিয়াছে, বাঁধ ভাঙিল, গোটা অঞ্চলটা জুড়িয়া মানুষের আশা ভাঙিল, ধান, বাড়ি ঘর দোরের সমস্ত স্বপ্ন জলস্রোতে নিঃশেষ হইয়া গেল। তার পর সে এক অদ্ভূত ব্যাপার—নন্দ আসিল, পটম্বরী আসিল, হারাণ তিতু টুনি সকলে আসিল, অনন্ত কাল ধরিয়া তিস্থ-টুনির মত যত থোকা-খুকু নদীর জলে গিয়া রহিয়াছে তিমুর হাত ধরাধরি করিয়া শ্মশানঘাট হইতে তারাও সব উঠিয়া আসিল । অতল জলতল-পাতালপুরী...সাপের মাথার মাণিক চুরি গিয়াছে, তাই আলো নাই...হাজার শিশু আসিয়া হাজার হাজার বাহু দিয়া স্নেহ-বুভূক্ষু বুড়াকে চাপিয়া ধরিয়াছে, কেহ ধরিয়াছে গলা, কেহ হাত, কেহ পা-জলতরঙ্গ নাগপাশের মত বেড়িয়া ধরিয়াছে । —ওরে হারামজাদার, ছাড় ছাড়—লাগে--- কে কার কথা শোনে ? বিপুল আনন্দ-বন্যায় জলোচ্ছ্বাসে কুটার মত তার বুড়াকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।