পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহারণ রামভাউয়ের মেয়ে S్చgNలి করিতে পারিল না । কাছে আসিয়া ধোওঁী তাহার শাদা দাতগুলি বাহির করিয়া হাসিয়া বলিল, “দত্ত মামা, আজ তোমার এত দেরি কেন ?" রামভাউয়ের মেয়ে ছাড়া ওরকম মিষ্টি হাসি সে গায়ে আর কোনও মেয়ে ছিল না—ব্রাহ্মণের মধ্যেও নয় । তার কিছু দিন পরে এক দিন দত্তোব রামভাউকে বলিল, “রামভাউ, এবার মেয়ের একটা পাটবিয়ের যোগাড় কর, ওভাবে ক'দিন আর থাকবে ?” রামভাউ গম্ভীর হইয়া বলিল, “ভাই, সেবার তোমার কথা না-গুনে তাড়াহুড়া করলুম, ফলট যা হ’ল দেখলে। এবার আর তাড়াতাড়ি করছি নে ৷” বর্ষ গেল, শীত আসিল । তখন শীতের মাসগুলি প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে। চাষার শেষ ফসল চিনেবাদাম খুঁটিয়া খুটিয়া তুলিতেছে। রামভাউয়েরও জোয়ারী ও ভুট্টা উঠিয়া গিয়া একটি চিনেবাদামের ক্ষেত মাত্র বাকী ছিল। তাহা তুলিবার দুই দিন পূৰ্ব্বে রামভাউ পাড়ার বাপুকে লষ্টয়া এক ভিন্ন গায়ের বাজারে সওদা লইয়া গেল। সেদিন সকালে দত্তোবার স্ত্রী মোষ দোহাইয়া, ওপাড়ায় রোজের দুধ দিয়া ফিরিয়া আসিয়াছে, দত্তোবা হরিকে লইয় কারখানা-ঘরে একটা লাঙ্গলের ফাল তাতাইয়া তার মাথায় ঘা মারিতেছে, এমন সময় দেখিল, ঘরের পাশ দিয়া রামভাউ চলিয়াছে, পিছনে বাপু । রামভাউয়ের মাথার বোঝাটা দেখিয়া মনে হইল, বেশ ভারী। রামভাউয়ের মুখটা বিষন্ন। সে বলিল, “দত্তোবা, এবার ব্যবসায়ে বড় মন্দা পড়েছে, এখন লোহারদের করে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।” তার পর বলিল, “আমি পাঁচ-সাত দিনের জন্য চললাম, তুমি আমার বাড়িঘর দেখবে।” ধোওঁী ভোরবেলা মজুরীনদের লইয়া ক্ষেতে কাজ করিতে যায়। সেদিন রামভাউ বাহিরে যুইবে বলিয়া পাইতে দেরি হইল। রামভাউ চলিয়া যাইবার কিছু ক্ষণ পরেই দেখা গেল সে ভাকুরীর পুটলী লইয়৷ মাঠে চলিয়াছে। দইলি দুপুরবেলা রামভাউয়ের বাড়িতে গিয়া দেখিল, কুণ্ডুমাস ঘড়াতে জল লইয়া রামভাউয়ের কারখান-ঘরটা নিকাইতেছে। বাড়ি ফিরিয়া দত্তোবা তাহার বেগুন-ক্ষেতের কাজে লাগিল। ঘাস উঠাইয়া বেগুনগাছের গোড়া খুড়িয়া দিতে লাগিল। তাহার স্ত্রী ঝাক ঝাকা ছাই আনিয়া ক্ষেতের একধারে ফেলিতেছিল। পাশের রাস্তার উপর পাড়ার ছোট ছেলেরা ডাণ্ডাগুলি খেলিতেছিল। দত্তোবার বাড়ির পাশে, হরিবার ঘরের সামনে, হরিবার মেয়ে মঞ্জী আর দত্তোবার দৌহিত্রী হাউসী গান গাহিতে গাহিতে “ফুগড়ী” নাচ নাচিতেছিল। দত্তোবা সন্ধ্যা পৰ্য্যস্ত ক্ষেতে কাজ করিল। যখন দিন প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে তখন তাহার বাড়ির পাশের পথ দিয়া চলিতে চলিতে ও-পাড়ার নারায়ণ ভটঙ্গী বলিল, “কি হে দত্তোব, এবার তোমার বেগুন-ক্ষেতটাই দেখছি সবার সেরা হবে।” দত্তোবা মুখে বলিল, “বামুনঠাকুর, তোমার কৃপা ।” কিন্তু মনে মনে ভাবিল, নারাণ ভটের দৃষ্টিট বড় সুবিধার নয়। ক্ষেতের ভাগ্যে কি আছে কে জানে ? সূৰ্য্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মাঠ হইতে মোষের দল ফিরিয়া আসিতে লাগিল। গায়ের যে-সকল মেয়ে-পুরুষ মাঠে কাজ করিতে গিয়াছিল তাহারা দলে দলে ফিরিতে লাগিল । যখন সন্ধ্যার অন্ধকার কতকটা ঘনাইয়া আসিয়াছে তখন দত্তোব দেখিল কুলওয়াড়ীদের চিকুবাঈ এক দল মেয়ে সঙ্গে লইয়া ফিরিতেছে। কাজ শেষ করিয়া মাঠ হইতে ঘরে ফিরিবার সময় চিকু নানা রকম উপকথা বলে ; মেয়েরা বfাক-মাথায় তাহার সঙ্গে সঙ্গে তাহ শুনিতে শুনিতে চলে। কোন কোন গল্পে এমন হাসির কথা থাকে যে মেয়ের দল হাসিয়া ভাঙিয়া পড়ে। তাই চিকু ও তাহার দলের মজুরীনদের ফিরিতে দেরি হয়। তাহারা ফিরিলে মনে করিতে হইবে যে মাঠে জার কেহ নাই। তার কিছু ক্ষণ পরে, সন্ধ্যার অন্ধকার আরও কতকটা ঘনীভূত হইলে, হঠাৎ মাঠের দিক হইতে একটা অস্পষ্ট কান্নার শব্দ শোনা গেল। দত্তোব ইদারার ধারে হাতপা ধুইতেছিল, সে কান খাড়া করিয়া দাড়াইল। আবার শুনিল সে-কান্না নারী-কণ্ঠের। কে যেন কান্নাটাকে সবলে চাপিয়া রাখিতেছে। দত্তোবা তাহার ক্ষেতের কাচিটা ধুইয়া পাশে রাখিয়াছিল, তাহা হাতে লইয়া মাঠের দিকে ছুটিল।