পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

=вв কিছুদূর পর্য্যস্ত কাহাকেও দেখিতে পাইল না। দত্তোব তখন সোজা না গিয় ডান হাতের পথ ধরিয়া চলিল। সেপথে গ্রামের মধ্যপাড়ায় যাইতে হয়। সে-পথে কতক অগ্রসর হইয়া দেখিল, দামু পাটিলের ছেলে বাবু মাঠ হইতে বেগে ছুটি চলিয়াছে। বাৰু গায়ের এক জন গুঞ্জ ছেলে। দত্তোব অহাকে ডাকিয় বলিল, “কি রে বাবিয়া?” বাৰু উত্তর না দিয়ই চলিতে লাগিল। দত্তোব আগাইয় গিয় তাহার হাত ধরিতে গেলে বাবু পাশ কাটাইয়া যাইতে চাহিল। এমন সময় দত্তোব৷ পিছন হইতে একটা কোলাহলের মত শুনিল। দত্তোব বাবুর হাত শক্ত করিয়া ধরিয়া বলিল, “বল বেটার ছেলে, কার মাথায় মেরেছিল।” বাৰু হাত ছিনাইতে চেষ্টা করিতে লাগিল । না পারিয়া হঠাৎ দত্তোবার কোমরে ডান পা দিয়া অতি জোরে এক লাথি মারিল । ইহাতে দত্তোব ক্রুদ্ধ হইয়া দুই হাতে তাহাকে সাপটাইয়া ধরিল এবং সঙ্গে সঙ্গে চীৎকার করিয়া পাড়ার লোককে ডাকল। দুই জনে ধন্তাধস্তি চলিল । দেখিতে দেখিতে পাড়ার হরিবা, দত্তোবার মেয়ের জামাই কৃষ্ণ, আর বাপুর ছোট ভাই নানা ছুটিয়া আসিল । সঙ্গে সঙ্গে মাঠের অপর দিক হইতে কলরব করিতে করিতে আসিল রামভাউয়ের ক্ষেতের মজুরীন ভাগু বাঈ আর রামভাউয়ের মেয়ে ধোওঁী। দত্তোবা ধোওঁীকে প্রথম তাহার গলার শব্দে, তার পর চেহারায় চিনিল। তাহার মাথায় ঘোমটা নাই, চুল এলোমেলো । সে পাগলের মত চেচাইয়া বলিল, “ঐ পাটুলা।” ভাগু তীব্র কণ্ঠে বাবু পাটিলকে গালি দিতে লাগিল। বলিল, “আজ রামভাউ থাকলে তোকে কেটে কুটি ফুটি করত।” দত্তোবা বলিল, “কি হয়েছে, ধোওঁ বল।” তত ক্ষণে হরিব ও নানা আসিয়া বাবুকে ধরিয়াছে, দত্তোব উঠিয়া দাড়াইয়াছে। ধোওঁী ক্ষিপ্ত স্বরে বলিল, “সন্ধ্যা হ’লে কাজ শেষ করে দেখি, আমার ঝাকাটা নেই। ভাগুকে ক্ষেতের পূর্ব দিকে পাঠিয়ে আমি পশ্চিম দিকে গেলাম। মাঠের কোণে গিয়ে দেখি জোয়ারীয় শুকনা ডাটার উপর ঝণকাটা রেখে পাটুলা তার ওপর বসে আছে। তখন মাঠ খালি হয়ে গেছিল। আমাকে দেখে পাটুলা হাস্তে লাগল। আমি বললাম, ‘ওরে পোড়ার মুখে, তুই আমার বাকাতে প্রৰণসী ১৩৪২ বসেছিস কেন ? ও বললে, “তুই এখানে আস্বি বলে।’ আমি রেগে বললাম, "আমার ঝণক দে।” সে তখন হঠাৎ এসে আমায় আক্রমণ করলে,”—বলিতে বলিতে ধোওঁী উন্মাদের মত পাটিলের দিকে চলিল । পাটিল ধোওঁীকে অশ্লীল গালি দিয়া তাহার দিকে পা তুলিল। দত্তোবার রক্ত গরম হইয়া উঠিল। সে কৃষ্ণাকে বলিল, “কৃষ্ণ, শীগগির ফটুকাটা নিয়ে আয়। কৃষ্ণ ক্ষেতের বেড়া হইতে ফট্‌কাটা ( ক্যাক্টাস) আনিতে গেল । তথন সকলে ধরিয়া বাবু পাটিলকে মাটিতে চিৎ করিয়া ফেলিল। নানু হাত আর হরিবা পা চাপিয়া ধরিল, দত্তোব বুকের উপরে বসিয়া বলিল, “আন ফট্‌কাটা।” কৃষ্ণ ফটুকাটা আনিয়া দত্তোবার হাতে দিল। দত্তোব কৃষ্ণাকে বলিল, “তুই মাথাটা ধর, ধেন নড়তে না পারে।” কৃষ্ণ মাথা চাপিয়া ধরিল। তখন দত্তোব ফট্‌কাটা দ্বারা প্রথম বাবুর ডান চোখ তার পর বা চোখ অন্ধ করিয়া দিল । বাবু পাটিল ষাড়ের মত গর্জন করিয়া উঠিল। দত্তোব বলিল,—“ছাড়, " তাহারা ছাড়িয়া দিলে সে রক্তে গড়াগড়ি খাইয়া আৰ্ত্তনাদ করিতে লাগিল। দত্তোব ধোওঁীকে হাতে ধরিয়া তাহার বাড়িতে লইয়৷ গেল। অন্যেরাও সঙ্গে সঙ্গে চলিল। তাহারা বাড়ি ফিরিবার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের লোক আসিয়া সোরগোল করিতে আরম্ভ করিল। পরদিন দত্তোব, তাহার তিন জন সঙ্গী, এবং পাড়ার আরও পাঁচ জন লোক পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হইল। বাবু পাটিলকে হাসপাতালে দেওয়া হইল। দত্তোব ও তাহার সঙ্গীর নিজেদের দোষ স্বীকার করাতে অন্যেরা খালাস পাইল । তাহাদের পাঁচ বৎসর করিয়া কয়েদ হইল। বাবু অনাথালয়ে গেল । রামভাউ তাহার ঘটিবাটি, অবশেষে ক্ষেত-পাথর বিক্রী করিয়া উকিল লাগাইল । দত্তোবাদের জেল হইতে বঁাচাইবার প্রাণপণ চেষ্টা করিল। তাহাদের পক্ষের উকিলেরা হাকিমকে অনেক বুঝাইল, অনেক কথা বলিল। ফলে শুধু পাঁচ জন বাজে লোক মুক্তি পাইল । কিন্তু দত্তোব ঐখনও বুঝিতে পারে না, হরিবা কৃষ্ণ আর নানার কেন কয়েদ হইল। তাহারা ত নিজে কিছু