পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SO মাঝে মাঝে ঠাট্টা করিয়া বলিত--তুমি কি সেই সবিতা ? সবিতাও ঘুরাইয়া জিজ্ঞাসা করিত—তোমার কি মনে হয় ? —রাত্রে মনে হয় সেই সবিতাই বটে। দিনের আলোয় চিনতে পারি না। এত লজ্জা কোথায় পেলে ? এত শাস্তই বা হ’লে কি ক’রে ? সবিতা রাগ করিত না, হাসিত। বলিত—সেই দণ্ডী রাজার গল্প শোন নি ? রাজা উৰ্ব্বশীকে পেয়েছিল,- -দিনে অশ্বিনী, রাত্রে উৰ্ব্বশী। আমরা সবাই তাই। দিনে বইতে হয় বহু লোকের বোঝ, রাত্রে নিজেকে ফিরে পাই। বুঝলে ? কথাটা তপোনাথের মনে লাগিত। একটু ভাবিয়া বলিত—তাই হবে। কিন্তু আমার দিন চলে কি ক’রে ? --তোমার আবার ভাবনা ? তোমার কত বন্ধুবান্ধব, কত রকমের আমোদ-প্রমোদ, খেলাধুলো। তোমার দিন ত হাওয়ায় চলে যাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া তপোনাথ বলিত—তাই বা চলে যায় কই ? এই বিদেশে কোথায় বা পাই বন্ধুবান্ধব, কোথায় বা পাই আমোদ-প্রমোদ। আবার তখনই গল নামাইয়া বলিত –কিন্তু তাতেও বোধ হয় দিন কাটুতো না সবিতা । তোমার সঙ্গ নইলে এক দণ্ডও আমার কাটবে না। এ যে কি হয়েছে. তাহার কাকুতিতে সবিতার মন বোধ হয় চঞ্চল হইয় উঠিল। কিন্তু তখনই বুড়ীর মত গম্ভীর হইয়া বলিল— দেখ, গেরস্তর ঘরে বউ নিয়ে অত মাতামাতি করতে নেই। লোকে নিন্দে করে। এই যে যখন-তখন তুমি আমায় ডাক, একবার ঘরে পেলে আর ছাড়তে চাও না, এতে আমার যে কি লজ্জা করে সে আর তোমায় কি বলব ? এমন হয়েছে যে, তুমি বাড়ি এলেই মা তাড়াতাড়ি আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সবিতা অপাঙ্গে চাহিয়া লজ্জিতভাবে হাসিল । —আমার এত লজ্জা করে ! তপোনাথও হাসে । বলে-সেই ত ভাল। লজ্জাও করুক, তুমিও থাক। তোমার লজ্জিত মুখখানি দেখতে আরও ভাল লাগে। কি এত কাজ যে দিনরাত্তির মায়ের পিছু পিছু ঘোরো ? প্রবাসী $\రి8R চোখ নামাইয়া সবিতা বলিল—কিছু কাজ নেই। তবু ঘুরি, যদি একটা মেলে। —কিছু মেলে ? —মাঝে মাঝে । অতি সামান্ত । —আজ পাহাড়ের দিকে বেড়াতে যাব ভাবছি। যাবে ? তাহ’লে মায়ের কাছে ছুটি চেয়ে নিই তোমার জন্যে। সবিতা তাড়াতাড়ি বলিল—না, না, আজ না । আজ বিকেলে মায়ের কাছে একটা নতুন রান্না শিখতে হবে। তপোনাথ ধীরে ধীরে তাহার হাত ছাড়িয়া দিল । মনে মনে সে দুঃখিত হইল। কিন্তু মুখে কিছু বলিল না। ধীরে ধীরে বাহির হইয়া আসিল । তাহার ব্যথিত মুখের দিকে চাহিয়া সবিতার বুক ফাটিয়া যাইত। তবু একটা সাস্বনার কথাও বলিতে পারিত না । শাশুড়ীকে সে ভয় করে, ভয় করে লোকনিন্দাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ধীরে ধীরে শাশুড়ীর পিছনে আসিয়া দাড়াইত, তিনি একবার পিছনে চাহিয়া আবার নিজের কাজে মন দিতেন। কোনো দিন একটা ফরমাস করিতেন, কোনো দিন করিতেন না। কয়দিন হইতেই তপোনাথের জননীর শরীর খুংখুং করিতেছিল। কিন্তু সে কথা চাপিয়া রাখিয়াই সমস্ত কাজ করিয়া যাইতেছিলেন। আজও করিতেন, কিন্তু সবিতা আজ আর র্তাহাকে কিছুতেই রান্নাঘরে ঢুকিতে দিল না। মা প্রথমে রান্না করিবার জন্য অনেক জেদাজেদি করিলেন। অবশেষে হার মানিয়া হাসিয়া রান্নাঘরের বাহিরের বারান্দায় বসিয়া একসঙ্গে রৌদ্রসেবন ও গৃহস্থালীর তদারক করিতে লাগিলেন । সবিতা কোমরে আঁচল জড়াইয়াছে। অবগুণ্ঠনের পাশ দিয়া কালো এলো চুল পিঠের উপর লুটাইতেছে। ব্যস্ততার আর সীমা নাই। দেখিতে দেখিতে শাশুড়ীর চোখ সজল হইয়া উঠিল। বন্ধু-নিৰ্ব্বাচনে তাহার ভুল হয় নাই। সবিতা ঘর-গৃহস্থালী রাথিতে পরিবে । তাহার কাজ করিবার ব্যবস্থা আছে, হিসাবজ্ঞান আছে, নিষ্ঠা আছে । জীবনে প্রথম স্বামী-সেবার নিরঙ্কুশ অধিকার লাভ করিয়া সবিতারও যেন আর মাটিতে পাপড়িতেছিল না। প্রত্যেকটি দ্রব্য নিজের হাতে রাধিয়া পরিবেশন করিতে পাইবে এই