পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RA8 প্রবাসী SN○8ミ. হইবে । আই. এ. পরীক্ষায় উচ্চস্থান লাভ করিয়া স্কলারশিপ পাইতে হইবে। স্কলারশিপ পাইয়াছিল বলিয়াইত সে পড়িতে পারিতেছে। বারান্দায় ও ছাদে ঘুরিয়া উমা লজিকের নোট মুখস্থ করে। পাশের বাড়ির রান্নাঘরে আগুন পড়ে। উত্তরের জানালা বন্ধ করিয়া দিতে হয়। চাকর যদু একতলায় উনানে আগুন দেয়, ছাদ ধোয়াতে ভরিয়া ওঠে। দরজার পর্দা ফেলিয়া উমা তাহার ঘরে প্রবেশ করে। এই যে পর্দা পড়ে, সারাদিন আর পর্দা ওঠে না ; গভীর রাতে শোবার আগে সে পর্দা তোলে । লজিকের নোট মুখস্থ শেষ করিয়া অঙ্কশাস্ত্র চর্চার পূৰ্ব্বে একবার চা খাওয়ার তদারকে যাইতে হয়। স্বর্ণময়ীর শরীর ভাল নয়, সর্দি হঠয়াছে, ডাক্তার সকালে উঠিতে বারণ করিয়াছেন। রঘু ঠিকমত চা তৈরি করিতে পারে না। চন্দ্রাকে একবার ডাকিলে ওঠে না, ঠেলিয়া তুলিতে হয়। সকলে ঠিক সময় না উঠিলে, ঠিক সময়ে সকালে চা না থাইলে, সমস্ত দিনের কাজ বিশৃঙ্খল হইয়া যায়। হেমবাবুর ঔষধ ও পথ্য সম্বন্ধে শীলার কিছুই মনে থাকে না, কিন্তু পিতাকে সেবা করিবার উৎসাহ তাহার সর্বাপেক্ষা অধিক । উমাকে গিয়া ঔষধ খাওয়াইতে হয়। চা খাইবার টেবিলেও তাহার উপস্থিতি প্রয়োজন। হেমবাবুর বিশেষ ইচ্ছা সকল পুত্রকন্য র্তাহার সহিত একসঙ্গে চা খায় । পিতার এ ইচ্ছা উমা যথাসম্ভব পালন করিতে চেষ্টা করে। তাড়াতাড়ি সকলকে চা খাওয়াইয়া রঘুকে বাজারে পাঠাইতে হয়। তার পর উমা নিজ ঘরে আসিয়া অঙ্কশাস্ত্রে মনোনিবেশ করে । নিৰ্ম্মল নীলাকাশ প্রভাতের আলোয় ভরিয়া ওঠে, আমগাছের পাতাগুলি ঝিকমিক্‌ করে, ছোট ঘর তাতিয়া ওঠে। ঘড়ির কাঁটাগুলি উদ্ধশ্বাসে ছুটিয়া চলে। সকালে বেশী ক্ষণ পড়া হয় না। কলেজের গাড়ী দশটার আগেই আসে। তাড়াতাড়ি স্নান করিতে যাইতে হয়। সকল রায় হইয় ওঠে না। উমা অতি অল্প আহার করে । এই অল্পাহার লইয়া স্বর্ণময়ী প্রথমে বকবকি করিতেন, এখন হাল চাড়িয়া দিয়াছেন। চন্দ্রা কিন্তু প্রতিবাদ করিতে ভোলে ন, দিদি আজ কিছু খেলে না মা। হেমবাবু বলেন, মা, একটু দ্বধ খেয়ে যা । উমা বলে, দুধ খেলে আমার গা ধিন ঘিন করে বাবা, আমি দুই দিয়ে খাচ্ছি। কলেজের গাড়ী অনেক বাড়ি ঘুরিয়া যায়, যেন কলিকাতা শহরে চর্কিপাক খায়, বেশী খাইয়া গেলে গাড়ীতে উমার গা-বমি করে । কলেজের ঘণ্টাগুলিতে উমার যেন নিশ্বাস ফেলিবার সময় থাকে না। লেকচার শোন, নোট টোকা, লাইব্রেরীতে পুস্তকের সন্ধান করা, ছাত্রী-জীবনের কঠোর জ্ঞান-সাধনা। মাঝে মাঝে সে হাপাইয়া ওঠে, ক্লাস্তি লাগে। ছুটি পাইলে উম অমলাদিদির ঘরে চলিয়া যায়। অমলাদিদিকে তাহার বড় ভাল লাগে। . কলিকাতার বহু পল্লী প্রদক্ষিণ করিয়া অপরাহ্লে যখন সে বাড়ি ফেরে, অতি শ্রাস্ত, প্রায়ই মাথা ধরে। কিন্তু থাইতে ইচ্ছা করে না। তাড়াতাড়ি চা খাইয়া সে নিজের ছোট ঘরে আশ্রয় লয়, বিছানায় এলাইয় গুইয়া পড়ে। কাহারও সহিত কথা কহিতে বিরক্তি লাগে। মাথা দপ দপ করে। প্রফেসারের বক্তৃতা, অমলাদিদির গল্প-হস্ত, মায়ের বকুনী, নানা কথা মাথায় ঘুরিয়া বেড়ায়। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনাইয়া আসে, জানালা দিয়া তারা দেখা যায়। ধীরে উমার মাথাধরা সারিয়া যায়, শরীর খুব হাস্কা বোধ হয়, থিদেও পায়। পর্দা সরাইয়া সে দেখে, অরুণ ছাদে ঘুরিয়া বেড়াইতেছে কি না। সন্ধ্যার সময় অরুণ প্রায় প্রতিদিনই আসে। গত অমুখের পর হইতে সে যেমন রোগা তেমনি চঞ্চল হইয়াছে। পূৰ্ব্বে সে হেমবাবু বা স্বর্ণময়ীর সহিত বহু ক্ষণ স্থির হইয়৷ বসিয়া গল্প করিত। এখন সে চঞ্চলভাবে এঘর-ওঘর ঘুরিয়া বেড়ায়, অধিক ক্ষণ থাকে না, মাঝে মাঝে ছাদে ঘুরিয়া যায়, দেখিয়া যায় উমা তাহার ডেন’ হইতে বাহির হইল কি না। বেচারা অরুণ ! ছাদে অরুণের পদশব্দ শুনিলেই উমা ঘর হইতে বাহির क्ष्प्ल I —হালো অরুণ, গুড, ইভনিং। অরুণ স্নান হাসে। উমার এই ক্লান্তকরুণ মুখখানি দেখিয়া তাহার বুকের রক্ত দুলিয় ওঠে। সে অৰ্দ্ধকূট স্বরে কি বলে, উমা বুঝিয়া উঠিতে পারে না। —কি, চা খাবে ?