পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃষ্ণ স্ত্রীরামপদ মুখোপাধ্যায় শ্রাবণ মাসের সকাল । শেষরাত্রি হইতে বৃষ্টি নামিয়াছে। আকাশের পানে চাহিয়া মনে হয়, দিন-কয়েক ধরিয়া এই বর্ষণের বিরাম হইবে না। পাড়াগার রাস্ত ; গ্রীষ্মে যেখানে ছিল ইটুভোর ধূলা, বর্ষায় সেখানে জমিয়াছে পা-পিছলানো কাদা। যে-কয় জন এই দারুশ দুৰ্য্যোগে কাজের দায়ে পথে বাহির হইয়াছে, অকরুণ দেবতার উদ্দেশে তাহারা উচ্চকণ্ঠেই শাপাস্ত করিতেছে। কিন্তু খড়ে ঘরের দাওয়ায় বসিয়া হরিশ ঘোষ যে-কোলাহল জমাইয়াছে তাহার স্বরে বৃষ্টির শব্দ, মেঘের ডাক ও পথচারীর মন্তব্য ডুবিয়া গিয়াছে। হরিশের অভিযোগ অনেক । এক দফা দেবতার উদ্দেশে, এক দফা মানুষের আর এক দফা অদৃষ্টের বিরুদ্ধে। মাটির দেওয়াল, খড়ের চালা বছর কতক পূর্বের ছাওয়া। দুখানি মাত্র ঘর ; ঘরের কোলে দাওয়া। দাওয়ার খানিকট ধ্বসিয়া উঠানে গিয়া মিশিয়াছে। জীৰ্ণ চালার উপরেও দেবতার কোপট যেন বেশী। কয়েক জায়গায় জল পড়িতেছে। যেখানটায় বেশী জল পড়িতেছে সেখানে দ্বর্গ বহুকালের পুরাতন এক পিতলের বোক্নো পাতিয়া দিয়াছে; টুং টাংশৰে তাহার উপর জল পড়িতেছে। ছেলে-" মেয়েগুলির মুখ আনন্দে উজ্জল। কেহ মা বাপের নিষেধ না মানিয়া ছাচতলায় দিয়াছে মাথা পাতিয়া, কেহ সরু বাখারি দিয়া জল ভৰ্ত্তি বোকৃনোয় জলতরঙ্গ বাজাইতেছে। বড় ছেলে ফণি উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি করিতেছে, আয় বৃষ্টি চেপে— ধান দেব মেপে— = হরিশ ছেলেদের আনন্দ দেখিয়া যেন ক্ষেপিয়া গেল । টপ, করিয়া ফণির কান ধরিয়া মুখ ভেংচাইয়া বলিল,— বডড গোলাভরা ধান ঘরে, নয় ? হারামজাদাকে সেই থেকে বলছি,—যা, যা, ছুটো শসা তুলে নিয়ে জায়—গেরাহি নেই ? দশ বছরের ছেলে। ধৃতকর্ণ হইয়া ও বাপের এবম্বিধ মন্তব্য গুনিয়া দমিল না। সমান তেজে মুখ বিরুত করিয়া কহিল,—তুমি যাও না, বুড়ে মিলে। —কি, যত বড় মুখ নয়—তত বড় কথা ! তোর ছেলের নিকুচি করেছে— কিন্তু আস্ফালনই সার। উষ্ঠত চড়ের অবস্থা হইল— ত্রিশঙ্কুর স্বৰ্গলাভের মত। অভয়-মূৰ্ত্তিতে দুর্গা সন্তানের সম্মুখে আবিভূত হইলেন। —ত মন্দ কি বলেছে। বুড়ো মিন্সে নিজে যাও না। নিজের নেই এক কড়ার যুগ্যতা, ছেলেকে ক’রছেন শাসন ? |: নিষ্ফল আক্রোশে হরিশও গর্জন করিতে ছাড়িল না,— আমি যাব ? আমি ? যাবার উপায় থাকলে ওর -খোশামোদ করি ? হঠাৎ দাওয়ার উপর বসিয়া পড়িয়া পা ছাড়াইয়াy দিল –দেখ দেখি পায়ের তলাটা ruঞ্জ পরপ্ত জুই থেকে কুমড়ে আনতে গিয়ে গেল বাবলা-কাটা ফুটে।- তোলবার অবসর পেলাম না। এক ব্যাট যাচ্ছিল পথ দিয়ে। বললে, ‘কতয় কিনলেন? বললাম, এক আনা।’ বললে, ‘ঠকেছেন। হাটে ওর চেয়ে স্ববিধে পেতেন, বড়-জোর তিন পয়সা । আপনার এতটা পথ ইটাই সার ঘোষ-মশায় । মনে মনে বললাম, লাভ যা আমিই জানি, কিন্তু লোকসানটা ওই পায়ের ব্যথা । কাটা তখন চামড়ার মধ্যে । বাড়ি এসে নরণ দিয়ে কাটা তুলে চুণ দিলে লেপে, এখন পা পাততে পারছি নে। —যেমন অসাবধানী, তেমনি ফল । জিনিষ আনতে গেলে একটু হস থাকা দরকার। তা যাক, ওকে শসা জানতে কোথায় পাঠাচ্ছিলে ? —হিল্লী-দিল্লী নয়, ওই বোসেদের বাড়ি। পরও দেখলাম মাচা-ভক্তি নধর শসা ফলে রয়েছে।