পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৭ প্রবণসী ১Nঙ্গই গম্ভীর ভাবে উত্তর দিলে, হ্যা গো, তুমি জান না। একবার মা একটা রাখালের কথা বলেছিল, কথামালা খুঁজে দেখি ঠিক রয়েছে। —তাই দেখিস্। এখন একটু চুপ ক'রে বসে ভাব দেখি । কল্পনার মধ্যে নিজেকে তলিয়ে দিলাম। মনে ক’রে: সেইদিন যেদিন সিদ্ধার্থের তষিত আত্মা সত্যের সন্ধানে দেশবিদেশ ঘুরে অবশেষে এখানে এসে ধ্যানস্থ হ'ল। ঐ আকাশের কপালে এখনও যেন সেই ঐতিহাসিক ধ্যানের জ্যোতিঃ । আর ঐ ভগ্নস্তুপ ঘরগুলোয় যাবা থাকত তাদের উজ্জল চরাবুজ মূৰ্ত্তি ! যেন চোখের ওপর দেখতে পাচ্ছি । মনে হ'তে লাগল এখনই যেন স্বচক্ষে দেখব একজন শাস্ত সৌম্যমূৰ্ত্তি ভিক্ষু ভিক্ষাপাত্র হাতে বিহারে ফিরে আসছে। এখনই যেন শোনা যাবে সেই গম্ভীর আত্মনিবেদনের মন্ত্র-বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, সংঘ শরণং গচ্ছামি । নিবে-যাওয়া প্রদীপশিখার মত সেই পুরোণে৷ যুগকে যেন সামান্ত অগ্নিস্পর্শে এখনই আবার প্রজ্জ্বলিত করে তোলা যায়—এমনি একটা আসন্ন সম্ভাবনার উৎকণ্ঠায় আমার বুকের স্পন্ন দ্রুত হয়ে উঠল। স্থ হাজার বছর আগে যে সমস্ত সমাধানের জন্যে সিদ্ধার্থ তপস্তায় বসেছিলেন, আজও সেট সমস্তায় পৃথিবী জটিল, দুরূহ হয়ে রয়েছে। কিন্তু আজ আর তপস্তায় বসবার লোক নেই । সাম্নের মন্দিরের বৃহৎ ঘণ্ট গম্ভীরনাদে বাজতে লাগল। তার প্রতিটি ঝঙ্কার আমার মনে ব্যথিত আৰ্ত্তনাদের মত এলে লাগল। হঠাৎ যেন ইসারায় দেখতে পেলাম, পৃথিবীর যুগ যুগ ব্যাপী বিরাট দুঃখের চিত্র। আর ঐ বিশাল সারনাথ খুপের দিকে চেয়ে দেখলাম তার মৌন প্রত্যুত্তর। এই চিরচঞ্চলতার মাঝখানটিতে ঐ হ’ল চুপ ক'রে বস, এই ছিন্নপ্রাণের আওঁ কলরবে ঐ হ’ল নিশ্চিন্ত সমাধি। হিংসা হল ঐ সূপের প্রসন্ন গাম্ভীৰ্যকে। মনে হ’ল এই-ই সত্যি। বাইরেটাকে জমিয়ে পাথর করে ফেলে থাকতে হবে ঐ গুপের মত নিৰ্ব্বিকল্প হয়ে। কেন শুধু পাওয়া আর হারানো, হাসা আর কাদা, থামা আর চলা— স্থির হয়ে বোধ হয় অনেক ক্ষণ চুপচাপ বসেছিলাম। ভূলেই গিয়েছিলাম সঙ্গে টুল আছে । হঠাৎ ওর হাসির শব্দে চমক ভাঙল। টুলুর হাসিতে বেশ জোর আছে—তার দানাগুলি বেশ বড় বড় আর স্পষ্ট, খেয়াল গানের গিটকিবিব মত। না শুনে উপায় নেই। চম্কে উঠলম একটু বিরক্তও হলাম। জিজ্ঞাস করলাম, হাসছিস্ কেন ? অনেক ক্ষণ ওকে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছে, এখন আর ভুরুর শাসনে ওকে থামিয়ে রাখা যাবে না। ও আরও জোরে হাসতে হাসতে বললে, সেই ষে প্রথম ভাগে আছে ; তুমি যেন ঠিক সেই রকম দেখাচ্ছিলে— প্রথমভাগে কি আছে ? হাসিস নি—বল, শীগগির— সেই, ঋষিমশায় বসে পূজায়, মকার যেন ডিগবাজি খায় ! একবার ভাবলাম, জিজ্ঞাসা করি ও দুটোর মধ্যে আমায় কোনটা ঠাউরেছিস্ ! ঋষিমশাই, না ককার ? কিন্তু তার আগেই ও মুরুবিয়ান স্বরে বললে, বা চল, বেলা হয়ে যাচ্ছে না ? কখন নাইবে আর কখন খাবে ? মা বক্বে অখন— দেখো— মনে মনে টুলুর সমালোচনাটুকু নোটু করলাম। ঐ বিরাটকায় শুপেরও একটি সহজ সরল জবাব ছিল ওর এই হাসিতে—যা ক্লাউনের হাসি বলে ভুল করবার উপায় নাই। পৃথিবীর যেখানে যত বৃদ্ধ বনেদি চিন্তা স্তুপীকৃত হয়ে জাছে তাদেরই বিশাল বিষগ্ন গম্ভীর ছায়ায় যেন দেখতে পেলাম শিশুর হাস্তপ্রফুল্ল মুখ । বহুদিনের গ্রথিত পরম শ্রদ্ধেয় পাষাণস্তবকে লাগল অকুণ্ঠ নির্ভীক কোমল হাসির ধাক্কা ! ঠিক করে উঠতে পারলাম না—কে জিতল। পাঞ্জাবীর হাতায় টান পড়ল, সেজমাম, চল— উঠে পড়ে বললাম, তোর হুকুম-মতই যখন এসেছি টুলু, তখন চল তোর হুকুম-মতই বাড়ি ফেরা যাক।