পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՅԱ, পরিহাস করিলে সে তাহ হাসিয়া উড়াইয়া দিয়া তাহাকে বুঝাইয়াছিল—“বোকা, এটা বোঝ না যে লোকটা বোধ হয় বড়লোকের ছেলে ; তার হাতে হীরার আংটী ছিল তাকে হাতে রাখলে কাজ দেবে।" টুন-অঙ্গ একটু গোয়ার-প্রকৃতির হইলেও বোকা নয়। কিন্তু মা-থিনের মত তীক্ষ বুদ্ধিও তাহার ছিল না। তাই মনে একটু সন্দেহ রহিয়া গেলেও সে ভাবিল,—হবেও বা, নৰ্ত্তকীর খেয়াল, বড় দাও মারবে ভেবেছে—দেগিই না ব্যাপারটা কি ? দু-পয়সা এলেই বা মন্দ কি ? তাই সে মং-বার সন্ধানে বাহির হইয়াছিল। যখন সে জানিতে পারিল যে মং-ব বাস্তবিকই বড়লোক, কিন্তু তাহ হইলেও সে মা-খিনের কাছে আসিবে না, তখন তাহার মন হইতে একটা মস্ত বোঝা নামিয়া গেল। লাভটা হাতছাড়া হইয়া গেল বলিয়া একটু ৰে হতাশার ভাব আসিল না তাহ নহে, কিন্তু তার চেয়ে মনে মনে একটা আরাম অনুভব করিল –“যাক, একটা আপদ গেল—বীচ গেল।” কিন্তু সে যখন সালঙ্কারে এ-সব কথা মা-থিনের কাছে বর্ণনা করিল, তখন মা-থিন মুখে কিছু না বলিলেও একেবারে মরমে মরিয়া গেল। বাহিরের হাসিচাঞ্চল্য বজায় রাপিয়া চলিলেও সেই দিন হইতে তাহার মনের কোণে ভাঙন ধরিল। সে মনে মনে স্থির করিল আর কখনও টুন্‌-অঙ্গের নিকট মং-বার কথা বলিবে না। এমন হৃদয়হীন পাষাণ সে ? এমন আন্তরিকতাহীন অভদ্র, টুন-অঙ্গ, আর সে নিজেই বা কি করিয়া এরূপ লজ্জাহীন ভিখারিণীর মত উপযাচিক হইতে গেল ? তবুও—তবুও যেন মং-বাকে সে ভুলিতে পারে না-প্রতি চরণচাঞ্চল্যে সেই প্রিয়মুখ চোখের সাম্নে ভাসিয়া উঠে— প্রতি নূপুর-নিকণে মনে হয় যেন সে পর মুহূর্ভেই আবেগমাথা ভাষায় তাহাকে ডাকিবে । সে আহান সে ত এড়াইতে পারে না ?—কি করিবে সে?— কিন্তু তাহার প্রিয় কি তাহাকে চায় ? সে ত তাহাকে চায় না? তবে সেই বা কেন তাহাকে ভূলিতে পারিবে না? • প্রবাসী $Nరి8R ૨ অনেক দিন পর আজ দিন-কয়েক মফিজুদিন সাহেব মং-বাদের বাড়িতে আসিয়াছেন ; সঙ্গে আসিয়াছে সাকিনা। বাল্যসর্থীকে দেখিয়া মং-বার মনে কৌতুহল জাগে—কিন্তু সাকিনা ধরা দেয় না ; আড়ালে আড়ালে চলে। সাকিনা এখন বড় হইয়াছে—লজ্জা করিতে শিথিয়াছে। ভারি স্বন্দরী হইয়াছে সে ! কিন্তু মং-বার চোখের সামনে বাহির না হইলেও কারণেঅকারণে যেন সে তাহাকে দেখা দেয়। তাহার আনন্দময়ী মূৰ্ত্তি, রূপের দীপ্তি সমস্ত ঘরে থেলিয়া বেড়ায়। দাস-দাসীরা মুগ্ধ হইয়। চাহিয়া থাকে ; পরম্পর বলাবলি করে, “আর যা-হোক মানি বেয়ান, আমাদের দিদিমণির একথান রূপ বটে ! আমন রূপ না হ’লে এ ঘরে মানায় ?”--দিদিমণি বলিতে তাহার অজ্ঞান ! সময়ে অসময়ে সাকিনার চোখে মুখে আনন্দ উচ্ছলিয়া উঠে ! দেখিয়া শুনিয়া মংব ভাবে, কিসে তাহার এত আনন্দ ? সে কি এখনও তাহাকে মনে করে—তাহার কথা ভাবে ? মং-বা শিহরিয়া উঠে—তাহার নিজের মনে কালিমা ; আর কাহাকেও সে পঙ্কিল করিতে চায় না। আহা, চিরদিন ভাল থাকুক্‌ সে ! কিন্তু বিষয়টা যেন জটিল হইয়া উঠিতেছে। পিতার সহিত মফিজুদ্দিন সাহেবের সর্বদাই পরামর্শ চলিতেছে— নিভৃতে । ব্যাপারটা কি ? মং-বার কৌতুহল হয়, আশঙ্কাও জাগে । ছেলেবেলাকার কথা, মায়ের মনের সাধ মনে পড়ে । অবশেষে এক দিন আশঙ্কা সত্যে পরিণত হইল। পিতা তাহাকে ডাকাইয়া গম্ভীর ভাবে স্বর্গগত জননীর ইচ্ছা, সব পূৰ্ব্ব কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া বলিয়া দিলেন, শুভদিনে সাকিনার সহিত তাহার বিবাহ হইবে। সমস্ত বিষয়ে নিজেকে তাহার অপরাধী মনে হইতে লাগিল-সে কোন কথা বলিতে পারিল না। বাড়িতে সকলের আনন্দ দেখে কে ? দাসীকে ডাকিয়া লইয়া লুকাইয়া লুকাইয়া সাকিনা তাহাকে নিজের গলার হারটা বক্শিশ দিল। অন্তরাল হইতে মং-বা দেখিতে পাইল ।