পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

صعواg প্রবাসী ১Ne৪২ জানাল দিয় তাহার শয্যাপ্রাস্তে সোনালী আলো ছড়াইয়া দিয়াছে। মাথায় অতি কোমল, অতি মধুর শীতল হস্তের স্পর্শ! কে যেন জননীর স্নেহে, দয়িতার আদরে শিয়রে বসিয়া তাহার সেবা করিতেছে। ধীরে ধীরে মং-বা ডাকিল— “তুমি কে ?” শুশ্ৰুষাকারিণী কথা কহিল না ; বোধ হইল হাত তুলিয়৷ উত্তরীয়ুপ্রাস্তে সে চোখ মুছিয়া ফেলিল। একটু আশ্চৰ্য্য হইয়া মং-বা শিয়রের পানে চাহিয়া দেখিল—অধোমুখে বসিয়া মা-খিন। “আ, ম-খিন, তুমি ?” বলিয়। পরম আরামে মং-বা শিশুর মত নিশ্চিন্ত শাস্তিতে চক্ষু মুদিল । মা-খিন আসে যায় নীরবে, প্রচ্ছন্নভাবে। কামাল সাহেবও প্রায়ই পুত্রের নিকট আসেন, কিন্তু তিনি তাহার কোন সন্ধান পান না। অজ্ঞানাবস্থা কাটিয়া গেলেও মং-বা দারুণ জরবিকারে পড়িয়াছে। তাই কামাল সাহেব পুত্রকে গৃহে লইয়া যাইতে চাহিলেও চিকিৎসকের তাহাকে স্থানান্তরিত করিবার অল্পমতি দেন নাই। তন্দ্রাচ্ছন্ন অবসাদে সে চক্ষু মুদিয়া পড়িয়া থাকে—স্বপ্নের ঘোরে যেন মনে হয় কে তাহার পাশ্বে পরম যত্নে অক্লাস্ত পরিশ্রমে মমতাভরা বিনিদ্র আঁখি মেলিয়া আছে ! কয়েক দিনের নিপুণ চিকিৎস ও অবিরাম শুশ্ৰুষার পরে মং-ব সুস্থতার দিকে ফিরিল। মা-খিনের উপর আর কোন বিরক্তির ভাব মনে আসে না, এখন সে তাহার আশায় উদ্‌গ্ৰীব হইয় থাকে। কিন্তু ম-থিনের আসা-যাওয়া যেন কমিয়া যাইতেছে—সে যেন পারতপক্ষে তাহাকে এড়াইয়৷ চলিতে চায়। মং-বা আশ্চৰ্য্য হইয়া ভাবে—কেন সে এমন করিতেছে ? কতজ্ঞতায় তাহার অন্তর ভরিয়া যায়—এমন কোমলহৃদয়, সেবাব্রতা নারী সে, আর সে নিজে তাহার সহিত এমন রূঢ়, নিষ্ঠুর ব্যবহার করিয়াছে ! সেদিন সন্ধ্যায় সে নিদ্রার ভান.করিয়া পড়িয়া ছিল ; মা-খিন তাহার শয্যাপ্রাস্তে আসিলে সে হঠাৎ তাহার হাতদুখানি চাপিয়া ধরিয়া তাহাকে বসাইল ; বলিল, “ব’সে, কথা আছে ।” ম-খিন বসিল। মং-বা জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছ, তুমি আজকাল আমায় এমন এড়িয়ে চল কেন, বল ত ?” ম-খিন উত্তর দিল না। নতমুখে নীরব রহিল। মং-বা পুনরায় বলিল, “আমায় মাপ কর, খিন, আমি তোমার উপর বড় কঠোর ব্যবহার করেছিলাম। তখন ত আমি জানতাম না, তুমি এত ভাল, এত সুন্দর ? বল, তুমি আমায় মার্জনা করেছ ? ম-খিন ধীরে ধীরে হাত ছাড়াইয়া লইল ; বলিল, “এ সব কথা এখন কেন ? তুমি ত আমার কাছে কোন দোষ কর নি ? দোষ করেছিলাম আমিই।” “সে কোন কাজের কথাই নয় ; শুধু তোমার অভিমানের কথা” বলিয়া কি ভাবিয়া হঠাৎ মং-বা জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা, তুমি এই সন্ধ্যাবেলায় এখানে থাকই বা কি ক’রে—কাজে যাও না ?” ম-থিনের মুখ হইতে কোন উত্তর আসিল না ; শুধু সে এঞ্জিবিলম্বিত বোতাম টিপিয়া ধরিয়! তাহার নীলাভ প্রস্তরখণ্ডের পানে চাহিয়া রহিল । মং-বা ছাড়িল না ; বলিল, “বলই না, গো, কোথায় এখন কাজ নিয়েছ ?” সলজ্জ মুখে মা-খিন উত্তর দিল, “আমি আর সে কাজে যাক্ট না ।” “সে কি, কাজ ছেড়ে দিয়েছ ?” মং-বা অতিমাত্র বিস্মিত হইল, জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?” মা-পিন হাসিল ; বড় করুণ, বড় মলিন সে হাসি, বলিল, “তুমি ত নর্তকীর আঁচলে বাধা থাকতে চাও না ?” মং-বী হতবাক্ হইয় গেল। তাহার মুখে কোন উত্তর জোগাইল না । ম-খিন ধীরে ধীরে চলিয়া গেল। মং-ব মুখ ফিরাইয় জানালার দিকে চাহিল। বাহিরে বিস্তৃত প্রাস্তর, সীমাহীন নীলিমায় মিলিয়া গিয়াছে। প্রাস্তে সুদূর বনরেখা ; সমতলক্ষেত্র হইতে স্তরে স্তরে উঠিয়া পৰ্ব্বত-শীর্ষে উন্নত শিরে দাড়াইয়া আছে। মাঠের বুক চিরিয়া, বনানী ভেদ করিয়া একটি পথ পাহাড়ের গায়ে আঁকিয়া-বাকিয়া মেমিওর দিকে চলিয়াছে। তখনও স্তিমিত আলো ধরণীর বক্ষ হইতে অপস্থত হইয়া যায় নাই । আকাশে দুই-একটি করিয়া তারা ফুটিয়া উঠিতেছে। সন্ধ্যার সেই অস্পষ্ট আলোকে, গোধূলি-অবসানের ধূসর মানরাগে বিশীর্ণ বনসরণি যেন