পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Nఠిక్చా প্রবাসী ১৩৪ই ফোট পর নি কেন ? তোমাদের দেশে লোকে খাওয়ার পর এক রকম পাতা খায়, তাতে ঠোঁট খুব লাল হয়। তুমি খাও না সে পাতা ? তাকে বললুম, সে পাতাকে পান বলে। সে জিনিষ সঙ্গে বেশী দিন নেওয়া যায় না। খানিক ক্ষণ গল্প হবার পর এর স্বামী বললে, তোমরা কি খাবে ? আমাদের সঙ্গে একটু শ্যাম্পেন খাও। আমরা জানালুম আমরা শ্যাম্পেন খাই না। তখন বললে, তাহলে কি হইস্কি দিতে বলব ? তাও চলে না শুনে বললে, তবে শেরী খাও ? বললুম তাও থাই না। তবুও পোর্ট, বীয়ার ইত্যাদি সব রকম নাম ক'রে হতাশ হয়ে শেষে বললে, তোমরা কি এ-সব কিছুই খাও না ? না খেয়ে থাক কি ক'রে ? তেষ্ট পায় না ? আমরা বললুম তেষ্ট পেলে আমরা জল থেয়েই তৃপ্তি পাই। শেষে আমরা এক গেলাস ক’রে লেমনেড খেয়ে তবে তাদের ঠাও করি। আমরা চার জন বাইশে সেপ্টেম্বর বেলা এগারটার গাড়ীতে রওনা হয়ে বিকেল পাচটার সময় ইটালীর ফ্লোরেন্স শহরে পৌছলুম। আমরা ষে জায়গায় উঠলুম সেটা একটি বোডিং-হাউস। এক জন বর্ষীয়সী জাৰ্ম্মান মহিলা এর পরিচালনা করেন। এর মুখ সৰ্ব্বদাই হাসিতে ভরা এবং ব্যবহার বড়ই ভদ্র। আমরা যে তিন দিন এখানে ছিলুম এর আদরযত্বে মনে হ’ত না যে আমরা বিদেশে আছি । এমন কি এর কাছে যে কয়টি গরিব মেয়ে ঝিয়ের কাজ করে তাদেরও সঙ্গে ইনি নিজের কন্যার মত ব্যবহার করেন। আমাদের পরিবেশন করা হয়ে গেলে দেখতুম ইনি তাদের সঙ্গে করে নিয়ে এক টেবিলে খেতে বসতেন । রান্নাঘরে গিয়েও দেখেছি ইনি তাদের কাজে সাহায্য করছেন। এখানকার মোজায়েক পাথরের কারখানা দেখে এসেছি। ছোট ছোট নানা রকম রঙের পাথর বসিয়ে নানা রকম ফুল পাতা ও দৃশ্যাবলীর ছবি তৈরি হয়। ফ্লোরেন্সের মোজায়েক পাথর বিখ্যাত। ফ্লোরেন্স থারনো নদীর ধারে অবস্থিত। ইটালীয়ান কবি দ্বাস্তের এই জন্মভূমি। এখানে থারনো নদীর উপরে অনেকগুলি পুল আছে। যেটি সৰ্ব্বাপেক্ষ পুরাতন তার ছু-পাশেই সোনা-রূপোর গহনা, নানা রকম পাথর ও চামড়ার প্রব্যাদির দোকান আছে। এক দিন এখানকার উকিজি গ্যালারী ও পিটি গ্যালারী দেখতে গিয়েছিলুম। এসব গ্যালারীতে ইটালীর বড় বড় চিত্রকর মাইকেল এঞ্জেলো, রাফায়েল, মুরিলে প্রভৃতির হাতে আঁকা ছবি ও বড় বড় শিল্পীদের খোদাইকর মাৰ্ব্বেল-পাথরের গড় মূৰ্ত্তি আছে। সে-সব জিনিষ বড় স্বন্দর। আমরা রাস্তায় বেরলে মেয়ে-পুরুষের ভিড় লেগে যেত। সবাই বলত “ইণ্ডিয়ানো”। এক দিন মিসেস লতিফ ও আমাকে রাস্তায় একটু দাড়াতে দেখে এক জন ফটু করে ছবি তুলে নিয়ে সরে পড়ল। একবার জিজ্ঞাসাও করলে না তুলব কি না। এখানকার কুলী, মজুর, গাড়োয়ান খবরের কাগজওয়ালা সবাই বিদেশী লোক দেখতে পেলেক্ট ঠকাবার চেষ্টা করে। কাগজের দোকানে একবার কাগজ কিনতে গিয়ে দোকানদারকে কাগজ নেবার পর জিজ্ঞাসা করা হ’ল, তোমার কাছে চেঞ্জ আছে ? সে বললে, ই্য আছে। তার পর বেশী টাকাটি নিয়েই বললে, চেঞ্জ আবার কি, দেব না। এ-সব কথা আমাদের বেশীর ভাগই ইসারায় ও ডিক্সনারি দেখিয়ে চলছিল। ইটালীতে ফরাসী ভাষা ছাড়া লোকে অন্য বিদেশী ভাষা জানে না। আমরা তখন তাকে তার কাগজ ফিরিয়ে দিয়ে বললুম আমরা কাগজ চাই না, তুমি সব টাকাটা দাও। তখন সে হেসে তার স্থায্য দাম নিয়ে বাকী টাকা ও কাগজ আমাদের ফিরিয়ে দিলে। ফ্লোরেন্সকে ইটালীয়ান ভাষায় ফিরেঞ্জি বলা হয়। তখন ভারতবর্ষে মঙ্গাত্মা গান্ধী জেলে উপবাস করছিলেন, সে-কথা নিয়ে ইটালীর নানা রকম খবরের কাগজে খবর বেরচ্ছিল। আমরা যেখানেই যেতুম লোকে আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করত ভারতবর্ষের কি খবর । ভারতবর্ষ স্বাধীন হতে আর কত দিন লাগবে মনে হয় ? গাজী কত দিনে মুক্তি পাবেন ? ইত্যাদি।