পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাgন স্ত্রী ও কস্তাকে সামনে দেখিয়া তিনি সেইখানেই দাড়াইয়া গেলেন । বলিলেন, “কি, তোমাদের খাওয়াদাওয়া হয়েছে ? আমি ত এখান থেকে প্রাণ নিয়ে আর ফিরব না বোধ হয়, যা এক দল ডাকাতের হাতে পড়া গেছে । তারা আমাকে ধনেপ্রাণে শেষ ক'রে তবে ছাড়বে।” যামিনী বলিলেন, “খানিকটা গোলমাল সইতে হবে জেনেই ত এখানে আসা ? যতটা পার সামলে চল । অনেক বেলা হয়ে গেছে, স্নান ক'রে খেয়ে নাও।” স্বরেশ্বর স্বান করিবার কোন লক্ষণ না দেখাইয়া, একটা চেয়ার টানিয়া লইয়া সেইখানেই বসিয়া পড়িলেন, বলিলেন, "সামলে চলব কি, সবাই মিলে ষড়যন্ত্র স্বরু করেছে কি ক’রে অময় ফাকি দেওয়া যায়। এই কলকাতার ছোড়াগুলো সবার ওঁছা, ওদের যে কিছুতেই বাগ মানান যাচ্ছে না ?” মমতা ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “তারা কি করছে বাবা ?” স্বরেশ্বর অবজ্ঞায় ঠোট উণ্টাইয়া বলিলেন, “দেশোদ্ধার করছেন, পরোপকার করছেন, অর্থাৎ আমার পিণ্ডির ব্যবস্থা করছেন। প্রজা ক্ষ্যাপানোর মতলব আর কি ? আজ ডেকে পাঠিয়েছিলাম সবগুলোকে, তা পাচ-ছটা মোটে এল, সে কি বক্তৃতার ঘট, যেন আমাকে কচি থোকা পেয়েছে।” মমতা আরও কি জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছিল, যামিনী সুরেশ্বরের অলক্ষ্যে ইঙ্গিত করিয়া তাহাকে বারণ করিয়া দিলেন। বলিলেন, “তোরা দু-জন খেতে ব’স, বেশী বেলায় খেলে আবার অস্বর্থ-বিম্বথ করতে পারে । এ-সব ত কোনকালে অভ্যাস নেই।” স্বজিত স্নান করিয়া আসিয়া খাইবার ঘরে ঢুকিল । স্বরেশ্বরও চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া গেলেন। মমতা আর স্বজিতের খাবার আসিল, তাহারা খাইতে বসিল । যামিনী সেইখানেই বসিয়া রহিলেন। চাকর বাহির-বাড়িতে ডাক্তার বাবুর খাবার পৌছাইয়া দিয়া আসিল । দুপুরে একটু না ঘুমাইলে স্বরেশ্বরের চলিত না। তিনি থাইয়া-দাইয় গুইয়া পড়িলেন। মমতা কেমন আনমনা হইয়া এঘর ও-ঘর ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। স্বজিত বন্ধুর অভাবে কয়েক জন পাইককে ডাকিয় তাহদের সঙ্গে ঘোড়া, কুকুর, বাঘ, ভালুকের গল্প জুড়িয়া দিল। ঘামিনী খাইতে জন্মস্বত্ব ՆԱծ বলিলেন সবার শেষে, তাহার খাওয়াদাওয়া শেষ হইতে হইতে বেলা একটা বাজিয়া গেল । দুপুরে এখানে কিই বা করা যায় ? কলিকাতা হইতে খান-কয়েক বই আনিয়াছিলেন, তাহারই একটা হাতে করিয়া থাটের উপর গিয়া বসিলেন। যদি একটু ঘুমাইতে পারেন ত মন হয় না। নূতন জায়গায় আসিয়া পড়ার অস্বাচ্ছন্যে কাল রাত্রে তাহার ভাল করিয়া ঘুমই হয় নাই। হঠাৎ দরজার কাছে পায়ের শব্দ, চুড়িবালার শিঞ্জন, ফিসফিস্ করিয়া কথা-বলার আওয়াজ। ষামিনী ফিরিয়া তাকাইলেন। দরজার কাছে পাঁচ-ছয়টি নারীমূৰ্ত্তি, ঘোমটায় মুখ ঢাকা, শুধু পানের রসে লাল ঠোঁটগুলি দেখা যাইতেছে, চেহারা যে কাহার কি প্রকার তাহা বুঝিবার উপায় নাই। পঃনে চওড়া পাড়ের দিশী শাড়ী, পায়ে আলতা, গায়ে সকলেরই কিছু কিছু গহনা আছে। সঙ্গে গুটিকয়েক শিশু, তাহারা অপরিসীম কৌতুহল চোখে ভরিয়া যামিনীর দিকে তাকাইয়া আছে। মুখী ঝি তাহদের ভিড় ঠেলিয়া ঘরের ভিতরে আসিয়া খবর দিল, “ম, এরা সব গ্রামের ভিতর থেকে এসেছেন, আপনার সঙ্গে দেখা করতে ।” যামিনী বই সরাইয়া রাখিয়া বলিলেন, “আহন, ঘরের ভেতর আমুন। মুখী, এদের বসবার জায়গা দে।” মেয়ের দল ভিতরে আসিয়া দাড়াইল । মুখী খুজিয়া পাতিয়া মন্তবড় একটা শতরঞ্জি আনিয়া ঘরের মেঝেতে পাতিয়া দিয়া বলিল, “বমুন আপনারা ।” ছেলেমেয়েগুলিই আগে বসিয়া পড়িল, তাহাদের মামাসীর দলও একে একে বসিল । চোখ কিন্তু সকলেরই যামিনীর উপর, যেন এক দণ্ডের জন্ত অন্য দিকে চোখ ফিরাইলে কি একটা অঘটন ঘটিয়া যাইবে । ঘোমটাগুলিও অল্পে অল্পে সরিতে আরম্ভ করিল। নানা রকম, নানা বয়সের কতকগুলি নারীমূৰ্ত্তি এইবার ভাল করিয়া দেখা গেল । যামিনী খাট হইতে নামিয় তাহদের দলে বসিবার জোগাড় করিতেই তিন-চার জন ই৷ ই করিয়া উঠিল, “ওকি, ওকি, আপনি খাটের উপরে বম্বন মা, নীচে কেন বসবেন ?” জমিদার-গৃহিণীকে তাহাদের সঙ্গে একাসনে বসিবার উপক্রম করিতে দেখিয় তাহারা একেবারে সস্ত্রস্ত হইয়া উঠিল । অনেক ক্ষণই কথা না বলিয়া বসিয়া থাকিবার আদেশ