পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাঙ্কন আমিও গিয়ে হাজির হব। এইটুকুনের জন্ত এত ভাবনা কিসের ?” - কৃষ্ণা এইবার শক্ত হইয় অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠকে সংযত করিয়া বলিল, “তুমি বুঝতে পার নি, বাবা, আমাকে অনেক দূরে যেতে হবে । তিনি পাস করেছেন বটে, কিন্তু এখনও তার আসবার দেরা আছে। এ বছরটা সেখানে কাজ করলে তবেই এখানে এসে ভাল কাজ পাবার সম্ভাবনা আছে, নাহলে হয়ত অনেকদিন বসে থাকৃতে হবে। তাই –তাই—” কৃষ্ণার গলার স্বর বুজিয়া আসিল। রমাপ্রসাদ বলিলেন, “তাই কি—বলে ফেল মা, বোঝার উপর শাকের জাটিও সয়ে যাবে ।” কৃষ্ণ বলিল, “আমাকেই সেখানে যেতে হবে।” রমাপ্রসাদ গম্ভীর মুখে বলিলেন, “এই মিহিরের বক্তব্য ? এই তোর ভাল খবর ?” কৃষ্ণা কোন জবাব দিল না । রমাপ্রসাদ বলিলেন, “যাবি যে, বড়লোক জামাই টাকা পয়সা কিছু পাঠিয়েছে ? না, সবই এই বুড়ো শ্বশুরের ঘাড়ের উপর দিয়ে ? শেষ রক্তটুকুও না শুষে নিয়ে আমায় বাবাজী চড়িবেন না ।” কৃষ্ণা বলিল, “এ টাকা তোমায় কেউ দিতে বলে নি, বাবা । কিন্তু অন্য কোনও টাকা যখন নেই, তখন টাকার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে । তোমার সর্বস্ব এমন করে নষ্ট করতে আমি দেব না।” রমাপ্রসাদ বলিলেন, “তুই কি এত পণ্ডিত হয়েছিল এরি মধ্যে যে বিলেত যাবার মত টাকা রোজগার করে আনবি ?” কৃষ্ণা বলিল, “রোজগার কোথা থেকে করব, বাবা ? তোমারই দেওয়া জিনিষ বেচে টাকা আনতে হবে। বিলেত গিয়ে এত গয়না পরবার আমার দরকার হবে না।” রমাপ্রসাদ বলিলেন, “দেশে যখন-ফিরবি, তখন তোর গুর শাশুড়ী কি আমায় আস্ত রাখবে তাহলে ?” কৃষ্ণার জাহাজের খরচের ব্যবস্থা রমাপ্রসাদই জোর করিয়া করিলেন । বোম্বাইয়ের যে জাহাজঘাটা হইতে স্বামীকে আনিতে শুইবে বলিয়া কৃষ্ণ গহনা কাপড় পৰ্য্যন্ত গুছাইয়া রাখিয়াছিল, স্টে জাহাজঘাটা হইতে একলাই একদিন সে স্বামীর উদ্বেপ্তে কেন জামাই ᏔᎲᏄ যাত্রা করিল। রমাপ্রসাদ বোম্বাই পৰ্য্যন্ত আগাইয়া দিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু কৃষ্ণ বলিল, “বাবা, এত পথ, এত দূর আমায় যপন একলা যেতে হবে, তখন প্রথম দিন থেকেই আমায় শক্ত হতে দাও । তুমি আমার জন্তে কিছু ভেবে না বাবা। তোমার এ মেয়েকে ভগবান ফুলের ঘায়ে যুদ্ধ যাবার জন্যে গড়েন নি।” রমাপ্রসাদ বলিলেন, “তোর যে দেখি বড় জাক হয়েছে রে ? বিলেতের মাটিতে পা দিলে না জানি আরও কি হবি। কলিকালের মেয়ে, বুড়ো বাপকেও কথা শোনাতে ছাড়বি কেন ?” কৃষ্ণ বলিল, “তোমাকে কথা শোনাবার যোগ্যতা আমার নেই বাবা, কিন্তু কলিকালের মেয়েকে কলিকালের মত চলতে না শেখালে দুঃখ তাকেই বেশী করে পেতে হয়।" পিতাকে কাদাইয়া ও আপনি কাদিয়া কৃষ্ণ একলাই চলিয়া গেল । রমাপ্রসাদের শূন্তগুহে আর দ্বিতীয় প্রাণী নাই। বড় মেয়ের মাঝে মাঝে আসিয়া মুখে কুশল প্রশ্ন করিয়া চলিয়া যায়, তাহার বেশী যোগ আর তাহাদের সঙ্গে নাই। দীর্ঘকাল ধরিয়া পিতামাতা তাহীদের জন্য যথেষ্ট করিলেও সে করা বাধ্য হইয়া করা, সাধ করিয়া করা নয়, এইজন্ত কৃষ্ণার উপরেই তাহাদের একটা রাগ ছিল । কৃষ্ণার হইয়া পিতাকে সেবা করিলে পাছে কৃষ্ণারই কিছু একটা উপকার হয় এই রাগেই যেন তাহার এ বাড়ীর সীমানা মাড়াইতে চাহিত না। রমাপ্রসাদ বসিয়া বসিয়া রবিবারের আশায় দিন গুণিতেন । কৃষ্ণ পৌছিবার পর প্রথম যে রবিবারে তাহার চিঠি আসিল সেদিন রমাপ্রসাদ যেন আনন্দে আহার-নিদ্রাও ভুলিয়া গেলেন। তাহার কৃষ্ণাও কি না বিলাতে। দীর্ঘ সমুদ্রপথের কত বিচিত্র বর্ণনা তাহার চিঠিতে ; অনন্ত বারিধির রূপ, অপূৰ্ব্ব সহযাত্রীদের কথা, অদেখা কত তটভূমির কোলাহল, সকলের ভীড়ে মিহির যেন কোথায় . তলাইয়া গিয়াছে। যাই হোক, মিহির ভাল আছে ত, তাহা হইলেই হইল। জামাইয়ের কথা শ্বশুরকে হয়ত সঙ্কোচের জন্তই কল্প লিখিতে পারে নাই। পরের রবিবার কৃষ্ণার চিঠিতে খবর আসিল, মিহির ও কৃষ্ণ বেশ ভাল আছে। জাহাজ