পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ప్రిMB' রূপে ঢাকার নবাব সাহেব বাংলা ভাষা ও সাহিত্যfo ( "conquest of Bengali literature and language")-এর যে আভাস দিয়াছেন এবং মুক্লবীহীন বাঙালী মুসলমানকে উর্দু, শিখিবার জন্য যে স্বপারিশ করিয়াছেন, তাহাতে মনে হয় যে, তিনি বঙ্গসাহিত্যে এক নবযুগের স্বচনা না করিয়া ছাড়িবেন না। দেখা যাক, তাহার এই পরামর্শ অনুসারে এই সাহিত্য-বিজয়ের অভিযানে বাঙালীমুসলমান কতদূর অগ্রসর হইতে পারে। বঙ্গদেশের অধিবাসী হইয়াও ঢাকার নবাব সাহেব নিজে এক জন উর্দুভাষী মুসলমান। বঙ্গদেশে জন্মগ্রহণ করিয়া এবং বাংলার কোলে ললিতপালিত, বঙ্কিত ও শিক্ষাপ্রাপ্ত হইয়াও বাঙালীজাতির ভাষার সহিত র্তাহার সম্বন্ধ অতি স্বর। বাঙালীর নিকট যে-উর্দু একটা বিদেশীয় ভাষা তাহাই তাহার মাতৃভাষা। আর এই উর্দুভাষায় তাহার কতটা দখল আছে, এবং সাহিত্যের ধোগ্য র্তাহার কোন উর্দ, রচনা আছে কিনা তাহ আমরা জানি না। তবে তিনি যে-সভায় দাড়াইয় তাহার গবেষণাময়ী বক্তৃতা দিয়াছেন, তাহার শ্রোতৃমণ্ডলীর অধিকাংশ ব্যক্তিই যে উর্দুভাষী তাহাতে কোনও সন্দেহ নাই। সেই উর্দুভাষী লোকদিগের সম্মুখে তিনি বাংলাভাষী মুসলমানকে লক্ষ্য করিয়া ইংরেজী ভাষায় যে বক্তৃত৷ দিয়াছেন, বাংলা সাহিত্য ও ভাষাকে জয় করিতে হইবে বলিয়া যে আস্ফালন করিয়াছেন, তাহার দ্বারা কোন শ্রেণীর লোক উপকৃত হইবে তাহা হয়ত তিনি ভাবিয়াও দেখেন নাই। কিন্তু যাহাদের জন্য দয়া করিয়া তিনি এই অমূল্য উপদেশ দিয়াছেন, তাহাদের যে বিশেষ কোন উপকার হইবে না, তাহা আমরা দৃঢ়ভাবে বলিতে পারি। বাংলার বুকে উর্দুভাষার পুনঃপ্রবর্তনে মুসলমানদের স্বন্ধে আর একটা অতিরিক্ত বোঝা চাপান বই আর কিছুই হইবে না। অসাহিত্যিকের এই ভাবে সাহিত্যব্যাপারে হস্তক্ষেপ করাকে আমরা অনধিকারচর্চা বলিয়া মনে করি । নবাব সাহেবের এই অস্কায় হস্তক্ষেপ করাকে “সাহিত্য-বিজয় কাব্য" বলিয়া বর্ণনা করিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাহিত্য ও ভাষার ক্রমবিকাশের ধারার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে দেখা যাইবে যে, অসাহিত্যিক ব্যক্তি কোনও কালে জোর করিয়া সাহিত্যের উপর প্রভাব বিস্তার করিতে পারে নাই, আর কোনও দেশের সাহিত্য প্রশ্বাসী ૨૭a૨ সেরূপ অন্তায় হস্তক্ষেপ কখনই বরদাস্ত করে নাই, সাহিত্য জয় করা ত দুরের কথা। অথচ সাহিত্য ও ভাষাকে যে জয় করা যায় না তাহাও নহে ৷ এক সাহিত্যের উপর অন্য দেশের সংস্কৃতির জয়লাভ করিতে হইলে যে উপাদানের দরকার তাহা গায়ের জোর নহে, সাময়িক উত্তেজনা নহে, ক্ষণিকের ক্রোধ নহে, বিশেষ সুবিধা নহে। তাহার জন্ত চাই যুগ-যুগব্যাপী সাধন, অসাধারণ প্রতিভ, সাহিত্যসম্পৰ্কীয় প্রচুর রত্নসম্ভার, সাহিত্যের নিজস্ব সৌন্দৰ্য্য, জলস্ত জীবন ও সংরক্ষণক্ষমতা । ইহার অভাবে অপরকে জয় করা অথবা প্রভাবান্বিত করা ত দুরের কথা, তাহার নিজেরই অস্তিত্ব রক্ষা করা অসম্ভব ; সে তখন অপরের চাপে অস্তিত্বহীন হইয়া পড়ে, অথবা কোনও রূপে অস্তিত্ব রক্ষা করিলেও অপরের দাস হইয়া পড়ে। জগতের অনেক সভ্যতা, কৃষ্টি ও সাহিত্য এই ভাবে বিনষ্ট হইয়াছে। এই সাহিত্য-বিজয়ের অভিযান আজ একটা নুতন কথা নহে। ইহার পূৰ্ব্বেও কয়েক বারই এইরূপ হইয়াছে এবং শক্তির অভাবে কেহ বিজিত হইয়াছে, আবার শক্তির প্রভাবে কেহ কেহ অপরকে মুষ্টিগত করিয়াছে। প্রবল রোমানগণ যখন বাহুবলে অপেক্ষাকৃত স্বসভ্য গ্রীকদের চরণতলে প্রণত করিল, তখন তাহারা আশা করিয়াছিল রোমক সভ্যতার তরঙ্গে সমগ্র গ্রীসকে ভাসাইয়া দিবে। কিন্তু গ্রীস বিজয়ের অল্পকাল পরেই একেবারে বিপরীত ফল ফলিল—ঐতিহাসিকগণ «FF strē strtă şfinitGR–The captive Greeks captured the captor Romans—ffers old বিজেতা রোমানগণকে কৃষ্টি ও সংস্কৃতির দ্বারা জয় করিয়া ফেলিল । ফলতঃ গ্ৰীক সভ্যতা, সাহিত্য, ভাষা, সংস্কৃতি প্রভৃতির সম্মুখে রোমান সভ্যতা টিকিতে পারিল না, বরং বহুলাংশে গ্রীক-ভাবাপন্ন হইয়া পড়িল । গ্রীক সাহিত্যের অন্তনিহিত সৌন্দর্ঘ্যের পাশ্বে রোমান সাহিত্য পরিমান হইয়া পড়িল। কেটোর মত রক্ষণশীল ব্যক্তি, যিনি প্রথমে গ্রীক-সভ্যতাকে হেয়ঞ্জান করিতেন এবং দেশে গ্ৰীক-সভ্যতাব স্রোত প্রতিরুদ্ধ করিতে বিশেষ চেষ্টা করিয়াছিলেন, তিনিও অবশেষে শেষজীবনে গ্রীক-সাহিত্য পাঠ করিতে আরম্ভ করিলেন—কারণ তিনি বুঝিলেন যে আমন সৌষ্ঠবসম্পন্ন সাহিত্যের প্রভাব পরিত্যাগ করা নিতান্ত ভুল।