পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oorlye প্রবাসী N98R ওদিক দেখছি, এমন সময় গাড়োয়ান বা ক’রে মিটারটি ঘুরিয়ে যা দাম উঠেছিল, তার অপেক্ষা কিছু বাড়িয়ে দিলে। সে বোধ হয় ভেবেছিল, আমরা দেখতে পাই নি। আমরা তাকে খুব তাড়া দিয়ে উঠলুম। সে ইটালীয়ান ভাষায় বকর-বকর করে কি বোঝাতে লাগল। বাড়ি ফিরে তার যা ন্যায্য প্রাপ্য তাই দেওয়া হ’ল । তার পর আরও চাইতে লাগল। তখন আমরা বেডেকারের বই খুলে তার যা ভাড়ার নিয়ম তা দেখিয়ে দিতেই স্বভূস্থড্র করে গাড়ী হাকিয়ে পালাল। রাস্তাঘাটে এই ধরণের লোকেরা বিদেশী লোক দেখলেই ঠকাতে চেষ্টা করে। 姆 আমরা ৩০শে সেপ্টেম্বর রোম পরিত্যাগ ক'রে ইটালীর নেপলস শহরে এলুম। নেপলস্ আমাদের এই দ্বিতীয় বার দেখা হ’ল। প্রথম বার ভিক্টোরিয়া জাহাজ থেকে ছু-ঘন্টার জন্ত নেমে পম্পীর ধ্বংসাবশেষ দেখে যাই। এবারে আমাদের উদ্দেশু ছিল, ভিসুভিয়স আগ্নেয়গিরি দেখা। এখানেও একটি জার্মান-হোমে উঠলুম। হোটেলের ছটি ছোকরা চাকর আমাদের জিনিষপত্র সমেত আমাদের একটি কাচের দরজা-জানালাওয়ালা বদ্ধ লিফটে পুরে ওপরে নিয়ে চলল। চাকর-ছুটির গায়ের দুর্গন্ধে লিফটের ছোট্ট ঘরটি ভরে গেল। আমাদের ত বমি ক’রে ফেলবার অবস্থা। সাত তলায় এসে লিঙ্কট থামল। বাড়িওয়ালী বুড়ী হাসিমুখে এগিয়ে এল বটে, কিন্তু তার চেহারা বড়ই খটখটে, হাসি যেন মুখে শোভা পাচ্ছে না। বুড়ীকে বলা হ’ল আমাদের একটি ভাল ঘর চাই। দু-দিন থাকৃব, ভিসুভিয়স দেখে চলে যাব। আমরা কি খাব জিজ্ঞাসা করতে বললুম, আমাদের গরুর মাংস দিও না, আমরা খাই না। বাড়িওয়ালী বললে—বেশ, এখানে খুব ভাল 'ভিল" ( বাছুরের মাংস ) পাওয়া যায়, আমি তোমাদের তাই দেব। আমরা তাও থাই না গুনে বললে—তবে তোমরা কি খাবে ? এখানে ভেড়ার মাংস ও মুরগী বড়ই স্থপ্রাপ্য। তোমরা একটু বাছুর খেয়েই দেখ না কেন ? গরুতে না প্রবৃত্তি হয়, বাছুরে দোষ কি ? তাকে বললুম, তোমার মাংস দিয়ে কাজ নেই, তুমি আলু কপি কড়াইস্কটি সেদ্ধ ও রুটি মাখন ডিম দিও। আমরা তাতেই চালাব। আমার ঘরের সামনে ছোট্ট একটু বারান্দ, তার অনেক নীচে রাস্তা। রাস্তায় দেখতুম, ছোট ছেলেপিলে • পার্থক্য কিছুই বুঝে উঠতে পারলুম না। জাম্বড় গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাস্তার মাঝখানেই তরকারির খোসা ও নানা রকম আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। আমাদের দেশের মত গরু বাছুর ছাগল চলারও বিরাম নেই। রাস্তার অপর পাশে পাহাড় উঠে গেছে। তার উপর ইটালীর বন্তির বাড়িঘর। পাহাড়ের গায়ে থাকে থাকে আঙুরলতা ও পিচের গাছ, ফলে ভৰ্ত্তি। বস্তির লোকেরা সারাদিন কাপড়কাচ, জলতোলা, ছেলেপিটনো, বাসন-মাজ, ও কাপড় শুকাতে দেওয়াতে ব্যস্ত থাকৃত। আমি জানালায় দাড়িয়ে এ সব দেখছি দেখে একটি আঠার-উনিশ বছরের মেয়ে চীৎকার ক'রে বলতে লাগল—”ইণ্ডিয়ানো” । আমনি ছেলেবুড়ে একপাল সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ভিড় ক’রে মজা দেখতে লেগে গেল। বড়রা আণ্ডল দেখিয়ে দেখিয়ে কি বলাবলি করতে লাগল ও ছোটরা ভেঙচি কাটতে স্বরু করলে। আমি জানালা থেকে সরে এলুম। বিকেলে বোডিং থেকে বেরিয়ে সমূত্রের ধারে একটু বেড়িয়ে এলুম। এ-সব সমুদ্রে পুরীর সমূত্রের মত ঢেউ নেই। বেড়িয়ে ফেরবার সময় দেখি চৌরাস্তার উপর একটি ছোট দোকানে গোটাকয়েক সরবতি লেবু, কয়েক বোতল ফলের সিরাপ, পাক ফুটি ও বুনো নারিকেলের টুকরা বিক্রী হচ্ছে। আমরা একটি ফুটি ও কয়েক ফালি নারিকেল কিনে পাসিওতে (হোটেলে ) ফিরে এলুম। নারিকেল ও ফুটি আমাদের দেশের মতই খেতে । জাহাজে থাকৃতে গল্প শুনেছিলুম নেপলসে একটি একোয়ারিয়াম আছে। এখানে অক্টোপাস জানোয়ার আছে। শুনে এটিকে দেখবার জন্য কৌতুহল ছিল। এক সময় রাস্তায় বেড়াতে গিয়ে এই একোয়ারিয়ামও দেখেছিলুম। অক্টোপাস বলতে আমরা যে বিশালকায় সামুদ্রিক জানোয়ার বুঝি, এটি তা নয়। এখানে যিনি আছেন, তিনি সেই বড় জানোয়ারের ছোট সংস্করণ। ওপর থেকে ছোট মাছ ফেলে দেওয়া হ’ল ; ইনি গোড়ায় একটি পাশে চুপচাপ কুঁকড়ে বসে ছিলেন, মাছ পড়তেই শরীরকে দ্বিগুণ ক’রে ছত্রিশটি হাত বের করে মাছটিকে বুকে সাপটে ধরে খেয়ে ফেলে আবার যেমন ছিলেন তেমন হলেন। এর মুখ ও বুকের একোয়ারিয়াম দেখে ফিরে আসছি হঠাৎ পেছনে এক অদ্ভুত রকম গলার