পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আকাশের কথা শ্ৰীভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ, এম এসসি ১৯০১ সালের কথা বলছি। বেতারে কে কত দূর থেকে খবর ধরতে বা পাঠাতে পারে—এই নিয়ে সারা দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন ও প্রতিযোগিতা চলেছে। সৰ্ব অলিভার লজ, আচাৰ্য্য জগদীশ বস্থ প্রমুখ বৈজ্ঞানিকগণ কয়েক মাইল পৰ্য্যস্ত বেতারে খবর পাঠাতে পেরেছিলেন । অঙ্কশাস্ত্রটি মারকনি বুঝতেন একটু কম। তার ধারণা ছিল “যদি ৪ মাইল দূর থেকে খবর ধরা যায় তবে ৮ মাইল দূর থেকেই বা তা ধরা যাবে না কেন ?” তাই তিনি দিনের পর দিন প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের দূরত্ব বাড়িয়ে সংবাদ ধরতে লাগলেন। এই রকম করতে করতে হঠাৎ একদিন রাগবী থেকে প্রেরিত সংবাদ আমেরিকায় বসে তিনি ধরলেন। এর আগে কিন্তু, কেউ কোনদিন ভাবতেও পারেন নি যে এতদূর থেকে খবর পাঠানো বা ধরা সম্ভব হবে। স্বতরাং এই অভিনব আবিষ্কারের জন্ত মারকনিকে ইংলণ্ডের রয়্যাল সোসাইটির পক্ষ থেকে একটি পদক দেওয়া স্থির হ’ল । সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিশ্রত বৈজ্ঞানিক লর্ড র্যালে । সভার শেষে তিনি হঠাৎ মারকনিকে প্রশ্ন ক'রে বসলেন “আচ্ছ, সাধারণত: দেখা যায় যে আলোর তরঙ্গ অতি স্বল্প বাধার কোণ ঘুরে তার পিছনে পৌছতে পারে। তার কারণ আলোর তরঙ্গ-দৈৰ্ঘ্য (wave.length) খুব কম। শব্দের তরঙ্গ এর চেয়েও বড় বড় বাধার কোণ ঘুরে সেই বাধার পিছনে পৌছতে পারে, কারণ শব্দের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য আলোর তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বেশী। বেতারের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য শব্দের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যের চেয়ে আরও বেশী। মৃতরাং শব্দের সামূনের বাধার চেয়েও বড় বাধার কোণ ঘুরে বেতার-তরঙ্গ না-হয় তার পিছনে পৌছতে পারে। কিন্তু রাগী থেকে আমেরিকার মধ্যে উচ্চতায় প্রায় আড়াই-শ মাইল ব্যাপী প্রাচীরের মত পৃথিবীর যে বাক, সেই বাক ঘুরে কেমন ক’রে বেতারে বার্তা পৌছল ?” এর কোন স্বসঙ্গত উত্তর মারকনি দিতে পারলেন না। ১৯০২ সালে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেনেলী এবং ইংলণ্ডের বিখ্যাত অধ্যাপক হেডিসাইড, একই সঙ্গে অথচ স্বতন্ত্রভাবে জানালেন যে তাদের মতে উচ্চাকাশে বিদ্যুৎপরিচালক একটি স্তর আছে যেখান থেকে বেতার-তরঙ্গ প্রতিহত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে। স্বতরাং বেতারতরঙ্গের পক্ষে এতখানি বাক ঘুরে আসা অসম্ভব নয়। এর ২৪ বছর আগে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে ব্যালফুর ষ্টয়ার্টও কিন্তু ঠিক এই কথাই বলে গিয়েছিলেন। পৃথিবীর দৈনন্দিন চুম্বক-ক্ষেত্রের শক্তির হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে তিনি অনুমান করেন যে উচ্চাকাশে বিদ্যুৎ-পরিচালক একটি স্তর আছে। সেই স্তরের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে চুম্বক-ক্ষেত্রের স্বষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রই পৃথিবীর চুম্বক-ক্ষেত্রের হ্রাস-বৃদ্ধির কারণ। যদিও এই স্তরের প্রথম আবিষ্কারক ষ্টুয়ার্ট কিন্তু সাধারণতঃ এই স্তরকে কেনেলী-হেডিসাইড' বা ই-স্তর বলা হয়। এই স্তরের উপরে আবও একটি স্তর আছে তার নাম এ্যাপলটন বা এফ, স্তর। উচ্চাকাশের যে অংশে এই দুই স্তর অবস্থিত তার নাম বিদ্যুৎ-মণ্ডল । কিন্তু কেমন ক'রে যে বেতার-তরঙ্গ উপরকার স্তর থেকে প্রতিহত হয় তা অমীমাংসিতই রয়ে গেল। এমনি ক’রে ১৯০২ থেকে গড়িয়ে গেল ১৯২৪ সাল পর্য্যস্ত। এই প্রশ্নের প্রথম মীমাংসা করলেন ইক্লস্ ও লারমার ;–এরা দু-জনে দেখালেন যে যদি কোন বায়ুরাশির অণু-পরমাণু সকল কিছু দ্বারা আহত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু-পরমাণু বা বিদ্যুতিনে পরিবর্তিত হয় তবে সেই বায়ুরাশি যে অনুপাতে বিদ্যুৎপরিচালকত্ব ধৰ্ম্ম পায়, বেতার-তরঙ্গের গতিও সেই অনুপাতে বেড়ে যায়। আমরা যতই উপরে উঠতে থাকি চাপ ততই কমৃতে থাকে, তাই বিদ্যুৎ-মণ্ডলে চাপ পৃথিবীর চেয়ে ঢের কম। এই কারণে সেখানকার বিদ্যুতিনগুলি পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা না খেয়ে বা কম খেয়ে, অনায়াসে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পারে। সেই জন্য ক্ষুদ্র