পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র মলাই করান, ডাক্তার নাকি এই বিধান দিয়াছেন। তাই গৃহিণীর বেড়াইতে যাওয়া, বা আকাশে মেঘের সঞ্চার কোনটাই র্তাহার চোখে পড়ে নাই, তাহা না হইলে এত ক্ষণে মহা চেঁচামেচি লাগিয়া ধাইত। মমতা ঘরে ঢুকিয়াই পায়ের জুতা খুলিয়া সোজা গুইয়া পড়িল। যামিনী বলিলেন, “কাপড়-চোপড় ছেড়ে শো না ? শরীর খারাপ লাগছে নাকি ?” মমতা সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়া জানাইল, তাহার খানিকট খারাপই লাগিতেছে। যামিনীর মেয়ের কাছে অনেক কথা জানিবার ছিল, কিন্তু এখনই তাহাকে উত্ত্যক্ত না করিয়া তিনি অন্ত ঘরে চলিয়া গেলেন । অমরের সঙ্গে হঠাৎ এ ভাবে সাক্ষাৎ হওয়াতে মমতা যে অত্যন্তই বিচলিত হইয়াছে তাহা তিনি বুঝিতেই পারিয়াছিলেন। কারণটাও অনুমানে অনেকটাই বুঝিয়াছিলেন। র্তাহারই মেয়ে ত? অদৃষ্টও যে তাহার মত হইবে তাহ আর বিচিত্র কি ? কিন্তু যামিনীর মা-ই র্তাহাকে আজীবন তুষানলে দগ্ধ হইবার ব্যবস্থা দিয়া গিয়ছিলেন, যামিনীকে এখন ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখিতে হইবে তিনি কন্যার জন্য কি ব্যবস্থা করেন । হয়ত নিজের ভবিষ্যৎ জীবন আরও কণ্টকাফুল হইয়া উঠিবে, কিন্তু মমতাকেও কি নিজের মত ধনৈশ্বর্ষ্যের রাক্ষসীর সম্মুখে তিনি বলি দিতে পারিবেন ? মমতা অনেক ক্ষণ গুইয়া পড়িয়া রহিল। মা নিশ্চয়ই এখন তাহাকে নানা কথা জিজ্ঞাসা করিবেন। মমতা সব তাহাকে ভাল করিয়া গুছাইয়া বলিতে পারিবে কি ? মা হয়ত তাহার রকম সকম দেখিয়াই অনেকটা বুঝিতে পারিয়াছেন। সব জানাজানি হইয়া গেলে লোকে তাহাকে কি মনে করিবে ? অমরই বা তাহাকে কি মনে করিল ? মমতা ত জানে না অমরের মনের ভাব কি ? সবই ত তাহার আন্দাজ ? অমরের হৃদয়ে মমতার হয়ত কোন স্থানই নাই, কিন্তু মমতা ষে তাহাকে কি চোখে দেখিয়াছে, তাহা ত সে বোধ হয় প্রকাশই করিয়া কেলিল ? মাগো, এ লজা সে রাখিবে cख्रीषांब ? ● বামিনী এমন সময় ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকিয়া মমতার পাশে জাসিয়া বসিলেন। তাহার মাথায় হাত বুলাইতে বুলাইতে লিনা লি,“নিম্নভালবাে লৱৰি ৰাr به مساس-هه ها - - tూRS মমতা বলিল, “হ্যা মা, এইবার উঠব।” - যামিনী বলিলেন, “থাক একেবারে খাবার সময় উঠে । ঐ অমর ছেলেটির সঙ্গে তোমার কোথায় আলাপ হ’ল ?” মমতা বলিল, “ছায়ার জন্মদিনে যে তাদের বাড়ি নেমস্তন্ন খেতে গিয়েছিলাম, সেইখানেই আলাপ হয়েছিল। যামিনী বলিলেন, “ও, ঐ একদিনেরই আলাপ ?” মমতার যেন লজ্জায় মাথা কাটা,াইতে লাগিল। এক দিনের আলাপে এমন করিয়া আর কেহ কি হায়দান করিয়া বসিয়াছে ? মা কি তাহাকে পাগল মনে করিতেছেন ? সত্যই ত ক'টা কথাই বা সে অমরের সঙ্গে বলিয়াছে । ছায়ার কাছে গল্প অনেক শুনিয়াছে বটে, কিন্তু সে ত কত লোকেই কত লোক সম্বন্ধে শোনে ? কিন্তু মাকে কি সে বুঝাইবে ? চোখের দৃষ্টি যে কথা বলে, তাহা কি সে বুঝাইতে পারে ? আবার ধীরে ধীরে বলিল, “সেই মিটিঙের দিনও দেখা হয়েছিল।” যামিনীর কাছে অনেকগুলি জিনিষই পরিষ্কার হইয়৷ গেল—মমতা কেনই বা গলার হার খুলিয়া দিল, কেনই বা কলিকাতা ছাড়িয়া এখানে আসিবার জন্ত এমন ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিল। মনে হইল তাহার সম্মুখে শুষ্টয়া এ ফেন মমতা নয়, তাহার কস্তা নয় । যামিনীই যেন নিজের হারান তরুণীজীবনে ফিরিয়া গিয়াছেন, তিনিই যেন অসহ হৃদয়বেদনায় লুষ্ঠিত হইতেছেন। যাহাকে আর জীবনে কোন দিন দেখিবেন না, সেই হতভাগ্য বঞ্চিত প্রতাপের মুখ তাহার মানস দৃষ্টির সামনে ভাসিয়া উঠিল। নিজের জীবনের যত জাল', যত ব্যর্থতা, অপমান, সব ত তিনি সেই প্রথম জীবনের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি বলিয়া মানিয়া লইয়াছিলেন। নারীর জন্মগত একমাত্র অধিকার, সে অধিকার প্রাণ দিয়া ভালবাসিৰরি, অস্তের প্রাণঢালা ভালবাসা পাইবার। সেই স্বত্ব তিনি ধনের পরিবর্ভে বিক্রয় করিয়াছিলেন। কিন্তু ঐশ্বধ্য র্তাহাকে বিন্দুমাত্র স্থখ বা শান্তি দিতে পারে নাই। জাঙ্গ কি ভগবান এই ভাবে তাঁহাকে প্রায়শ্চিত্ত করিবার স্ববিধ জুটাইয়া দিলেন। ষে-অধিকার হইতে নিজেকে তিনি বঞ্চিত করিয়াছিলেন, কস্তার জন্ত সেই অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখিবার চেষ্টায় নিজেকে যদি ভিখারিণীও হইতে হয়, তাহা হইলে তাহার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হইবে কি ?