বৈশাখ কেন, শুধু ছাত্রদের বেতন হইতে ঐ সব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিৰ্ব্বাহিত হয় না-সরকারী সাহায্য, ডিষ্ট্রক্ট বোর্ড ও মিউনিসিপালিটির সাহাষা, প্রদত্ত গচ্ছিত টাকার সুদ, বার্ষিক ও মাসিক চাঁদা, অষথেষ্ট বেতনভোগী শিক্ষাদাতাদের ত্যাগ প্রভূতি হইতে আংশিক ব্যয় নিৰ্ব্বাহিত হয়। অতএব, খুব উচ্চ বেতনের সরকারী শিক্ষণপ্রতিষ্ঠানের বেতন পূর্ণমাত্রায় দিয়া র্যাহারা শিক্ষা পান, তাহারাও র্তাহাঁদের শিক্ষার জন্ত সৰ্ব্বসাধারণের নিকট কতকটা ঋণী। অপরকে শিক্ষা দিয়া, নুনিকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থ দিয়া, আমরা এই ঋণ হইতে মুক্তি পাইতে পারি। এই ঋণ শোধ করিতে আমাদিগকে বাধা করিবার নিমিত্ত সোভিয়েট রাশিয়ার মত আইন আমাদের দেশে হইবে না। এরূপ নিয়ম অমাদিগকে স্বয়ং প্রণয়ন করিয়া নিজেদের উপর প্রয়োগ করিতে হইবে । স্বাধীন নানা দেশে সমর্থ বয়সের প্রত্যক হুস্থ অবিকলাঙ্গ পুরুষকে নির্দিষ্ট কয়েক বৎসর সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করিয়া যুদ্ধ করিবার জন্ত প্রস্তুত থাকিতে এবং, প্রয়োজন হইল, পৃদ্ধ করিতে হয়। ইহাকে কম্প ক্রিপশুন, বলে। এরূপ নিয়মের সমর্থক যুক্তি এই, যে, বাহারা দেশরক্ষার আয়োজন থাকায় দেশের স্বাধীনতার ও নিরাপত্তার সৃষিধা ভোগ করে, সামর্থ্য থাকিলে দেশরক্ষার কাজ করিতে তাহারা বাধ্য। এই যুক্তির অনুরূপ যুক্তিমাৰ্থ অবলম্বন করিয়া আমরা বলিতে পারি, র্যাহারা দেশের সভ্যতা ও শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগে শিক্ষা পাইয়াছেন বা পাইতেছেন, শিক্ষা-বিস্তারের কাজে যোগ দেওয়া তঁহাদের কৰ্ত্তব্য। এইরূপ কথা আমিরা আগে আগে অনেক বীর লিখিয়াছি, অনেক বক্তৃতায় বলিয়াছি। কিন্তু তদনুসারে কাজ যত দিন অন্ততঃ কোন কোন শহরে ও গ্রামে না হইতেছে, তত্ত দিন এই সব কথার ও যুক্তির পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন থাকিবে । কথিত হইতে পারে, আবালবৃদ্ধবনিতা আল্লাধিক শিক্ষাপ্রাপ্ত দেশের সব মানুষকে যে শিক্ষাদাতার কাজ করিতে বলা হইতেছে, এ আহবানে সকলে সাড়া দিবে নাঅধিকাংশ লোকেই সাড়া দিবে না ; সুতরাং এরূপ পরামর্শ না দেওয়াই ভাল। এরূপ আপত্তি সম্বন্ধে আমাদের বক্তব্য এই, অরাজনৈতিক শিক্ষাসমিতি কেন চাই S'LA যে, আমরা বাল্যকালে বর্ণপরিচয়ের বহি হইতে আরম্ভ করিয়া নানা সদগ্রন্থে নানা উপদেশ পড়িয়া আসিতেছি, বহু উপদেষ্টার মুখে বহু উপদেশ শুনিয়া আসিতেছি । সমুদয় পাঠক ও সমুদয় শ্রোতা সমস্ত উপদেশ সকল সময়ে পালন করেন না—হয়ত অধিকাংশ পাঠক ও শ্রোতা অধিকাংশ উপদেশ অনক সময়ে ভুলিয়া থাকেন বা অবহেলা করেন । কিন্তু তা বলিয়া উপদেশগুলি দেওয়া উচিত হয় নাই বা সেগুলি অনাবগুক এরূপ বলা সঙ্গত নহে। নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্ত আমরা যে আগ্রহ দেখাইতেছি এবং পস্থার ঘে আভাস দিতেছি, তাহীও সেইরূপ সৰ্ব্বানুমোদিত ও সৰ্ব্বজনগ্রাহ বা সকলের কিংবা অনেকের দ্বারা অনুস্থত না হইতে পারে। আযালবৃদ্ধবনিতা কতক শিক্ষা-প্রাপ্ত লোকেও যদি নিরক্ষরতা দূর করিতে বদ্ধপরিকর হন, তfহাও সস্তোষের বিষয় হইবে, এবং সুফলপ্রদ হইবে। ছোট বড়, পুরুষ নারী, প্ৰতোকেই চরথায় হত্য কাটিবে, মহাত্মা গান্ধীর উপদেশ অনুরোধ এই রূপ। কাজ তদনুসারে হয় নাই, কিন্তু তথাপি তিনি এই আদর্শটি ছাড়িয়া দেন নাই। সকলেই লিখনপঠনক্ষম হইবে, ইহা তহি অপেক্ষ সংকীর্ণ বা কম আবিখ্যক আদর্শ নহে। ইহা বাস্তবে পরিণত করিবার উপায় অবলম্বনও অসম্ভব নহে । অরাজনৈতিক শিক্ষাসমিতি কেন চাই নিরক্ষরতা দূর করিবার ভার অরাজনৈতিক কোন সমিতি বা প্রতিষ্ঠান লইলে ভাল হয় কেন বলিয়াছি, তাহার কিছু কারণ বলিতেছি । মানবজীবনের ও রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীর কোন বিভাগই অন্ত সব বিভাগ হইতে সম্পূর্ণ সম্পর্কবিহীন নহে। রাষ্ট্রনীতির সহিত শিক্ষার সম্বন্ধ নাই বলিলে ঠিক হইবে না—সম্বন্ধ আছে । কিন্তু সীমান্ত পণ্যদ্রব্য প্রস্তুত করিতে হইলেও শ্রমবিভাগ অবিশ্বক । দিয়াশলাইয়ের কাঠি যে-শ্রমিকের প্রস্তুত করে, তাহারাই উহার বাক্স, বাক্সের উপরকার প্রলেপ, বাক্সের উপরকার সচিত্র নামপত্রমুদ্রণ প্রভূতি করে না, এসব কাজ অন্ত শ্রমিকরা করে। দেশের সরকারী কাজের বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যরক্ষা প্রভৃতি বিভাগ পৃথক । তদ্রুপ, বেসরকারী লোকহিতপ্রচেষ্টাতেও শ্রমবিভাগ আবগুক । তাহাতে একনিষ্ঠ একাগ্র কক্ষী পাইবার
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।