পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S83 বলিয়াছেন, ভারতবর্ষকে পরিণামে ডোমীনিয়ন করা হইবে বলিয়া আগে আগে যে আশ্বাস দেওয়া হইয়াছিল তাহ অপরিবর্তিত ও অক্ষুণ্ণ আছে । মৌখিক আশ্বাসটা আবার আওড়ান হইল বটে ; কিন্তু বর্তমানে ভারতবর্ষের ষে কন্সটিটিউশুন আছে তাহা যদি বা কালক্রমে ডোমীনিয়নত্বে পরিণত হইতে পারিত, নুতন যে আইন হইতেছে তাহ সে পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করিয়া দিতেছে। ভারত গবন্মেণ্ট বিলের ১০৮ ও ১১০ ধারা সম্বন্ধেগত মার্চ মাসে যখন পালেমেণ্টে তর্কবিতর্ক হয়,তখন সেই উপলক্ষ্যে ভারতবর্ষের প্রতি অত্যন্ত সদয় কোন সভ্য বলেন, যে, ভারতবর্ষ এই আইন দ্বারা ডোমীনিয়নগুলির চেয়ে বেশী ক্ষমতা পাইতেছে ? তাহার প্রতিবাদ করিয়া বিলাতের এটণী-জেনার্যাল স্তর টমাস ইন্সকিপ বলেন, “কোন ডোমীনিয়নের সম্বন্ধে তাহার সম্মতি ব্যতিরেকে আইন প্রণয়ণ করা বহু বৎসর হইতে ব্রিটিশ পালেমেণ্টের পক্ষে কন্সটিটিউশুন-বিরুদ্ধ হইয়াছে, কিন্তু ব্রিটিশ পালেমেণ্টের পক্ষে ভারতের জন্ত আইন প্রণয়ন করা কেবল যে বৈধ ও কন্সটিটিউশুনসম্মত হইবে তাঁহা নহে, বস্তুতঃ পালেমেণ্টের জন্ত এরূপ ক্ষমতা স্পষ্টতঃ রক্ষিত হইয়াছে এবং ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভা কোন ডোমীনিয়নের ব্যবস্থাপক সভার মত স্বাধীন হইবে না।” নুতন ভারতশাসন আইনে ব্যবস্থা করা হইয়াছে, যে, ভারতীয় ব্যবস্থাপক সভা পালেমেণ্টে পাস করা কোন ভারতবর্ষসম্বন্ধীয় আইন নাকচ করিতে বা পরিবর্তন করিতে পরিবে না অর্থাৎ ব্রিটিশ গবন্মেন্টের ইচ্ছা যে ভারতবর্ষকে চিরকালই শাসনবিধির কোন পরিবর্তন করিতে হইলে ব্রিটিশ পালেমেণ্টের দ্বারস্থ হইতে হইবে। ইহা অতি চমৎকার ডোমীনিয়ন ষ্টেটস ! আমরা চৈত্রের প্রবাসীতে দেখাইয়াছি, ভারতবর্ষের বড়লাট এবং অন্ত লাটের স্বাধীন হিন্দু বৌদ্ধ খ্ৰীষ্টিয়ান মুসলমান নৃপতিগণের অপেক্ষ অধিক ক্ষমতা পাইবেন । ইহা সুবিদিত, যে, নূতন আইন অনুসারে ভারতবর্ষের রাজস্বের শতকরা আশী অংশের উপর ব্যবস্থাপক সভার সদস্তদের কোন হতেই থাকিবে না, সামরিক-বিভাগ, পররাষ্ট্রবিভাগ, মুদ্র, বিনিময় প্রভৃতির উপর কর্তৃত্ব থাকিবে না, ভারতীয় পণ্যশিল্প বাণিজ্য ও যানবাহনের উন্নতি করিবার I I $* SN98'R ক্ষমতা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ হইবে—না-থাকার সমান হইবে, মন্ত্রীরা সিবিলিয়ানদের হাতের পুতুল হইবেন, সিবিলিয়ানরা মন্ত্রীদিগকে ডিঙাইয়া গবর্ণরের কাছে গিয়া খবর দিতে ও সলাপরামর্শ করিতে পারিবে, পুলিস মন্ত্রীদিগকে সব খবর জানাইতে বাধ্য থাকিবে না, ইত্যাদি, ইত্যাদি । দেশী রাজ্যের রাজাদিগকে যেরূপ অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হইয়াছে এবং হিন্দুরা ভারতবর্ষে সংখ্যাভূমিষ্ঠ হইলেও তাহাদিগকে যে অৰ্দ্ধেকেরও কম আসন ব্যবস্থাপক সভায় দেওয়া হইয়াছে, ইত্যাদি নুতন ভারতশাসন আইনের চমৎকারিত্ব বহুবার প্রদর্শিত হইয়াছে। অস্ততঃ এক জন কেহ ইণ্ডিয়া বিলটি আদ্যোপাস্ত পড়িয়া এবং এ-পর্য্যস্ত উহার যতগুলি ধারা গৃহীত হইয়াছে তৎসম্বন্ধে বক্তৃতাদি পড়িয়া দিনাজপুর সম্মেলনে একটি বক্তৃতা করিলে ভাল হয়। অবশ্য তাহাতে আইনের কোন পরিবর্তন হইবে নী—কেবল শ্রোতৃবর্গের জ্ঞান বৃদ্ধি হইবে । পালেমেণ্টের আলোচনায় এই বিলটি ভারতবর্ষের পক্ষে ক্রমশঃ অধিকতর অনিষ্টকর ও শৃঙ্খলবৎ হইতেছে। বিনা-বিচারে বন্দীদের মুক্তির চেষ্টা বিনা বিচারে যে কয়েক হাজার বাঙালীর স্বাধীনতা অনির্দিষ্ট কালের জন্ত লুপ্ত হইয়াছে, তাহদের মুক্তির উদ্দেশ্রে ব্যবস্থাপক সভায় প্রশ্ন, খবরের কাগজে আন্দোলন ইত্যাদি বরাবরই হইয়া আসিতেছে । তাহাতে বিশেষ কোন ফল হয় নাই। সাধারণ ভাবে মুক্তি তখন হইবে, যখন গবন্মেট বুঝিবেন, বিদ্রোহের ইচ্ছা ভারতবাসীর হৃদয় হইতে লোপ পাইয়াছে। গবন্মেন্টের কখনও এরূপ উপলব্ধি হইবে কিনা, তাহা গবন্মেণ্টনামধেয় ব্যক্তিরাও বোধ করি জানেন না। বস্তুতঃ ভারতবর্ষ যত দিন ইংরেজের প্রভুত্বের অধীন থাকিবে, তত দিনই শাসকদের মনে এই সন্দেহ থাকিবে, যে, শাসিতেরা বিদ্রোহচিস্তা করিতে পারে। কারণ, প্রত্যেক মনুষ্যই নিজের মনের গতি অনুসারে অন্তদের মনের গতি অনুমান করিয়া লইয়া থাকে । প্রাচীন কাল হইতে একটা রীতি চলিত আছে, যে, কোন রাজ সিংহাসন আরোহণ করিলে বা তাহার অভিষেক-বৎসরের স্মারক কোন উৎসব হইলে তখন