মণিপুরের কোম ও চিরু জাতি তাহাদের পুত্র বা কন্ত গ্রামের কোন যুবতী বা যুবককে ভালবাসে এবং সেই অনুযায়ী তাহারণ বিবাহের প্রস্তাব করেন। প্রথম প্রস্তাবের দিন বরের পিতা একটি শূকর ও এক বোতল “জু” লইয়া কস্তার পিতার বাড়িতে যান । তথায় কস্তার পিতাকে বরের পিতা আনীত শুকর ও “জু”র বোতল দেন। যদি কস্তার পিতা গ্রহণ করেন, তাহ হইলে বুঝিতে হইবে যে তিনি তাহার কস্তাকে উক্ত ব্যক্তির ছেলের সহিত বিবাহ দিতে সম্মত । তখন উভয়ের মধ্যে কস্তাদানের ধৌতুক সম্বন্ধে আলোচনা চলিতে থাকে। কোমদের মধ্যে বিবাহের সময় বর বা বরের পিতা কস্তার পিতাকে দুইটি গরু, একটি মিথান ও চারি বোতল “জু” দিয়া থাকেন। অবশ্য এই কস্তাদানের যৌতুক সকলক্ষেত্রে সমান হয় না ; তবে কন্ত স্বঙ্গরী বা কুৎসিত সে হিসাবে যৌতুকের বিশেষ কোন পার্থক্য হয় না। প্রথম প্রস্তাবের দিন বরের পিতা কস্তার যৌতুক ও বিবাহের তারিখ ঠিক করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসেন । তাহার পর বিবাহের দিন বর তাহার পিতা মামা ও গ্রামের অন্তান্ত বন্ধুবান্ধবদিগকে সঙ্গে করিয়া কস্তার বাড়িতে যায় । সেখানে কস্তার পিতা আগত অতিথিদিগের আহারাদির জন্ত বিশেষ বন্দোবস্ত করিয়া থাকেন। যদি তাহার অবস্থা ভাল হয় তাহা হইলে তিনি অন্ততঃ একটি মিথান ও দু-তিনটি শূকর মারিয়া থাকেন । বিবাহের আচারাদি খুব সাধারণ রকমের । গ্রামের সকল লোক কস্তার বাড়িতে আসিলে পর “মাকো” বা গ্রাম্য পুরোহিত সকলের সমক্ষে একটি মুরগী কাটিয়া থাকে। মরিবার সময় যদি মুরগীটির দুই পা একত্রে থাকে তাহা হইলে বুঝিতে হইবে ষে বর ও কন্তীর সন্মিলন চিরস্থায়ী হইবে । তখন বর ও কল্পকে একটি জু-পাত্র হইতে দুইটি নল দ্বারা জু টানিতে বলা হয় এবং এই একত্র জু-পানই বিবাহবন্ধনের মূল স্বত্র। ইহার পরে সমাগত অতিথি ও গ্রামের স্ত্রী-পুরুষ সকলে মিলিয়া নানা প্রকার আমোদ-প্রমোদ ও নাচগান করিয়া থাকে অনেক সময় এইরূপ উৎসব দু-তিন পৰ্য্যস্ত ক্রমাগত চলিয়া থাকে। যাহা হউক, উৎসৰ অস্তে গ্রামের লোকের ও অতিথিগণ নিজ নিজ বাড়ি চলিয়া যান, এবং নবদম্পতি তাহাজের নূতন বাড়িতে আলাদা সংসার পাতিয়া Ywea জীবনযাত্রা মুরু করে। বিবাহের পুৰ্ব্বে যে মুরগীটি মারা হয়, যদি মরিবার সময় পা দুইটা পৃথক হইয় থাকে তাহ হইলে বুঝিতে হইবে যে বর ও কস্তার মিলন স্থায়ী হইবে না । এইরূপ স্থলে সচরাচর বিবাহ স্থগিত রাখা হয় । তথন অন্তর বিবাহের ব্যবস্থা করা হইয়া থাকে । আহাৰ্য্য সম্বন্ধে কোম ও চিরুদিগের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য নাই । তাহার। আমাদেরই মত ভাত খায়, তবে তরকারী প্রভৃতির বিশেষ ব্যবস্থা নাই। ইহারা টাটুকী মাছ হইতে শু"টুকি মাছ বেশী ভালবাসে । মাদক দ্রব্য ইহারা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে । বলিতে গেলে তাতের পরে ইহাদের প্রধান খাদ্য মদ । জু নামক এক প্রকার মদ কোম ও চির প্রভৃতি জাতিরা প্রস্তুত করিয়া থাকে। তিন মাসের শিশু হইতে বৃদ্ধ পধ্যস্ত স্ত্রীপুরুষ সকলেই অবাধে জু থাইয়া থাকে। উৎসব প্রভৃতির কথা ছাড়িয়া দিলেও কোম ও চিরুরা প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ জু খাইয়া থাকে। অনেক সময় ভাত খাওয়ার পরে জলের পরিবর্তে জু-ই খাইয়া থাকে। দেবদেবীর পূজাতেও যথেষ্ট পরিমাণ জুর সদ্ব্যবহার হয় । অধিক জু ব্যবহারের দরুণ সকল মণিপুরী জাতির মধে স্বাস্থ্যহানির লক্ষণ দেখা যায় ইহা ছাড়া কোম বিশেষ করিয়া চিরু জাতিদের আর্থিক দুৰ্গতির একটি প্রধান কারণ অত্যধিক মাত্রায় মাদক দ্রব্য ব্যবহার । অনেক সময় দেখিতে পাওয়া যায় এক জন চিরু নিকটস্থ বাজারে কলা, কুমড়া ইত্যাদি বিক্রয় করিয়া যে দু-চার অনা পয়সা রোজগার করে তাহার অধিকাংশ w খাইতে ব্যয় করিয়া ফেলে এবং সন্ধ্যার সময় খালি-হাতে পাহাড়ের পথে অৰ্ধ-অচেতন অবস্থায় টলিতে টলিতে বাড়ির দিকে রওনা হয় । চিরু জাতি।—চিরুদের সামাজিক রীতিনীতি সম্বন্ধে কতকটা পূর্বেই বলিয়াছি, এখন শুধু তাঁহাদের আকৃতি ও গঠন সম্বন্ধে কিছু বলিব । শারীরিক আকৃতির দিক দিয়া দেখিতে গেলে চিরুর কোমদিগের তুলনায় অনেক বেণী বৰ্ব্বর বলিয়া মনে হয়। ইহাদের মুখের ভাব অনেকখানি রূঢ় এমন কি হিংস্র বলিলেও অত্যুক্তি হয় না । কোমদের মত চিরুদের মধ্যে
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।