পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ " ΑΕΛ. Ο $N98R বিদু জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখনই দেব কি ?” যামিনী বলিলেন, “ই, এখনই দাও, তাহলে সকালে খেতে পারবে, না হ’লে মাংসটা হয়ত খারাপ হয়ে যাবে ।” እ ঘামিনী আর মমতার খাওয়া শেষ হইতে বেশ ক্ষণ লাগিল না মনত টেবিল ছাড়িয়া উঠিতে উঠিতে বলিল, “বাবা বোধ হয় আজ বারোটার আগে উঠবেনই না । কাল কত রাত্রে তিনি গুয়েছিলেন মা ?” যামিনী বলিলেন, “কি জানি মা ঠিক বলতে পারি না । বারোটা একটার আগে নয় নিশ্চয়ই।” স্বামীর বন্ধুর দলকে তিনি চিনিতেন, রাত্রি তিন প্রহর অতীত ন৷ হইলে তাহীদের উৎসব কখনও সাঙ্গ হয় না। কিন্তু ছেলেমেয়ের সামনে সে-সব কথা তিনি সহজে আলোচনা করেন না । স্থঞ্জিতও বোধ হয় বারোটা পর্যন্তই ঘুমাইত, কিন্তু মায়ের তাড়ায় তাহাকে সাড়ে নয়টার সময়ই উঠিয়া বসিতে হইল । স্নান না করিয়াই থাইতে বসিবার তাহার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু মা তাহাও করিতে দিলেন না । কাজেই স্বজিতের দিনটা বিশেষ ভাল ভাবে আরম্ভ হইল না । তবে স্বরেশ্বর উঠিলেন বেলা বারোটায় এবং স্নান করিয়া অল্প কিছু খাইয়া আবার শুইয়া পড়িলেন। বলিলেন, তাহার শরীর ভাল নাই, এবং ভিনি কোথাও বাহির হইবেন না । স্বজিত বাবার গাড়ীখানা লইয়া কাকার বাড়ি বেড়াইতে চলিল, মাকে জfনfইয়া গেল যে সন্ধ্যার আগে সে বাড়ি ফিরিবে না । মমতারও আঞ্জ বড় আলস্তে ধরিয়াছিল, ভাত খাওয়ার পর একটু গড়াইয়া লইবার ইচ্ছায় গুইবামাত্র সে ঘুমাইয়। পড়িল । যামিনীর দিবানিদ্রা অভ্যাস ছিল না, দিনে ঘুমাইলে তাহার শরীর বড় অসুস্থ বোধ হইত। খাওয়া-দাওয়ার পর খানিক ক্ষণ তিনি কতকগুলি নূভন বাংলা মাসিকপত্ৰ নাড়াচাড়া করিয়া সময় কাটাইয়। দিলেন । তাহার পর সেলাই করিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু মন লাগিল না । ছেলে বাহির হইয়া গিয়াছে, মেয়ে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। স্বামী বাড়ি আছেন বটে, কিন্তু সুরেশ্বরের সঙ্গে তাহার স্ত্রীর সম্পর্ক ক্রমেই যেন কমিয়া আলিতেছে । এক জন না ডাকিলে আর এক জন বড় কাছে ঘেঁষেন না । ডাকটা বেশীর ভাগ সুরেশ্বরের দিক হইতেই আসে, কারণ পত্নীকে বাদ দিয়া এখনও তাহার দিন চলে না । যামিনীর জীবনে হয়ত স্বামীর কোনই প্রয়োজন নাই, অন্ততঃ তাহার বাহিরের ব্যবহারে তাহাই মনে হয়। আজ এখন পর্য্যন্ত সুরেশ্বরের সঙ্গে তাহার সাক্ষাৎ হয় নাই। বাবুর খসি ভূত্য নিতাই তাহাকে খবর দিয়া গিয়াছে যে বাবুর শরীর ভাল নাই, তিনি নীচে যাইবেন না, স্নান করিয়া উপরেই মাছের ঝোল ভাত খাইবেন । একবার খোজ নেওয়া দরকার কিনা, বামিনী তাহাই ভাবিতে লাগিলেন । সুরেশ্বর যদি খাইয়াদাইয়া ঘুমাইয় থাকেন, তাহ হইলে অনর্থক তাহাকে বিরক্ত করিয়া লাভ নাই । বিনা প্রয়োজনেও যে-মনের টানে ছুটি মানুষ সারাক্ষণ পরম্পরকে কাছে চায়, সে মনের টান এই দুটি মানুষের ভিতর নাই । সুরেশ্বরের অবগু নিজের দরকার হইলেই আসেন বা ঘামিনীকে ডাকিয়া পাঠান, কিন্তু যামিনী সৰ্ব্বদাই তাহার কাছে যাইবার আগে চুল চিরিয়া বিচার করিতে বসেন, র্তাহার যাইবার প্রয়োজন পুরাপুরি আছে किन ! কিছু ক্ষণ ভাবিয়া তিনি অবশেষে উঠিয়া পড়িলেন । গরমে পায়ের তলা জালা করিতেছিল, চটিজোড়া ছাড়িয়া রাখিয়া খালি পায়েই স্বামীর ঘরের দিকে চলিলেন । ঘরের দরজা ভেঙ্গান, তবে ভিতর হইতে খিল বন্ধ নাই। পাখা চলার শব বাহির হইতে শোনা যাইতেছে। গ্রীষ্মকাল আরম্ভ হইবামাত্র হরেশ্বর চব্বিশটা ঘণ্টাই প্রায় পাথার তলায় কাটাইতে আরম্ভ করেন । মমতা বলে, “বাবা পারলে ইটা-চলার সময়ও একটা পাখা মাথার উপরে ঝুলিয়ে রাখেন ।” সুরেশ্বর বলেন, “বিজ্ঞানের আর একটু উৰ্ব্বতি হোক, তখন এ দুঃখটাও আমার যাবে।” যামিনী দরজাটা আস্তে আস্তে ঠেলিয়া একটু ফাক করিয়া দেখিলেন । সুরেশ্বর গুইয়া আছেন, তবে তাহার পিঠ দরজার দিকে, ঘুমাইতেছেন কিনা ঠিক বুঝা যাইতেছে না । ঘামিনী ধীর পদক্ষেপে খাটের পাশে আসিয়া দাড়াইলেন । হরেশ্বর ঘুমাইয়াই আছেন ।