পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ প্রবাসী বাঙালী ও স্বাস্থ্যরক্ষা ২২৭ এক বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালী ছাত্রীবাসে পচিশ জন ছাত্রের মধ্যে চৌদ্দ জন ছাত্র বেরিবেরি রোগে আক্রাস্ত হইয়াছেন। অবাঙালী ছাত্রদের এ রোগ হয় নাই । অভ্যাসদোষে ও আলস্যবশে যদি উচ্চশিক্ষিত বাঙালী ছাত্ররা এরূপে নষ্টস্বাস্থ্য হইয়া পড়েন তবে প্রতিযোগিতায় ভারতের অন্ত দেশীয়দের সমকক্ষ হওয়া দূরের কথা। প্রবাসে পাশাপাশি বাস করিয়াও বাঙালীরা ষে অবাঙালীদের গুণগ্রহণ করেন না তাহার আরও উদাহরণ দেওয়া ষাইতে পারে । সন্দেশ রসগোল্লা বাঙালীর আদর ও শ্লাঘার উৎকৃষ্ট মিষ্টাক্স সে-বিষয়ে সন্দেহ নাই ; কিন্তু অবাঙালীরা উহ। কেন তত পছন্দ করেন না এবং তৈরি করিতেও বাঙালীর সমকক্ষ হইতে চেষ্টা করেন না, তাহার কারণ ভাবিবার বিষয়—ছানা করিলে দুধ কাটাইতে হয়— ফুধে যে জীবনীশক্তি আছে তাহা নাশ করা হত্যার মত পাপ তাই ঠাহীরা উচ্ছা করিতে চান না । বাঙালীরা ইহা ভুল বিশ্বাস বলিয়া একটু হাসিবেন বটে, কিন্তু ইহাতে তাহাদের মুখাদ্য বিচারের নিগূঢ় তত্ত্বজ্ঞান আছে তাহ দেখেন না । দুধ কাটাইলে ছানার জল বাঙালীরা অকেজো মনে করিয়া ফেলিয়া দিয়া দুধের যথেষ্ট পরিমাণ সহজপাচ্য সারাংশ অপচয় করেন । অবাঙালীরা দুধ জমাইরী দুই হইতে স্কৃত বাহির করিয়া তাহার জলীয় ভাগ নানা প্রকারে খাদ্যরূপে ব্যবহার করেন,কিছু অপচয় হয় না। ছানার জল ও দইয়ের জল প্রায় একই জিনিষ বাহাকে “ছাস বলা হয় । ইহা অতি উপাদেয়, পুষ্টিকর পানীয়। এই ছাস দিয়া বাজরা যব বা গমের চুর্ণ সিদ্ধ করিয়া এক উত্তম সুস্বাছ খাদ্য প্রস্তুত হয়, ষাঁহাকে রাবড়ি বলে। এই রাবড়ি ঠাণ্ডা হইলে খাইতে হয় । কৃষকের বা শ্রমজীবীরা দুখানি মোট রুটি ও কিছু রাবড়ি লইয়া অতি প্রত্যুষে নিজ নিজ কৰ্ম্মস্থানে যায় এবং সময়মত তাহাম্বারা ক্ষুৎপিপাসা নিবারণ করিয়া শারীরিক স্বাস্থ্য অটুট রাখে। এই ছাসের সহিত খুদ (ভালের খুদ ) বা খুদের বেসন সিদ্ধ করিয়া স্বস্বাক্স স্নিগ্ধকর ও বলকারক এক প্রকার ব্যঞ্জন প্রস্তুত হয় বাহাকে “কহড়ী” বলে। ইহাতে তাহদের গৃহিণীদের মিতব্যয়িতা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞানের সহিত পরিচয় আছে তাহা জানা যায় ] স্বাস্থ্যরক্ষার স্ববিবেচিত খান্ডের যেমন প্রয়োজন, স্বনিয়মে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরিচালনাও তজপ । তাছা অপেক্ষা অধিক প্রয়োজনীয়, বিশুদ্ধ জল ও নিৰ্ম্মল বাতাস । কিরূপে উপযুক্ত থাপ্ত খাওয়া যায়, বিশুদ্ধ জল ও নিৰ্ম্মল বাতাস কিরূপে পাওয়া যায়, সে-বিষয়ে শিক্ষার প্রতি শিশুকাল হইতে অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রাখা উচিত। আধুনিক সভ্যতাৰিস্তারের সঙ্গে যেমন সুখ-সুবিধাবাড়িতেছে তেমনি অভাব-অসুবিধাও বাড়িতেছে। মুষ্টিমের কতকগুলি লোক সোনায় দানায় লক্ষ্মীলাভ করিতেছেন বটে, কিন্তু আপামর সাধারণে দুঃখ-দারিদ্র্য মাথায় বহিয়া জীবন দুৰ্ব্বিষহ মনে করিতেছে । অনুসন্ধানে ইহার দু-একটি প্রধান কারণ পাওয়া যায়, তাহা অলসতা ও অজ্ঞতা। উপযুক্ত শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান প্রদান করে, এবং জ্ঞান প্রাপ্ত হইলে সহজেই সৰ্ব্ববিষয়ে ক্ষমতা লাভ হয় । কাৰ্য্যকরী শিক্ষার অভাবেই সভ্যতার সুফল লাভ হয় না । ইহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখিতে হইলে কলিকাতা হইতে বেশী দূর যাইতে হইবে না, হুগলী নদীর তীরবর্তী পাটকলের সাহেবদের ইন্দ্রপুরীতুল্য প্রাসাদ, নন্দনকাননসদৃশ উপবন, এবং সুস্থ ও সবলকায় অধিবাণীর সহিত সমুদ্ধিশালী কিন্তু স্বাস্থ্যহীন পার্শ্ববৰ্ত্তী বাঙালী বড়লোকের তুলনা করিলে তাহা झसिष्ट्रक्रम क्षुम्न | জীবনপ্রদ স্বৰ্য্যালোক, বিশুদ্ধ বায়ু, নিৰ্ম্মল পানীয় ও উপযোগী খাস্তে কি দরিদ্র কি ধনী সকলেরই সমান অধিকার । আমেরিকার পানামা দেশ, ইতালীর বিভিন্ন প্রদেশ, এমন কি নূতন তুরস্কের এঙ্গোর রাজ্যের কতিপয় প্রদেশ যাহা ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের জন্ত মনুষ্যবাসের অযোগ্য ছিল, তাহা উদ্যোগী পুরুষসিংহদের চেষ্টায় ধনধান্তে, মুখে, স্বাস্থ্যে আদর্শ ভূমিতে পরিণত হইয়াছে। ধীশক্তিঅভিমানী বাঙালীরা একনিষ্ঠ হইয়! চেষ্টা করিলে তাহীদের সোনার বাংলাকেও এরূপ ব্যাধি-বিবর্জিত করিতে পারেন না কি ? বাঙালীদের দুরবস্থার সমস্ত উঠিলেই অনেকে তাহার কারণ অন্তের উপর, ভাগ্যের উপর এবং পরাধীনতার উপর আরোপ করিয়া নিজেকেই এক প্রকার প্রতারণা