আশষাড় গৌত.মর শিক্ষা ও সাধনা অবলম্বন করিয়া যে বিস্তৃত বৌদ্ধ-শাস্ত্রের স্বষ্টি হইয়াচে তাহা দেখিলে একটি কথা স্বম্পষ্ট হয় যে তাহার সাধনা বিশাল ও নানামুখী ছিল এবং সেই জন্ত নানাদিক দিয়া ইহা বুঝিতে চেষ্টা করা ধাইতে পারে । গভীর আত্মদৃষ্টি, আত্মবিশ্লেষণ ও দর্শনের ফলে তিনি ষে মহান সত্য লাভ করিয়াছিলেন, আধুনিক পণ্ডিত-সমাজ তাহার গৃঢ়মৰ্ম্ম কত দিনে আয়ত্ত করিতে পারিবেন তাহ বলা কঠিন । জগৎ, জীব, মানব, কৰ্ম্মফল, জন্মস্তিরযfদ, মানবাত্মা, পরমাত্মা, ইত্যাদির সভা ও পরস্পরসম্পর্ক বিচার—সমস্তই সিদ্ধার্থের দৃষ্টিচক্রবালের অন্তর্গত এবং পণ্ডি.তরাই ইহায় প্রকৃত অধিকারী, কিন্তু যে ধৰ্ম্ম ও আদর্শ জনসাধারণের উপযোগী বলিয়া তিনি মনে করিলেন এবং সেই জন্ত তাহীদের মধ্যে চিরজীবন প্রচার করিয়া গেলেন তাহা সেই জনসাধারণের দিক দিয়া দেখা অসঙ্গত হইতে পারে না । জগতে ষত প্রকার "ধৰ্ম্ম” দেখা যায় তাহার প্রায় সকলগুলিই আপ্তবাক্য বা সাক্ষাৎ অনুভূতি—Revelation বা Inspirationএর উপর প্রতিষ্ঠিত । ইহাই ধৰ্ম্মের সৰ্ব্ববাদিসম্মত সংজ্ঞা । মানুষ ভগবানের নিকট হইতে সত্য লাভ করে, স্বৰ্গ হইতে বাণী অবতীর্ণ হয়, ভগবান আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রেরণ করেন এবং সেই সকল সত্য, বাণী ও অনুভূতির উপর "ধৰ্ম্ম” প্রতিষ্ঠিত হয় । বেদ মানব-রচিত নকে, আপ্তবাক্য ; অনস্তজ্ঞানস্বরূপ যে পরমাত্মা তাহার নিকট হইত ঋষিরা বেদের বাণী লাভ করিয়াছিলেন, উপনিষদের বাণী শ্রবণ করিয়াছিলেন, এবং তাহারই উপর হিন্দুধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত। মুম্বা ভগবানের বাণী শ্রবণ করিলেন । র্তাহীকে অগ্নিময় সত্তারূপে দর্শন করিলেন এবং সিনাই পৰ্ব্বতশিখরে, লোকচক্ষুর অন্তরালে, জিহোবার নিকট হইতে “দশাঙ্গা” প্রাপ্ত হইলেন । ঈশা যখন আধ্যাত্মিক অভিষেক লাভ করিলেন তখন আকাশ উন্মুক্ত হইল এবং সেখান হইতে বাণী অবতীর্ণ ইহঁরা তাহাকে আশীৰ্ব্বাদ করিল। মুহম্মদ ভগবানের নিকট হইতে বারংবার যে বাণী ও আদেশ লাভ করিলেন তাহাতে কোরাণের জন্ম হইল। তর্কচূড়ামণি বিশ্বম্ভর যখন ভক্তচুড়ামণি খ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্তে রূপান্তরিত হইলেন তখন তথ্যগতের সাধনার একটি দিক ONචැෆ්ර শ্ৰীকৃষ্ণের রূপ ও বাণী অবতীর্ণ হইয় তাহাতে এই রূপান্তর সম্ভব করিল। সুতরাং সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে "ধৰ্ম্ম” আধিদৈবিক—মানুষের জ্ঞান ও অনুভূতির অতীত কোনও এক স্থান হইতে ইহা অবতরণ করে বলিয়াই স্বীকৃত হইয়া फोभिटङ८झ । সিদ্ধার্থও মানবদুঃখনিরীকরণের চেষ্টায় প্রথমে এই অধিদৈবিক ধৰ্ম্মের সাধনাতেই নিযুক্ত হইয়াছিলেন, কিন্তু অভীষ্ট সাধনে বিফলমনোরথ হইয়া এ-পথ পরিত্যাগ করিলেন । তাহার দ্যীয় প্রত্যক্ষবাদীর নিকট আপ্তিবাক্যের কোন মুল্য হইতে পারে না, তাহা সহজেই বুঝা ষায়, কেন না আগুবাক্য বা অনুভূতি—Revelation বা Inspiration—সত্যসত্য প্রমাণের বর্হিভূত, অতএব প্রত্যক্ষবাদীর পক্ষে নির্ভরযোগ্য নয়। ইহা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিতান্ত্রিক বা subjective, ইহা লইয়া তর্ক চলে না, অথচ আপ্তবাক্যলব্ধ অনুভূতিগুলি পরস্পরবিরোধী হওয়াও অসম্ভৰ নয়। যেখানে তাহারা পরস্পরবিরোধী সেখানে কোনটি সত্য বা কোনটি মিথ্যা কে প্রমাণ করিবে ? স্বতরাং গৌতম দেখিলেন যে আগুবাক্য দুঃখনিরীকরণপন্থার বা “ধৰ্ম্মের” মূলভিত্তি হইতে পারে না । তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতির মধ্যে কোন বস্তু নিশ্চিত, প্রত্যক্ষ ও আয়ত্তাধীন ? আমাদের আত্মন বা selfই কি সেই বস্তু নয় ? আমাদের নিজ নিজ selfব আত্মনের প্রকৃতি আমর সাক্ষাৎ বা প্রত্যক্ষ ভাবে জানিতে পারি, তাহার “স্ব-রূপ” বিচার করিতে পারি, তাহার ভিতরে যাহা ঘটতেছে তাহা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করিতে পারি, তাহাই প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিকট সত্য, নিশ্চিত ও কল্পনাবিরহিত । সুতরাং তাহার মতে, ‘ধৰ্ম্ম সত্য হইতে হইলে তাহাকে মানুষের self বা আত্মন অথবা মানবপ্রকৃতির ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত হই, ত হইবে, মানবচিত্তবৃত্তিকে (human nature) ধৰ্ম্মের মূলভূমি ধরিতে হইবে। স্থখ-দুঃখের বীজ মানবঅস্তরে নির্কিত, মুখ-দুঃখ তাছার চিত্তবৃত্তিসমূহ হইতে উদ্ভুত, সুতরাং "ধৰ্ম্ম” যদি ছঃখনিরীকরণের ও মুখ লাভের পথ হয়, তবে তাহাও সেই একই স্থান হইতে উদ্ভূত হওয়া উচিত । কিন্তু ‘মানবপ্রকৃতি’ কি ? ইহার সংজ্ঞা, স্বরূপ, অস্তরস্থিত বস্তু কি ? এই স্থানেই মানবপ্রকৃতির বিশ্লেষণ
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।