পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ ৰাংল। শিখাইবার প্রণালী סאב র্তাহার মনে থাকে না। আমার দৃঢ়বিশ্বাস বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শ্রেণীতে নানাগ্রন্থ হইতে পাঠ করিয়া শোনান বাংলা পাঠ্যক্রমের অপরিহার্য্য অঙ্গরূপে নির্দিষ্ট হওয়া উচিত । ইহার জন্ত প্রথমটা হয়ত শিক্ষকের উপযোগী গ্রন্থের তালিকা করিয়া দিতে হইবে, কিন্তু ধীরে ধীরে পরে শিক্ষকগণ আপনারাই আপনাদের উপযোগী তালিকা প্রস্তুত করিয়া লইবেন । এইবার পড়ার কথা বলি। এখানে গোড়াতেই গলদ রহিয়াছে ; যেভাবে বাংলা বর্ণপরিচয় করান হয় তাহাতে ঘে ভাষাশিক্ষার আননা একবারেই চলিয়া যায় এ-কথা পূৰ্ব্বে একাধিক বার উল্লেখ করিয়াছি । ভাষাশিক্ষার প্রথম ধাপ বর্ণ নহে শব্দ । শব্দের সহিত আমাদের প্রথম ও সহজ পরিচয় । শব্দের বিকলনে বর্ণপরিচয় । এই বিকলনী বুত্তি অপেক্ষাকৃত উচ্চাঙ্গের বৃত্তি, ভাষাশিক্ষায় তাহার স্থান দ্বিতীয় ধাপে । “ক” বলিয়া কোন শব্দ ( কথা ) বাংলায় নাই, সেটা ধ্বনিমাত্র ; তাহীর পরিচয় কান শব্দে পাই ; সে শব্দ সুপরিচিত ও নির্দিষ্ট সুতরাং চিত্তাকর্ষক । তাহীর সহিত পরিচয় প্রথম হয় পরে মনের বিকলনী বৃত্তির সাহায্যে আমরা ধ্বনির পরিচয় লাভ করি । এই জন্ত কথা দিয়া আরম্ভ করিয়া কথারই সাহায্যে বর্ণপরিচয় বিধা ন করিতে হইবে । এ ত গেল গোড়ার কথা । তাহার পরে কি ভাবে বাংলা পড়ার শিক্ষণ দিতে হুইবে তাহা সংক্ষেপে আলোচনা করা প্রয়োজন । ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পাঠ্যপুস্তকের অভাবের কথা পূৰ্ব্বেই উল্লেখ করিয়াছি। কিন্তু অল্প যে কয়টি পুস্তক রহিয়াছে তাঁহাদের ব্যবহারও আমরা করি না । তাহার পরিবর্তে একখানি পাঠ্য নির্দিষ্ট করিয়া আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ করি । এ-কথা বিশেষ করিয়া বলা প্রয়োজন যে বাংলার একটি মাত্র পাঠ্যপুস্তক হইতে পারে না । প্রত্যেক ছাত্রকেই নানা গ্রন্থ হইতে সংগ্ৰহ করিয়া এবং নিজে লিখিয়া নিজের নিজের পাঠ্যপুস্তক তৈয়ারি করিতে হইবে। একটি মাত্র পাঠ্যপুস্তকের অন্বয় পদপরিচয় ও ব্যাখ্যা করিতে করিতে তাহা জীর্ণ ও নীরস হইয়া যায়, তাহার দ্বারা ভাষাশিক্ষণ চলে না । অপরের মনোভাবের সহিত পরিচয়-সাধনই যদি পড়ার উদেখা হয় তবে সে পরিচয় যতদূর বহুব্যাপী হয় তাহার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। অধিকাংশ বাঙালী ছেলেমেয়েরই পড়িবার অভ্যাস হয় না : তাহার কারণ শিক্ষকগণের এ-বিষয়ে উৎসাহের অভাব । প্রত্যেক বিদ্যালয়েই সুনিৰ্ব্বাচিত সকল প্রকার বাংলা গ্রন্থের সংগ্রহ থাকা একান্ত আবশ্যক। শিক্ষকগণ ছাত্রদের গ্রন্থনিৰ্ব্বাচনে সহায়তা করিয়া নানাভাবের গ্রন্থ পাঠ করিবার উৎসাহ দিবেন কারণ ইহা ভাষাশিক্ষার আবপ্তিক অঙ্গ । লেখার কথা বলিতে গিয়া প্রথমেই মনে হয় লেখার দুইটি উদ্দেপ্ত, প্রথম নিজের মনোভাব পরের নিকট প্রকাশ করা এবং দ্বিতীয় নিজেকে ব্যক্ত করা । এই দ্বিতীয় প্রকারের রচনা মুখ্যতঃ পরের জন্ত নহে ; আপনার আনন্দে আপনার মনের কথাগুলি প্রকাশ করিবার আগ্রহ স্বাভাবিক । সে প্রকাশের সময় পাঠকের কথা মনে থাকে না। এই শ্রেণীর রচনা রসসাহিত্যের সুতরাং সাহিত্যের উচ্চাঙ্গের পর্য্যায়ভুক্ত । কিন্তু তাহা বলিয়া ইহা যে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অধিকারগম্য নহে এমন নহে ; বরং শিখাইতে পারিলে ছাত্রেরা এ-শ্রেণীর সুন্দর রচনা লিখিতে পারে এবং লিখিয়া আনন্দ লাভ করে । ভাষাশিক্ষায় ইহার স্থান ও মুল্য অনেক উচ্চে । পরের জন্ত যে-সকল রচনা লিখিত হয় বিদ্যালয়ে সেরূপ রচনা লেখার ব্যবস্থা আছে ; কিন্তু রচনার বিষয়নিৰ্ব্বাচনে বিচারের অভাবে সেগুলি অপাঠ্য হয় এবং ছেলেরা সেরূপ রচনা লিখিয়া কোনরূপ আনন্দ বোধ করে না । চতুর্থ বর্গের যে ছাত্রটি "গরু একটি রোমন্থনকারী, চতুষ্পদ জন্তু" বলিয়া আরম্ভ করিয়া গরু সম্বন্ধে যে রচনাটি লিখিল তাহ কোন পাঠকের আনন্দ ও জ্ঞানবৰ্দ্ধন করিবে ? কিংবা ষষ্ঠ বর্গের যে ছাত্ৰীটি “সাধুতাই প্রশস্ততম উপায়” বা “পরিশ্রমই মুখের মুল” শীর্ষক যে নীতিগর্ভ রচনা লিখিল তাহা কাহার জন্ত ? এরূপ রচনা লিখিবার কি উদ্দেশু আছে ? রচনা লেখার একটা সঙ্গত কারণ থাকা চাই । বরং “আমাদের ( ছাত্রের ) গরু” সম্বন্ধে শ্রোতৃবর্গের জানিবার কৌতুহল হইলেও হইতে পারে ; কিংবা কোন ছাত্রী কেমন করিয়া পরিশ্রম করিয়া উন্নতি লাভ করিয়াছে তাহার কাহিনী আমাদের চিত্তাকর্ষণ করিতে পারে। রচনার বিষয়বস্তু নিৰ্ব্বাচন করা শিক্ষকের পক্ষে একান্তু