পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বলিতেন, বঙ্গদেশে তাহার শরীর টিকিতেছে না। বিশেষতঃ তিনি ব্রাহ্মণ-সন্তান, তাহার কি পোষায় রেলে চাকরি । ১৮৯৭ সালে তাহার একবার জর হইয়াছিল। ডাক্তার কুমুত্রবাবু বলিয়াছিলেন, ‘পাওেঙ্গি, এটি বঙ্গদেশ আছে, এথানে একবেলা অল্পভোজন করতে হোবে।’ পাণ্ডেজি হাসিয়া বলিয়াছিলেন, “সে কি ডাক্তার-মোশায়, অন্নভোজন করবে কি ? অন্ন ত বিলকুল পানি।” কিন্তু তদবধি তিনি একবেলা অন্নপথ্য করেন, এ-কথা কে না জানে । এইরূপে বালকের বুদ্ধ হইতে চলিল, বনিতার কুমারীত্ব হইতে দিদিমা পদবী লাভ করিল, কিন্তু পাণ্ডে-মহাশয় তেমনি আচল অটল ভাবে পিতৃপুরুষের দোহাই দিয়া,বঙ্গদেশে এক বেলা অন্নভোজন করিয়া, মাস ভরিয়া রাশি রাশি মালের রিকুইজিসন ও ইহনোট নাকচ মঞ্জুর করিয়া, মাসান্তে বহু বহু নিকাশ দিয়া এবং সৰ্ব্বোপরি কৃষ্ণকায় ভারতীয় অফিসারগণের মুগুপাত করিয়া পঞ্চায়,বৎসরের অপেক্ষা করিতে লাগিলেন । তিনি চাকরিতে ঢুকিবরি সময় নিজের বয়স কত লেখাইয়াছিলেন কেহ জানে না । অতএব র্তাহীর পঞ্চায় বৎসরই বা কবে পূর্ণ হইবে তাহাও কেহ জানিত না । তবে এ-কথা অবশ্রা সকলেই জানিত যে রেলের চাকরি তাহার কোন কালেই পোষায় নাই । অবশেষে সত্যই একদিন বাবু স্বথেন্দ্রলাল পাণ্ডে চাকরি হইতে অবসরগ্রহণের দরখাস্ত দিলেন । প্রথমে কথাটি কেহ বিশ্বাস করে নাই, কিন্তু ঘটনাটি সত্য। ১৯৩০ সাল হইতে রেল-কোম্পানীর দুদিন আরম্ভ হয় ; উপর হইতে হুকুম আসিল যাহারা বহুদিন যাবৎ কাৰ্য্যে নিযুক্ত আছে তাহারা ইচ্ছা করিলে চাকরি হইতে অবসরগ্রহণ করিতে পারে। কোম্পানী তাহাদিগকে পাওনা থাকিলে আঠার মাস পৰ্য্যস্ত পুরা বেতনে ছুটি, প্রভিডেন্ট ফণ্ডের টাকা, ভাতা ইত্যাদি সবই দিবে। পাণ্ডে-মহাশয় এই সুযোগ গ্রহণ করিয়া কার্য হইতে অবসরগ্রহণের পূৰ্ব্বে আঠার মাসের ছুটি লইলেন । একদিন এই সুদীর্ঘ কৰ্ম্মজীবনের শেষসম্বল-স্বরূপ डिन হাজ'র সাত শত সাত টাকা তিন আনার একখানি “চেক’ লইয়। যখন তিনি ‘আসানগুল' আপিস হইতে বহির্গত হইলেন তখন কৰ্ম্মচারী-আহলে যথারীতি বিদায়-অভিনন্দনের অনিৰ্বte ૨૮ আয়োজন হইল, পুপমাল্য-বিভূষিত বাৰু স্বথেন্দ্রলাল পাণ্ডে নিষ্টিচিত্তে বিদায়সঙ্গীত শ্রবণ করিলেন, প্রচুর পরিমাণে জলযোগ করিলেন, ১৮৯৭ সনের জরের বিবরণ এবং তদবধি একবেলা অন্নভোজনের ইতিহাস বর্ণনা করিলেন, গ্রেস্বি, পিচার্ড, কর্ণেল হাণ্টার প্রমুখ অফিসার-পুঞ্জবদের মহিমা কীৰ্ত্তন করিলেন, আলোকচিত্রগ্রহণের সম্মতি দিলেন এবং একরাত্রিতে পথিমধ্যে নানাস্থানে থামিবার অনুমতি সহ দিল্লী পর্যস্ত এক পাস লইয়া ঈ- আই রেলের কোন পশ্চিমগামী গাড়ীর এক দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় আরোহণ করিলেন । বাবু খোলালের আপনার বলিতে কেহ ছিল না । র্তাহার যখন পাঁচ বৎসর বয়স তখন তাহার পিতৃদেব তাঁহাকে পশ্চিমধেশবাসিনী জনৈক তিন বৎসর বয়স্ক কুমারীর সহিত পরিণয়স্থত্রে আবদ্ধ করেন। র্তাহার সাত বৎসর বয়সে পত্ৰযোগে সেই পত্নীর পরলোকগমনবার্তা তাহার পিতৃদেবের চক্ষুগোচর হয়। তৎপরে নবম বৎসর বয়সে বিবাহিত যত্নবর্ষীয় পত্নী এক বৎসর পরে এবং দ্বাদশ বৎসর বয়সে পরিণীত নবমবৰ্ষীরা সহধৰ্ম্মিণী দুই বৎসর পরে একই পন্থা অবলম্বন করিলে তাহার পিতৃদেবেরও স্বৰ্গলোকপ্রাপ্তি ঘটে। তিনি বাচিয়া থাকিলে পুত্রকে কি করাইতেন জানা নাই। কিন্তু পিতার অবর্তমানে পুত্র আর চতুর্থার চেষ্টা করেন নাই । তিনি পিতৃমুখে শুনিয়াছিলেন জৌনপুর জেলার কোন গ্রামে র্তাহার ঘর ছিল কিন্তু স্বগ্রামের প্রতি তাহার কোন আকর্ষণ ছিল না । তাহার ইচ্ছা ছিল গঙ্গাতীরবর্তী কোন ছোট সস্তা ও স্বাস্থ্যকর শহরে ক্ষুদ্র একখানি ঘর ভাড়া করিয়া তিনি জীবনের অবশিষ্ট দিবস কাটাইয়া দিবেন। মনে মনে আর একটি ইচ্ছা ছিল ষে শহরটি এমন হওয়া চাই ষে তিনি দুই বেল ক্লটি খাইয়া হজম করিতে পারেন । চুণার শহরটি নানাদিক দিয়া স্বথেঞ্জলাল বাবুর মনোমত হইল। কিন্তু সমস্ত শহর খুজিয়। তিনি বাড়ি ভাড়৷ করিতে পারিলেন না । যে অংশে হিন্দুরা বসবাস করিত তাহাতে যে দুই-চারিখানা বাসোপযোগী বাড়ি ছিল তাহার কোনটিতে একাধিক যক্ষারোগীর থাকিবার ইতিহাস কর্ণগোচর হইল ; কোনটির মালিক ছয় মাসের ভাড়া অগ্রিম