পলাতক ঐসরোজকুমার মজুমদার কিছু দিন হইতেই বাজার অত্যন্ত খারাপ পড়িয়া গিয়াছে। বিশেষ করিয়া, এই শ্রাবণ মাস হইতে নটবর এক পয়সাও কামাইতে পারে নাই । রাস্তায় কিন্তু রকমারি পোবাকে সাজগোজ-করা মানুষের চলার অস্ত নাই। শহরের বয়স্কোপ-ঘরগুলির সম্মুখ দিয়া নটবর এক বার নয় শত বার ঘুরিয়া আসিয়াছে । সেখানেও অগণিত নর-নারীর ভীড়—তেমনই আবার খেলার মাঠেও । কিন্তু নটবর তাহাতে বিন্দুমাত্রও লাভবান হয় নাই। আজকালকার বাবুরা সবাই যেন একটু অতিমাত্রায় চালাক হইয়া গিয়াছে । দিনে দিনে এ হুইল কি ? নটবর অবাক হইয়া যায় । এদিকে কিন্তু ছেলেটার বলিতে গেলে সাত দিন হইতে পেটে কিছুই পড়ে নাই। মনের দুঃখে নটবর লোহালক্কড়ের দোকানে তাহার র্কাচি দুইটা বেচিয়া দিয়াছে। ছয় পয়সায় তাহাদের দু-জনের দুই দিন বেশ চলিয়া যtইবে । হঠাৎ আবার যে ছেলেটার কেন জর হইল । নটবর ছেলেকে লইয়া হাসপাতালে দেখাইতে গেল । পেট টিপিয়া, জিব দেখিয়া ডাক্তার একটা শিশিতে করিয়া ওষুধ দিলেন । বলিলেন—তু-বেলা দুধ খেতে দিল। আর ডালিম, বেদীন, কমলা,—বুঝলি ? কুষ্ঠিত তাবে নটবর প্রশ্ন করে,—আজ্ঞে, দুধ কি হাসপাতালে দেয় না ? ডাক্তার দাত মুখ খি'চাইয়া উঠেন,—ধ্য ! দুধ দেবে না হাসপাতাল থেকে ? তোমার বাবার হাসপাতাল কি না । শুধু ঔষধ লইয়াই ছেলেকে কাধের উপর ফেলিয়া নটবর বাড়ি ফিরিয়া আসিল । আজ তাহাকে কিছু রোজগার করিতেই হইবে—তা লে যে করিয়াই হউক। থোকার পথ্য চাই-ই । সন্ধ্যা হইতেই নটবর বাহির হইয়া পড়িল। সোজ। হাওড়া ষ্টেশনে আগিয়া উপস্থিত হইল । একটি সৌধীন বাবু আসিতেছে। নটবর তাহার দিকে আগাইয়া চলিল। বাবুটির কাছাকাছি আসিতেই চুপিচুপি তাহাকে বলিল,—একটা জিনিষ লেবেন বাৰু? খুব সস্তায় দেবো । ভদ্রলোক সন্দিগ্ধভাবে তাহার দিকে চাহিয়া প্রশ্ন করিলেন,—দেখি, কি জিনিষ ? নটবর খুব আস্তে বলিল,—ত হ’লে একটু এদিকে আসুন ! একটা বড় থামের আড়ালে গিয়া নটবর তাহার ট্যাক হইতে চকচকে গোলাকার একটি জিনিষ বাহির করিয়া বলিল,—সোনা বাবু, আসল গিনিপোন ! ८ो-cदी उ কবে ম’রে সাফ হয়ে গেছে । মাগী য়ে ছেলেটাকে রেখে গেছে বাবু, তার জন্তেই ত যত মুস্কিল কি না 1 ত। ছেলেটার আবার ক'দিন থেকেই ভারি অন্ত্রথ । দু-শ টাকার জিনিষ পঞ্চাশেই ছেড়ে দিই যদি বাবু মেহেরবাণী *ք"Շ:-- - নটবর আর তাহার কাহিনী ও আবেদন শেষ করিবার অবকাশ পাইল না । ঠাস করিয়া গালের উপরে এক প্রচণ্ড চড় খাইয়া ছিটকাইয়া পড়িল । —তোমায় আমি পুলিসে দেবো, জান ? সোনা । সোনা আমি চিনি না, না ? কচি থোকা পেয়েছ ? পেতল । ঝালাই ক’রে তুমি ডাকাতি ক’বুতে এসেছ আমার কাছে ? আঘাতের যন্ত্রণ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়াই নটবরকে ভীড়ের মধ্যে গলিয়া যাইতে হইল। ভাবিল, তবু যা হোক খুব বাচিয়া গিয়াছে! আর একটু হইলে পুলিসের খপ্পরে পড়িয়াছিল আর কি ! লাভের মধ্যে তাহার মালটিও থোয়ী যাইত। সরকার-খুড়া ঐটা ঝালাইয়া দিতে তাহার কাছ হইতে লইয়াছে নগদ বীর অন্য পয়সা । খালি হাতেই নটবর বাড়ির পথে ইটিতে থাকে।
পাতা:প্রবাসী (পঞ্চত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।